শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

‘বিয়ে’ সত্যিই দ্বীনের অর্ধেক?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২২, ০৪:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

‘বিয়ে’ সত্যিই দ্বীনের অর্ধেক?

বিয়ে আল্লাহপ্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। বিয়ে চরিত্র রক্ষার হাতিয়ার। হাদিসে বলা হয়েছে, বিয়ের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূরণ হয়। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অসংখ্য ফেতনা, ক্ষয়-ক্ষতি, নানা অসুখ-বিসুখ ও সমস্যা থেকেও মুক্তি দান করেন বিয়ের কারণে। তাই সক্ষমতা থাকলে দ্রুত বিয়ে করা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন—

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ

“হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ চক্ষুকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। (বুখারি: ৫০৬৬; মুসলিম: ১৪০০)

‘বিয়ে’ দ্বীনের অর্ধেক

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, إذَا تَزَوَّجَ العَبدُ فَقَد استَكمَلَ نِصْفَ الدِّين فَلْيَتَّقِ اللهَ في النِّصف البَاقي

‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু: ৬১৪৮; তাবারানি: ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম: ২৭২৮; আলবানি বলেন, হাদিসটি হাসান লিগাইরিহি)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেন—


বিজ্ঞাপন


مَنْ رَزَقَهُ الله امْرَأَةً صَالِحَةً فَقَدْ أَعَانَهُ عَلٰى شَطْرِ دِينِهِ فَلْيَتَّقِ الله فِي الشَّطْرِ الْبَاقِي    ‘আল্লাহ যাকে পুণ্যময়ী স্ত্রী দান করেছেন, তাকে তার অর্ধেক দ্বীনে সাহায্য করেছেন। সুতরাং বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে তার আল্লাহকে ভয় করা উচিত।’’ (তাবারানির আওসাত: ৯৭২; সহিহ তারগিব ওয়াত তারহিব: ১৯১৬; আলবানি এই হাদিসকেও হাসান লিগাইরিহি বলেছেন)

কিভাবে দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ হয়?

হাদিস অনুযায়ী, সকল দ্বীনবিরোধী কাজ দুটি জিনিসের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। ১) দু’চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তু তথা মুখ ও জিহ্বা। ২) দু’রানের মধ্যস্থিত বস্তু তথা লজ্জাস্থান।

আর তাই রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার জন্য তার দু’চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তু (তথা মুখ ও জিহ্বা) এবং দু’পায়ের মধ্যস্থিত বস্তু (তথা লজ্জাস্থান) এর জিম্মাদার হবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হবো।’ (বুখারি: ৬৪৭৪)

সুতরাং, কেউ যদি কোনো সৎ নারীকে বিয়ে করেন, তাহলে এর মাধ্যমে তার লজ্জাস্থান হেফাজত হলো। সৎ নারী এজন্য শর্ত করা হয়েছে যে, অসৎ নারীর কারণে হয়ত তিনি দ্বীন ও দুনিয়া উভয় ক্ষেত্রে আরও ফেতনা ও ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কিন্তু দ্বীনদার সৎ চরিত্রবান নারী তাকে চরিত্র হেফাজতের পাশাপাশি দ্বীন পালনে সাহায্য করবেন। ফলে তিনি যেন দ্বীনের পথে টিকে থাকার অর্ধেক অবলম্বন পেয়ে গেলেন।

বাকি থাকল আর অর্ধেক। সুতরাং তিনি যেন বাকি অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করেন অর্থাৎ মুখকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। যেমন হারাম খাবার ও পানীয় গ্রহণ করবেন না, আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কোনো কথা বলবেন না। এভাবে তিনি দ্বীনের বাকি অর্ধেক পূরণ করে নেবেন।

সম্প্রীতি ও সচ্ছলতা আসে বিয়ের মাধ্যমে

প্রথম মানব-মানবী হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.)-এর বিয়ের মাধ্যমে এই পবিত্র বন্ধনরীতির প্রচলন হয়। বিয়ে শুধু জৈবিক চাহিদাই নয়, বরং এক মহান ইবাদতও বটে। বিয়ের মাধ্যমে জীবন পরিশীলিত, মার্জিত ও পবিত্র হয়। সম্প্রীতি, দয়া ও সচ্ছলতা আসে বিয়ের মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম: ২১)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে করিয়ে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিয়েতে সামর্থ্য নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে, যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেন। (সুরা নুর: ৩২-৩৩)

রোদ, বৃষ্টি, ঠাণ্ডা থেকে রেহাই পেতে এবং সৌন্দর্য বর্ধন করতে যেমন পোশাকের প্রয়োজন। বিয়েও ঠিক তেমনই, দুইজন মানুষকে এমনভাবে এক করে, তারা একে অপরের পোশাক এর মতো হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—

هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ অর্থাৎ ‘তারা (স্ত্রীগণ) তোমাদের পোশাক এবং তোমরা (স্বামীগণ) তাদের পোশাকস্বরূপ`। (সুরা বাকারা: ১৮৭)

সামর্থ্যহীনতার অজুহাতে বিয়ে করতে দেরি নয়

ইসলামে বিয়ের ব্যাপারে এত গুরুত্ব দেওয়ার পরও অনেকে অর্থ-সংকটের কথিত অজুহাতে কিংবা ক্যারিয়ারের চিন্তায় বিয়ে করতে বা করাতে গড়িমসি করেন। অথচ তাদের এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা শরিয়তের আলোকে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা মানুষের আয়-রোজগার স্থায়ী বিষয় নয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে—

‘তিন প্রকারের মানুষকে সাহায্য করা আল্লাহ তাআলা নিজের কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ১. আল্লাহ তাআলার পথে জিহাদকারী। ২. মুকাতাব গোলাম- যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে। ৩. বিয়ে করতে আগ্রহী, যে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। (ইবনে মাজাহ: ২৫১৮)

নারী থেকে দূরে থাকার নিয়তে অবিবাহিত থাকা যাবে না

বিয়ে না করা আল্লাহর রাসুলের পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নতের সঙ্গে বেয়াদবি করার শামিল। এমনকি সওয়াবের নিয়তেও যদি হয়। হাদিসে ওসব ব্যক্তিদেরকে কঠিন হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন—

‘তিন ব্যক্তি আল্লাহ রাসুল (স.)-এর ঘরে আসলেন। তারা ঘরবাসীদের রাসুল (স.)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তাঁর ইবাদতের কথা শুনে তারা যেন বলল, কোথায় আল্লাহ রাসুল (স.) আর কোথায় আমরা? তার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। তখন তাদের একজন বলল, আমি সারাজীবন রাতভর ইবাদত করব। আরেকজন বলল, আমি আজীবন রোজা রাখব; কখনো রোজা ভাঙব না। অন্যজন বলল, আমি নারীদের থেকে দূরে থাকব; কখনো বিয়ে করব না। আল্লাহর রাসুল (স.) তখন তাদের কাছে এসে বললেন, ‘আরে! তোমরা এমন-অমন বলছো না! অথচ আমি তোমাদের সবার চেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করি। কিন্তু আমি রোজা রাখি, আবার ইফতারও করি। নামাজ পড়ি, আবার ঘুমাই। বিয়েও করি। অতএব, যারা আমার সুন্নত ছেড়ে দেবে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (বুখারি: ৫০৬৩; মুসলিম: ১৪০১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর যুবকদের যথাসময়ে বিয়ে করার তাওফিক দান করুন। অভিভাবকদেরকে সুন্নতের অনুসারী হওয়ার ও সন্তানের সুন্নত পালেন সহযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর