images

জাতীয়

যেভাবে ধীরে ধীরে সক্রিয় হচ্ছে পুলিশ

ঢাকা মেইল ডেস্ক

২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১২ পিএম

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এই সরকারকে টানা চার মেয়াদ ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার অন্যতম হোতা হিসেবে মনে করা হয় পুলিশ বাহিনীকে। এজন্য জনরোষ পতিত হয় পুলিশের ওপর। সারাদেশে জনতার তোপের মুখে তছনছ হয়ে যায় গোটা বাহিনী। শত শত থানা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হত্যা করা হয় কয়েক ডজন পুলিশ সদস্যকে। জনরোষে কার্যত পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে দেশের বেশির ভাগ থানা।

নতুন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর পুলিশ বাহিনী আস্তে আস্তে কাজে ফিরে। সরকারও পুলিশ বাহিনীকে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে পুলিশ।

পুড়ে যাওয়া ৫৮ থানায় শুরু হয়েছে কাজ

৫৮টি থানাসহ ২২৪টি স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয় অভ্যুত্থানের সময়। ২৬টি পুলিশ ফাঁড়ি, ২টি তদন্তকেন্দ্র, ১০৬টি পুলিশ বক্স, ২৯টি অফিস ও ৩টি অন্যান্য স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

Police4

সংস্কারের পর সবগুলোতেই কাজ শুরু হয়েছে। ওই সময় ৫৬টি থানা, ২৪টি ফাঁড়ি, ১০টি তদন্তকেন্দ্র, ৩০টি পুলিশ বক্স, ২৮টি অফিস, পুলিশ লাইসেন্সের স্থাপনা ১৫টি এবং ৭৩টি অন্যান্য স্থাপনাসহ মোট ২৩৬টি স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয়। সেগুলোতেও কাজ শুরু হয়েছে।

১০৭৪টি গাড়ির ক্ষতি পোষাতে আসছে নতুন গাড়ি

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের সময় সারাদেশে পুলিশের ১০৭৪টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে জিপ, ডাবল কেবিন পিকআপ, সিঙ্গেল কেবিন পিক আপ, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেল, এপিসি, ক্রাইম সিন ভ্যান, ট্রাক, বাস, কার ওয়াটার ক্যানন।

আরও পড়ুন

ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জের সামনে পুলিশ

পুলিশের ‘তছনছ’ হওয়ার বছর

তবে গত পাঁচ মাসে পুলিশের নতুন কিছু গাড়ি এসেছে। এর বাইরে সাধারণ মানুষের কিছু গাড়ি রিক্যুইজিশন করে দেওয়া হচ্ছে পুলিশকে। এভাবেই চলছে পুলিশের কার্যক্রম।

ডিএমপির সব থানায় একটি করে ৫০টি নতুন গাড়ি

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিজস্ব তহবিল থেকে ৫০টি নতুন গাড়ি কেনা হয়েছে। ৫০টি থানায় প্রত্যেকটিতে একটি করে মোট ৫০টি গাড়ি দেওয়া হয়। সেসব থানার কার্যক্রমে এই গাড়িগুলো ব্যবহৃত হবে। কর্তৃপক্ষ মনে করে, গাড়িগুলো পুলিশের কাজে আরও গতি আনবে।

গত জুলাই-আগস্টে রাজবানীর ২২টি থানা ও ১৮৬টি গাড়ি ক্ষতিগ্রন্ত হয় বলেও জানিয়েছে পুলিশের সদর দফতর। এর মধ্যে ৯৭টি গাড়ি পুড়ে গেছে। সেগুলো আর ব্যবহারযোগ্য নয়।

অসুস্থ পুলিশ সদস্যরা সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন

অভ্যুত্থানের সময় পুলিশের প্রায় আড়াই হাজার সদস্য আহত হন, মারা যান ৪৪ জন। আহতদের সরাই সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন বলে জানায় পুলিশ। তবে এখনো ১৯৭ জন কর্মকর্তা ও সদস্য কাজে যোগ দেননি, যারা পলাতক।

Police3

এছাড়া বিগত সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। ৩১ জন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় নেওয়া হয়েছে।

নতুন করে সেজেছে এনায়েতপুর থানা

ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানের সময় গত আগস্টে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ওসিসহ ১৫ জন পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। অনেককে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কারো লাশ ফেলে দেওয়া হয় পুকুরে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় যান। নতুন করে সেজেছে এনায়েতপুর থানা ভবন।

আরও পড়ুন

পুলিশের আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন!

কাজে না ফেরা ১৮৭ পুলিশের বেতন বন্ধ, নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা

তৎকালীন ওসি আব্দুর রাজ্জাকের ছোট বোন মাউনজেরা খাতুন আলিফ বলেন, 'ভাইয়ের মৃত্যুর পর কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। আমরা এক ধরনের অপরাধীর মতো বেঁচে আছি।’

কষ্টে চলছে তালেব মিয়ার সংসার

দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে চাকরি করছেন ট্রাফিক কনস্টেবল হিসেবে। বলছিলেন, 'এখন ডিউটির চাপ আগের চেয়ে বেড়েছে কিন্তু আমাদের সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। আগের সরকারের সময় মাত্র কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা পুরো বাহিনীকে বিতর্কের মুখে ফেলে গেছেন বলে মনে করেন তিনি।

Police5

তিনি জানান, চার সন্তানকে নিয়ে আর স্ত্রী গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরদীতে থাকেন। বেতনের ২৩ যাওয়ার টাকার অধিকাংশই বাড়িতে পাঠান জানালেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় কষ্টে চলছে দিন।

যাত্রাবাড়ী থানার ক্ষতি ৪০ কোটি, ৩৫ গাড়িতে আগুন

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে কয়েক হাজার বিক্ষুদ্ধ মানুষ যাত্রাবাড়ী থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। থানা কমপ্লেক্সে হামলা, লুটপাট ও আগুনের ঘটনায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই থানার একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। থানার পাশে বিটিসিএল ভবনের সামনে থানার অন্তত ৩৫টি গাড়ি রাখা ছিল, সেগুলোতেও আগুন দেওয়া হয়। থানার কার্যক্রম শুরু করা হলেও এখনো পুরো কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।

বদলে যাচ্ছে পোশাক

বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সবার মানসিকতা পরিবর্তন করা জরুরি। সে জন্য পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারের পোশাক পরিবর্তন করা হচ্ছে। পুলিশের পোশাক হবে লোহা রঙের, র‍্যাবের পোশাক হবে জলপাই রঙের আর আনসারের পোশাক হবে সোনালি গমের রঙের। এর জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে। সূত্র: ডয়চে ভেলে

জেবি