images

সাক্ষাৎকার

‘ফেব্রুয়ারিতেই ভোট, ৫০ বছরেও আ.লীগের ফেরার সম্ভাবনা দেখি না’

হারুন জামিল, বোরহান উদ্দিন

২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে নির্বাচনের পুরোপুরি আবহ তৈরি না হলেও রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঘোষিত সময়ে নির্বাচন হবে কি না এ নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকলেও আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে তিনি বলেন, আমি আপাতত ৫০ বছরেও তাদের ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা দেখি না। আর রাজনীতিতে আসার ব্যাপারটা দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করে। তারা আওয়ামী লীগকে আবার গ্রহণ করবে কী করবে না-সেটা জনগণের বিষয়।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মেইলকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আমাদের ওয়ার্কিং রিলেশন রয়েছে। তারা একটি আলাদা দল। আমাদের কাজ আলাদা। আমরা একসঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করেছি। অতীতে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গে ট্যাগ লাগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রচারণা চালিয়েছে। আমরা আর এই ট্যাগিং চাই না। তবে আগামীতে নির্বাচনে জয়লাভ করলে সব দলকে নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করবে বলে তিনি জানান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব। টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বে থেকে দল পুনর্গঠন, আন্দোলন ও রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবন্দির সময় এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে তিনি ছিলেন বিএনপি নেতৃত্বের অন্যতম প্রধান মুখ। তিনি সজ্জন ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে সুপরিচিত। আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে অসংখ্য মামলার আসামি হয়েছেন। তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে একাধিকবার।

ঠাকুরগাঁও জেলায় জন্ম নেওয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে প্রথমে জাসদ এবং পরে বিএনপিতে যোগ দেন। ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে একাধিকবার জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময়ে তিনি কৃষি যোগাযোগ ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অন্তবর্তীকালীন সরকারের মূল্যায়ন, বিএনপির সাংগঠনিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন ইস্যুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খোলামেলা কথা বলেছেন ঢাকা মেইলের সঙ্গে। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল ও জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বোরহান উদ্দিন। ছবি তুলেছেন শামীম হোসেন

ঢাকা মেইল: ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের লোকজন দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। নতুন এই পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মির্জা ফখরুল: জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফলে সমস্ত মানুষের কাছে আকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ অত্যন্ত আশান্বিত ছিল পরিবর্তন হওয়ার পরপরই। প্রত্যাশা যেটা তৈরি হয়েছিল, তা হলো- একটি গুণগত পরিবর্তন, রাজনীতির ক্ষেত্রে, রাজনৈতিক কাঠামোর ক্ষেত্রে, অর্থনীতির ক্ষেত্রেও। এই জায়গাটা স্বাভাবিক আছে। তবে দুঃখজনক হলো, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যে পচন ধরিয়ে দিয়ে গেছে সমাজ ও রাষ্ট্রের সব স্তরে সেখানে তো মাত্র এক বছরে ঠিক করা সম্ভব না। এটা অনেকে বোঝার চেষ্টা করছেন না বা বুঝতে পারছেন না। এটা যদি আমরা না বুঝি, তাহলে সেটা ভুল চিন্তা হয়ে যাবে।

তারপরও এই সরকারের কোনো সফলতা নেই এটা বলা ঠিক হবে না। তারা অনেকটা সফল হয়েছেন ব্যাংকিং সিস্টেম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে। রাজনৈতিক কাঠামোকে একটি সঠিক জায়গায় নিয়ে আসার জন্য সফল হয়েছেন। আমরা যেটা বলছি, ইতিবাচক কাঠামো নির্মাণের ব্যাপারে চেষ্টা করা। তারা নির্বাচন, সংসদকে ইফেকটিভ করার জন্য কাজ করছে। স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। তবে দুঃখজনক হলো, দুটি খাতে তাদের ব্যর্থতা রয়েছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত। এই দুটি খাতে আমি কোনো রকম অগ্রগতি (ইমপ্রুভমেন্ট) দেখতে পাইনি।

Fakhrul-4
দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপির হাল ধরে রেখেছেন মির্জা ফখরুল। ছবি: ঢাকা মেইল

একটা কাজ তারা করেছেন, সেটা হলো সংস্কারের কাজগুলো। যে কমিটিগুলো করেছেন, তারা দ্রুততার সঙ্গে জুলাই সনদের কাজ করছেন। আমার মনে হয়, এটা একটা ভালো কাজ হয়েছে। আমি নিজেও দেখেছি। কিছু কিছু জায়গা আছে যেগুলোর সঙ্গে আমরা একমত হতে পারিনি। সেগুলোতে আমরা একমত হয়েছি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে। আমরা চাই, যত দ্রুত সম্ভব সমস্ত রাজনৈতিক দল অন্তত একটি জায়গায় একমত হোক। নির্বাচনকে দ্রুত শেষ করে আমরা সংসদ তৈরি করি, সংসদে বাকি যে কাজগুলো থাকবে সেগুলো শেষ করব।

ঢাকা মেইল: অনেকেই মনে করছেন দেশে নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে। বিএনপিও কি মনে করছে?

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ, এটা ঠিক নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে। তবে এখনই বলা যাবে না যে পুরোপুরি আবহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে, শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যারা যারা নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক, তারা কাজ করছে, ভোটারের কাছে যাচ্ছে। দলগুলোর নির্বাচনের জন্য যে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার সেই প্রস্তুতি তারা শুরু করেছে। কিছু কিছু দল তো তাদের প্রার্থীর নামও ঘোষণা করে দিয়েছে।

ঢাকা মেইল: কেউ কেউ নির্বাচন ঘোষিত সময়ে হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন। আপনারা কী মনে করছেন?

মির্জা ফখরুল: বাংলাদেশের মানুষ এত বেশি আঘাতপ্রাপ্ত। কখনো একদলীয় শাসনব্যবস্থা তৈরি করা, কখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া, কখনো মার্শাল ল’ হয়ে যাওয়া, হাসিনার সরকারের মতো রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে একেবারে দলীয়করণ করা। এছাড়াও গত তিনটি নির্বাচনে ভোট দিতে না পারা। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে একটা ভীতি কাজ করে। এজন্য তারা বলতে চায়, ‘নির্বাচন হবে তো?’ এটা আসে কোথা থেকে? অতীতের যে ব্যর্থতাগুলো, সেগুলো দেখে এমন আশঙ্কাটা তৈরি হয়। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

আরও পড়ুন

‘বিএনপির সঙ্গে আমাদের কোনো দূরত্ব নেই, এটা সাংবাদিকরা বলেন’

‘পঁচাত্তরের পর আ.লীগে নেতৃত্ব ছিল, এখন যারা নেতা তারা তো কর্মচারী’

ঢাকা মেইল: বিএনপি বড় রাজনৈতিক দল। গত নির্বাচনগুলোতে কখনো অংশ নিয়েছে, কখনো আবার বর্জন করেছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বড় জটিলতা তৈরি হতে পারে।

মির্জা ফখরুল: এটা আপনারা যারা রাজনৈতিক বিশ্লেষক কিংবা পত্রপত্রিকায় কাজ করেন তারা সবসময় মনে করেন। এটা হবেই। বিএনপির মতো বড় দলে এমন প্রতিযোগিতা থাকবেই। দেখবেন, যখন মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার আগে হাজার হাজার তদবির শুরু হবে। যেদিন সাক্ষাৎকার হবে, তখন দেখবেন—রাস্তায় জায়গা দেওয়া যাবে না। এটা তো স্বাভাবিক। এটা এক ধরনের উৎসব বলা যেতে পারে। হওয়া উচিত এই অবস্থার প্রেক্ষিতে।

তবে আমাদের সিস্টেমটা এখনো ওই জায়গায় পৌঁছায়নি যে, আপনি তৃণমূল থেকে সব ঠিকঠাক করে নিয়ে এলেন, আমরা ওপর থেকে দিয়ে দিলাম। ওটারও একটা দলীয় রিফর্ম করার ভবিষ্যতে আমরা চিন্তা করবো—তৃণমূল থেকে নমিনেশন ঠিক করে আনা, যাতে আমাদের সেন্ট্রালের কোনো ভূমিকা না থাকে। সেটার আমরা চেষ্টা করবো। সেটা এখন আপাতত হচ্ছে না। আমি তো মনে করি এটা ভালো—কারণ দলে প্রতিযোগিতা না থাকলে তো এটা দলই হলো না। একটা আসনে যদি আমাদের তিনজন-চারজন প্রার্থী না থাকে, তাহলে হাউ উই চুজ (আমরা কীভাবে বাছাই করবো) ভালো মানুষটাকে আমরা বাছাই করবো কীভাবে?

ঢাকা মেইল: আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির নেতাকর্মীদের একটা বড় ত্যাগ রয়েছে। সভা-সমাবেশগুলোতে আপনাকে হাল ধরতে হয়েছে। এর মধ্যে অনেক বিয়োগান্ত ঘটনাও ঘটেছে। আওয়ামী লীগমুক্ত পরিবেশে বিএনপির রাজনৈতিক প্রস্তুতি কেমন?

মির্জা ফখরুল: আমরা এখন সহজে কাজ করতে পারছি। এটা আমাদের জন্য বড় ধরনের প্লাস পয়েন্ট। আমাদের এখন চিন্তা করতে হয় না—রাতে আমাদের তুলে নিয়ে যাবে পুলিশ। এটা একটা বড় সুবিধা। আমরা সম্মেলন করছি, এর মধ্যেও সম্মেলন চলছে।

Fakhrul-2
ঢাকা মেইলের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। ছবি: ঢাকা মেইল

ঢাকা মেইল: বিএনপির এক ধরনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধে জড়ানোর অভিযোগ আসছে। আপনারা ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। তারপরও এটা বিএনপির রাজনীতিকে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে মনে করেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা মনে করি এটা কোনোভাবেই আমাদের জন্য আনন্দের কথা নয়। এটা সুখের কথা নয় বা গৌরবের কথা নয়। নিঃসন্দেহে এটা আমাদের কনসার্নের বিষয়। সে কারণেই আমরা দল থেকে এর বিরুদ্ধে চরমভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কঠোর শাস্তি হচ্ছে।

ঢাকা মেইল: কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। তাদের সতর্ক করছেন, ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কিন্তু বিশেষ করে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনাদের অবস্থান কী?

মির্জা ফখরুল: আপনারা দেখেছেন, যাদের বিষয়ে কথা হচ্ছে, তাদের সতর্ক করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিনিয়র লিডারদের কিন্তু পদ স্থগিত করা হয়েছে। এই ধরনের পদক্ষেপ কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিচ্ছেন। এই ব্যাপারে আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে, এই সমস্যাগুলো থাকবে না।

আরও পড়ুন

‘ওনারা খুব ভালো, তবে এনজিও আর রাষ্ট্র চালানো এক নয়’

‘সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ ব্যবস্থা নেওয়া, বিবৃতি নয়’

ঢাকা মেইল: অনেক দিন ধরেই আলোচনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়টি। অনেকের কৌতূহল—আসলে কবে নাগাদ তিনি দেশে ফিরবেন?

মির্জা ফখরুল: কৌতূহল থাকা তো ভালো... (হাসি)। উনি দেশে ফিরবেন। আশা করি, উনি শিগগিরই দেশে ফিরে আসবেন।

ঢাকা মেইল: আওয়ামী লীগের রাজনীতি ফেরা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। আপনি কি মনে করেন শিগগির আওয়ামী লীগ ফিরতে পারবে?

মির্জা ফখরুল: আমি আপাতত ৫০ বছরেও তাদের ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা দেখি না। আর রাজনীতিতে আসার ব্যাপারটা তো দেশের জনগণের ওপর নির্ভর করবে—তারা আওয়ামী লীগকে আবার গ্রহণ করবে কি করবে না। সেটা পরে বোঝা যাবে। এখন তো তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। সরকার নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে। সেটা যদি তুলে নেওয়া হয়, তখন বোঝা যাবে আওয়ামী লীগ কতটুকু শক্তিশালী।

মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান যেদিন নিহত হন, সেদিন কিন্তু রাস্তায় কোনো মিছিল বের হয়নি। হাসিনা যেদিন চলে যান, সেদিন কিন্তু কোনো প্রতিবাদ হয়নি। কোথাও না। আওয়ামী লীগের দ্বারাও না। কেউ প্রতিবাদ করেনি। জনগণের যে উত্তাল তরঙ্গ, তার সামনে তো আওয়ামী লীগের দাঁড়ানোর সুযোগ ছিল না।

ঢাকা মেইল: বিএনপি দেশের মানুষের কাছে মধ্যপন্থী, উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও একইভাবে পরিচিত। আপনার কি মনে হয়, এই জায়গা থেকে বিএনপির কোনো বিচ্যুতি ঘটেছে?

মির্জা ফখরুল: না না, আমি মনে করি বিএনপির কোনো বিচ্যুতি ঘটেনি। কোনো ব্যক্তি বা নেতার ঘটতে পারে। এটা ব্যক্তিগত বিষয় (ইনডিভিজুয়াল বিষয়)। বিএনপির কোনো রকমের বিচ্যুতি হয়নি। বিএনপি এখনো সেটা বিশ্বাস করে, কাজ করে। সেই নেতাদের গুরুত্ব দেয় যারা সততার সঙ্গে কাজ করে। আমার মনে হয় না, বিএনপির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ধোপে টিকবে।

ঢাকা মেইল: ক্ষমতার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা এলেই ভারত-পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কথা হয়। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে?

মির্জা ফখরুল: আমরা সবসময় বলে এসেছি, আমরা ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতিতে (Balanced Foreign Policy) বিশ্বাস করি। আমরা Respect to all nations এবং we also expect that they will respect others—আমাদেরকেও তারা সম্মান করবে। এবং স্বার্থের ভিত্তিতে, অর্থনীতির ভিত্তিতে আমাদের কূটনীতি পরিচালিত হবে। মূল লক্ষ্যই হবে কূটনীতি। সেখানে সবাইকে আমরা বন্ধু মনে করবো। সবার সঙ্গে আমরা ব্যবসা করতে চাইবো।

ঢাকা মেইল: পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে বিএনপির চেয়ারপারসনের খোঁজ নিয়েছেন। আপনারাও সাক্ষাৎ করেছেন। সরকারের সঙ্গে বৈঠকে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ১৯৭১ সালের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিএনপির অবস্থান কী?

মির্জা ফখরুল: আমরা মনে করি, পাকিস্তানের উচিত সবার আগে ১৯৭১ সালে পাক সেনাবাহিনীর হাতে যে গণহত্যা হয়েছে, সেই বিষয়ে তাদের ক্ষমা চাওয়া। নৈতিক দায়িত্ব—রাজনৈতিক দায়িত্বও। এটা না হলে যে সুষ্ঠু, সুন্দর পরিবেশে দুই দেশের কাজ করার কথা বলা হচ্ছে, সেটা সেইভাবে হবে না।

Fakhrul-3
একাধিকবারের সংসদ সদস্য মির্জা ফখরুল বিএনপি সরকারের প্রতিমন্ত্রীও ছিলেন। ছবি: ঢাকা মেইল

ঢাকা মেইল: বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন? চেয়ারপারসন শারীরিকভাবে ভালো থাকলে আগামী নির্বাচনেও লড়তে পারেন—এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। জিয়া পরিবার থেকে আরও অনেক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না?

মির্জা ফখরুল: তাঁর (বেগম খালেদা জিয়া) তো নির্বাচনে কোনো বাধা নেই। আর ম্যাডামের মতো মানুষকে নির্বাচনের জন্য বেশি কষ্টও করতে হবে না। তাঁকে ঘরে ঘরে যেতে হবে না। তাঁর এলাকায় গিয়ে বক্তৃতা করতে হবে, এমনটাও দরকার নেই। ম্যাডাম একাই যথেষ্ট। তাই না? আপনি সারাদেশের ৩০০ সিট দেন না, বেরিয়ে আসবেন ইনশাআল্লাহ। এই পরিস্থিতি।

আরও পড়ুন

‘পুলিশের মোরাল একদম পড়ে গিয়েছিল, এখন শতভাগ ঠিক’

‘খবরদারি নয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাধীনভাবে চলতে দেওয়া উচিত’

ঢাকা মেইল: দীর্ঘদিন জোটবদ্ধ আন্দোলন করা বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক এখন কেমন? আগামী নির্বাচনে একসঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্ভাবনা আছে?

মির্জা ফখরুল: জামায়াতের সঙ্গে আমাদের জোট ছিল, তাদের সঙ্গে ওয়ার্কিং রিলেশনস ছিল—সেটা এখনো আছে। এখনো আমাদের রাজনৈতিক কথাবার্তা হয়। কিন্তু জামায়াত একটা আলাদা রাজনৈতিক দল, আমরা একটা আলাদা রাজনৈতিক দল। জামায়াতের আলাদা পরিচয় (আইডেনটিটি) আছে, আমাদের আলাদা পরিচয় আছে—তাই না? কিন্তু ওই যে একটা ট্যাগ হয়ে গিয়েছিল জামায়াত-বিএনপি, জামায়াত-বিএনপি—ওটা ভেঙে গেছে। ওটা আর কেউ বলে না। ওটার ভাঙার জন্যই কিন্তু একসঙ্গে আন্দোলনটা করিনি। যুগপৎ আন্দোলন করেছি। অবশ্যই সেটার উদ্দেশ্য ছিল—ওই ট্যাগ আমরা রাখতে চাইনি।

ঢাকা মেইল: নির্বাচন সামনে রেখে আর এই ট্যাগের কি সম্ভাবনা আছে?

মির্জা ফখরুল: আমরা তো বলেছি, বিএনপি একা নির্বাচন করবে। সেখানে যারা আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে, যুগপৎ আন্দোলন করেছে—তাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনের পরে যারা পার্লামেন্টে আসবেন, তাদের নিয়ে একটি জাতীয় সরকার গঠন করবো। এটা আমাদের ঘোষণাতেই আছে।

ঢাকা মেইল: সার্বিক পরিস্থিতিতে দেশের মানুষ, নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কী বলবেন?

মির্জা ফখরুল: একটাই কথা—দেশটাকে বাঁচাতে হবে। দেশে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এই দেশের মানুষকে স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে দিতে হবে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে তরান্বিত করার জন্য কাজ করতে হবে। সর্বোপরি, এখানে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি, সরকার—সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা উচিত।

ঢাকা মেইল: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মির্জা ফখরুল: ঢাকা মেইলকেও ধন্যবাদ।

বিইউ/জেবি