আন্তঃসীমান্ত বায়ুদূষণ মোকাবিলায় আঞ্চলিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের ৩০-৩৫ শতাংশ আসে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে। তাই, এই সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক আলোচনার বাইরে গিয়ে বাস্তব পদক্ষেপ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) ভোরে কলম্বিয়ার কার্টাগেনায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দ্বিতীয় বৈশ্বিক সম্মেলনের বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া সাইড ইভেন্টে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এসব কথা বলেন। তিনি ঢাকাস্থ তার বাসভবন থেকে সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা এবং বিশেষ করে ঢাকার বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
বিজ্ঞাপন
রিজওয়ানা হাসান জানান, বাংলাদেশের বায়ুদূষণ সমস্যা মোকাবিলায় বায়ু মান নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে, যা ডব্লিউএইচও'র অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এই আইনি বিধিমালায় দূষণকারী খাতগুলোর জন্য নির্দিষ্ট মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালে চূড়ান্ত হওয়া জাতীয় বায়ু মান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কিছুটা পিছিয়ে ছিল, তবে এখন তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর লক্ষ্য হলো দূষণজনিত ঝুঁকি কমানো এবং পরিষ্কার বায়ু নিশ্চিত করে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রদান করা।
উপদেষ্টা জানান, বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ ক্লিন এয়ার প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, যা শিগগিরই বাস্তবায়িত হবে। এই প্রকল্পে দূষণ নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালীকরণ, আইন প্রয়োগ জোরদার করা, শিল্প কারখানায় দূষণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ এবং গণপরিবহন খাত আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার আশপাশের কিছু এলাকায় ইটভাটা মুক্ত এলাকা ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে নতুন ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ থাকবে। এছাড়া, ২০২৫ সালের মে মাস থেকে পুরনো বাসগুলো ধাপে ধাপে তুলে দেওয়া হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এটি বাস্তবায়ন করবে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা শহরের খোলা সড়কগুলোতে সবুজায়ন এবং রাস্তা পরিস্কারে আরও শ্রমিক নিয়োগের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে বায়ু মানে কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে কঠোর নজরদারি এবং খাতগুলোর আধুনিকায়ন জরুরি।
রিজওয়ানা হাসান জানান, বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়, এবং ঢাকার মতো দূষিত শহরগুলোতে মানুষের গড় আয়ু ৫-৭ বছর কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এ সংকট আমাদের সকলের জন্য, আমাদের শিশু, বাবা-মা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি। নিষ্ক্রিয়তার মূল্য অনেক বেশি—আমাদের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’
তিনি আশাবাদী কণ্ঠে বলেন, ‘এ সমস্যা সমাধান সম্ভব, কারণ আমাদের হাতে প্রযুক্তি এবং বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু প্রয়োজন যথাযথ প্রতিশ্রুতি এবং বাস্তবায়ন। বায়ুদূষণ শুধুমাত্র পরিবেশগত নয়, এটি একটি মানবিক সংকট।’
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, পরিবেশ ও জ্বালানি খাতের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তারা দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ রোধে যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
এসএইচ/এইউ