শুক্রবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নীরবে নিভে গেল সিটিসেল

তথ্যপ্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫৬ এএম

শেয়ার করুন:

loading/img

দেশে মোবাইল ফোনের উত্থান শুরু হয়েছিল সিটিসিলের হাত ধরেই। তখনো দেশে জিএসএম নেটওয়ার্কের বিস্তার লাভ করেনি। সিডিএমএ (কোড-ডিভিশন মাল্টিপল এক্সেস) প্রযুক্তির মোবাইল ফোন দিয়ে তখনকার গ্রাহকদের মন জয় করেছিল অপারেটরটি। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে জিএসএম প্রযুক্তির সঙ্গে টেক্কা দিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। কেননা, শুরুতে সিটিসেল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের পছন্দমতো হ্যান্ডসেট পরিবর্তনের সুযোগ ছিল না। একটি হ্যান্ডসেটই একটি নেটওয়ার্ক রিসিভার ও ট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করত।

অন্যদিকে জিএসএম প্রযুক্তিতে গ্রাহকরা একটি অপারেটরের সিম কার্ড সংগ্রহ করে ইচ্ছামাফিক ফোন সেট পরিবর্তন করতে পারেন। ফলে হ্যান্ডসেটের চক্করে ঘুরপাক খায় সিটিসিলের নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীরা। 


বিজ্ঞাপন


citycellপরিস্থিতি সামাল দিতে সিটিসেল রিম প্রযুক্তি আনে। যা অনেকটা সিমের মতোই। এর সুবিধা হলো সিটিসেলের কাছ থেকে রিম বা সংযোগ নিয়ে ইচ্ছামতো হ্যান্ডসেট ব্যবহার করা যেত। কিন্তু এই প্রযুক্তিও জনপ্রিয় হয়নি। কেননা, দেশে একমাত্র সিটিসেলই সিডিএমএ নেটওয়ার্ক অপারেটর ছিল। তাই গ্রাহক চাইলেও অন্য অপারেটরের নেটওয়ার্কে চলে যেতে পারতেন না। 

দেশে সিটিসেল যাত্রা করে ১৯৮৯ সালে। শুরুর দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিস্তারে এগিয়ে ছিল। অপারেটরটি গ্রাহকও জুটিয়েছিল ভালোই। 

আগস্ট ২০১১-এর হিসাব অনুযায়ী সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৭.৭৮ লক্ষ। সিটিসেলে ৪৫% সিংটেলের মালিকানায় এবং ৫৫% মালিকানায় ছিল প্যাসিফিক গ্রুপ ও ফার ইস্ট টেলিকমের।

citycell২০০৭ সালের শেষের দিকে সিটিসেল নতুন লোগো উন্মোচন করে। ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর বিটিআরসি কোম্পানিটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এ সময় এর গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৬ লাখের কিছু বেশি। ৩ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিটিসেলের তরঙ্গ আবার খুলে দেওয়া হয়। যা ৬ নভেম্বর আবার বন্ধ করা হয়।


বিজ্ঞাপন


এদিকে সিটিসেল যখন দেশজুড়ে তরঙ্গ বাড়িয়ে চলছিল তখন গ্রামীণফোন ও একটেল জিএসএম বাংলাদেশে জিএসএম প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে হাজির হয়। গ্রামীণফোন ও এয়ারটেলের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে। হারাতে থাকে গ্রাহক সংখ্যা। বাড়তে থাকে জিএসএম নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা। কমতে থাকে সিডিএমএ অর্থাৎ সিটিসেলের ব্যবহারকারী। এক সময় তা তলানিতে এসে ঠেকে। এদিকে  লোকসানে দিনে দিনে দিনে বাড়ে কোম্পানির দায় দেনা। দেনার দায়ে ডুবতে থাকে সিটিসেল।   

citycellগ্রাহক কমতে থাকায় ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর থেকে সিটিসেলের সংযোগ সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

২০২২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সিটিসেলের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া সব তরঙ্গ ও একই বছরের ৭ আগস্ট রেডিও কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট লাইসেন্স বাতিল করা হয়।

গত বছরে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে (নির্ধারিত সময়) সরকারের বকেয়া পরিশোধ না করায় সিটিসেলের ২জি সেবার লাইসেন্স বাতিলের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেওয়া সিটিসেলের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় বিটিআরসি সিটিসেলের ২জি সেলুলার লাইসেন্স বাতিলের জন্য সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি ৷

১৯৮৯ সালে সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ড (বিটিটিবি) বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেডের অনুকূলে মোবাইল অপারেটরের লাইসেন্স ইস্যু করে। পরবর্তী সময়ে এর নাম রাখা হয় প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকম লিমিটেড, যা সিটিসেল নামে পরিচিতি পায়।

citycellমোবাইলফোন অপারেটর সিটিসেলের লাইসেন্স চূড়ান্তভাবে বাতিল করেছে ডাক ও টেলিযোগ বিভাগ। ফলে যাত্রা শেষ হলো দেশের প্রথম মোবাইলফোন অপারেটরটির। সিডিএমএ প্রযুক্তির একমাত্র অপারেটরটির কাছে থেকে  টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা ২১৮ কোটি টাকা পরিশোধ না করায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

মঙ্গলবার বিটিআরসিতে অপারেটরটির লাইসেন্স বাতিলের পূর্বানুমোদনের চিঠি পাঠিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। এর আগে গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বিটিআরসির কমিশন বৈঠকে সিটিসেলের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর অনুমোদনের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি পাঠায় বিটিআরসি। 

এজেড

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন