বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

ইমামের পেছনে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ জুন ২০২৩, ০৫:৩০ পিএম

শেয়ার করুন:

ইমামের পেছনে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে কি?

নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য সুরা ফাতেহা পড়া জরুরি। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সুরা ফাতেহা না পড়লে নামাজ হবে না।’ (বুখারি: ৭৫৬) একইভাবে সুরা ফাতেহার সঙ্গে অন্য সুরা (বা আয়াত) না মেলালেও নামাজ হবে না। উবাদা বিন সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, সুরা ফাতেহা না পড়লে নামাজ হবে না (আরেক বর্ণনায় এসেছে) এবং অতিরিক্ত সুরা না পড়লেও নামাজ হবে না। (সহিহ মুসলিম: ৩৯৪)

উল্লেখিত দুটি হাদিস নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য সুরা ফাতেহা ও অতিরিক্ত সুরা মেলানোর বড় দলিল।


বিজ্ঞাপন


কিন্তু প্রশ্ন হলো- ইমামের সাথে মুক্তাদিকেও কি সুরা ফাতেহা পড়তে হবে? এই প্রশ্নের জবাবে ইমামরা মতভেদ করেছেন। এ সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তিনটি অভিমত হলো— ১) ইমাম কেরাত আস্তে পড়লে মুক্তাদি সুরা ফাতেহা পড়বে; জোরে পড়ার সময় পড়বে না ২) ইমাম সুরা আস্তে বা জোরে পড়ুক, মুক্তাদিও সুরা ফাতেহা পড়বে ৩) মুক্তাদি কোনো কেরাতই পড়বে না, বরং চুপ থাকবে।

জেনে রাখা ভালো যে ইমামদের প্রত্যেকটি অভিমতের পেছনেই দলিল রয়েছে। তাই কোনো ইমামকে কিংবা কোনো অভিমতকেই কটাক্ষ করার সুযোগ নেই। সব ইমামের সবগুলো দলিল এখানে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়, তাই এই অঞ্চলে এবং সারা বিশ্বে যেহেতু ইমাম আবু হানিফার অনুসারী বেশি, তাই এ সংক্রান্ত আলোচনাটি তাঁর দলিল ও যুক্তির আলোকে তুলে ধরা হলো।

ইমাম আবু হানিফা (রহ) ও সংশ্লিষ্টদের মত হলো—মুক্তাদিকে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা পড়তে হবে না। বরং ইমামের কেরাতই মুক্তাদির কেরাত হিসেবে গণ্য হবে। ইমাম সুরা ফাতেহার পর বাকি সুরা মিলালে যেমন তা মুক্তাদির পক্ষ থেকে হয়ে যায়, তেমনি সুরা ফাতেহা পড়লেও তা মুক্তাদির পক্ষ থেকে হয়ে যাবে। মুক্তাদিকে আলাদাভাবে সুরা ফাতেহা পড়তে হবে না, সেই সাথে অতিরিক্ত সুরাও মেলাতে হবে না।

কেননা আল্লাহ তাআলা কোরআন তেলাওয়াতের সময় চুপ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-  وَ اِذَا قُرِیٴَ الۡقُرۡاٰنُ فَاسۡتَمِعُوۡا لَهٗ وَ اَنۡصِتُوۡا لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ ‘আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমরা রহমত লাভ কর।’ (সুরা আরাফ: ২০৪) 


বিজ্ঞাপন


লক্ষ্য করুন- এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা শুধু মনোযোগ দিয়ে শুনতে বলেননি, একইসঙ্গে চুপ থাকতেও নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা জানি যে কোনোকিছু মনোযোগ দিয়ে শুনতে হলে এমনিতেই চুপ থাকতে হয়, তারপরও আল্লাহ তাআলা আলাদাভাবে চুপ থাকতে বলেছেন কেন? এর সূত্র ধরেই ইমাম আবু হানিফার মতাদর্শী আলেমরা বলে থাকেন- যে নামাজে ইমাম আস্তে কেরাত পড়ে তখনও মুক্তাদিকে চুপ থাকতে হবে। তাহলেই আল্লাহ তাআলার নির্দেশ যথাযথ মান্য করা হবে। কারণ পবিত্র কোরআনে অযথা কোনো শব্দ নেই।

আরও পড়ুন: স্বামী কি মৃত স্ত্রীর গোসল দিতে পারবে?

এছাড়া সুরা ফাতেহা ছাড়া যেমন নামাজ হয় না, তেমনি খুতবা ছাড়াও জুমা হয় না। কিন্তু খুতবা সবাইকে দিতে হয় না; ইমাম খুতবা দিলেই যথেষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে আজান ও ইকামত ইত্যাদি একজন দিলেই হয়ে যায়। সুতরাং ইমামের তেলাওয়াতও মুক্তাদির তেলাওয়াত বলেই গণ্য হবে। আলাদাভাবে মুক্তাদিকে কেরাত পড়তে হবে না। 

সহিহ হাদিসেও ইমামের কেরাত মুক্তাদির জন্য যথেষ্ট বলা হয়েছে। জাবের (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ، فَقِرَاءَةُ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ ‘যার ইমাম রয়েছে, তার ইমামের কেরাত মানেই হলো তার কেরাত।’ (মুয়াত্তা মালেক: ১২৪, মুসনাদে আহমদ: ১৪৬৪৩, ইবনে মাজাহ: ৮৫০, দারা কুতনি: ১২৩৩,মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক: ২৭৯৭, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি: ২৮৯৭, মুসন্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৩৭৭৯, মুসনাদে আবি হানিফা: ২৫)

হাদিসটির ব্যাপারে মুহাদ্দিসিনদের বক্তব্য-

১. আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, এটি মারফুর চেয়েও অধিক সহিহ। (আল আহকামুল কাবির: ২/৪৭২)

২. আল্লামা বুসিরি (রহ.) বলেন, এর সনদটি বুখারি মুসলিমের সনদের মতোই সহিহ। (ইতহাফুল খাইরাতিল মাহরাহ: ২/১৬৮)

৩. আল্লামা কামাল ইবনে হুমাম (রহ.) বলেন, মুসলিমের শর্তানুপাতে এ হাদিসটির সনদ সহিহ। (শরহে ফাতহুল কাদির: ১/৩৪৬)

৪. আল্লামা সানআনি (রহ.) বলেন, অনেক সূত্রে তা বর্ণিত; এটি গ্রহণ করা আবশ্যক। (আলইদ্দাতু আলাল আহকাম: ২/২৬৮)

৫. আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি (রহ.) বলেন, এর অনেক তুরুক রয়েছে, যার একটি অপরটিকে শক্তিশালী করেছে। (উমদাতুল কারি: ৬/১৭)

৬. আল্লামা মোল্লা আলি কারি (রহ.) বলেন, এর সনদ সহিহ। (শরহে মুসনাদে আবি হানিফা, বর্ণনা নং-৩০৮)

আরও পড়ুন: ফরজ নামাজের ৩য়-৪র্থ রাকাতে ফাতেহার সঙ্গে ভুলে অন্যসুরা পড়লে করণীয়

অতএব, উক্ত সহিহ হাদিসের আলোকে এ কথা পরিষ্কার যে ইমামের পেছনে মুক্তাদিকে কোনো কেরাত পড়তে হবে না। চাই তা সুরা ফাতেহা হোক বা অন্যকোনো সুরা।

কেননা ইমামের কেরাত মানেই মুক্তাদির কেরাত। ইমামের নামাজ শুদ্ধ হওয়া মানেই মুক্তাদির নামাজ শুদ্ধ হওয়া। ইমামের নামাজ অশুদ্ধ হওয়া মানেই মুক্তাদির নামাজ অশুদ্ধ হওয়া। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নতের ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর