শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রমজানে যেসব গুণ অর্জন করবেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৩, ০৪:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

রমজানে যেসব গুণ অর্জন করবেন

মাহে রমজান মুমিন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাস আখেরাতের পাথেয় গোছানোর মাস। এই মাসে বর্ষিত হয় রহমতের বারিধারা। এই মাসে কিছু গুণাবলী অর্জনের দীক্ষা নেন একজন মুমিন। যে শিক্ষাগুলো ধারণ করলে জীবন হয় আলোকিত। নিচে তেমনই ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আলোকপাত করা হলো—

১) তাকওয়া অর্জন
রোজার প্রধান শিক্ষাই হলো তাকওয়া অবলম্বন করা। তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা ও ভয় করা। পরিভাষায়—মহান আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় অন্যায়-অনাচার ও পাপাচার হতে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলে। আর দীর্ঘ এক মাস প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বান্দাকে তাকওয়া অবলম্বন করার যোগ্যতা তৈরি করেন মহান আল্লাহ। সিয়াম ফরজ করার উদ্দেশ্যও তাই। আল্লাহ তাআলা বলেন ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

তাকওয়া অর্জন করা ছাড়া মুমিনদের উপায়ও নেই। কারণ, ‘আল্লাহ শুধুমাত্র মুত্তাকিদের ইবাদত কবুল করেন।’ (সূরা মায়েদা: ২৭) অতএব, বাকি ১১ মাস যদি আল্লাহর কাছে আমরা মুত্তাকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারি, রমজানের প্রশিক্ষণ তাহলেই সুফল দেবে।

২) কোরআনের আলোকে জীবন গড়া
কোরআন নাজিলের মাস রমজান। তাই রমজানের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক নিবিড়। বিশুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষা ও কোরআনের সমাজ গড়া রমজানের অন্যতম শিক্ষা। রমজান ও কোরআনের উদ্দেশ্যও এক। তা হলো তাকওয়া অর্জন। ‘তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো’ (সুরা বাকারা: ১৮৩)। ইবনে হাজার (রহ) বলেন- কোরআন তেলাওয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য আত্মিক উপস্থিতি ও উপলব্ধি। (ফাতহুল বারি: ৯/৪৫) ইবনে বাত্তাল (রহ) বলেন, রাসুলের কোরআন শিক্ষা ও অনুশীলনের একমাত্র কারণ ছিলো পরকালের আকাঙ্ক্ষা ও ব্যাকুল ভাবনার জাগরণ এবং পার্থিব বিষয়ে অনীহার সৃষ্টি করা। (ইবনে বাত্তাল, শরহে বুখারি: ১/১৩) মূলকথা হলো—রমজানের মতো কোরআনও বান্দার তাকওয়া অর্জনে ভূমিকা পালন করে।

হাশরের ময়দানে বান্দার মুক্তির জন্য রোজা ও কোরআনের ভূমিকা থাকবে বেশি। নবীজী (স.) বলেন, ‘কোরআন ও রোজা আল্লাহ তাআলার কাছে সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও মনের খায়েশাত মিটানো থেকে বিরত রেখেছিলাম। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব আমাদের সুপারিশ কবুল করুন। তখন আল্লাহ তাআলা সুপারিশ কবুল করে নিবেন।’ (মুসনাদে আহমদ) সহিহ মুসলিমে আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেন, ‘ তোমরা কোরআন পড়ো, কেননা তেলাওয়াতকারীদের জন্য কোরআন সুপারিশকারী হিসেবে আসবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৮০৪) 


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

সহিহ ইবনে হিব্বানে এসেছে, ‘কোরআন এমন সুপারিশকারী যার সুপারিশ কবুল করা হবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পথপ্রদর্শক বানাবে কোরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পশ্চাতে ফেলে রাখবে কোরআন তাকে জাহান্নামে পাঠাবে।’ (ইবনে হিব্বান: ১২৪)

৩) সহমর্মিতা
মহানবী (স.) রমজান মাসকে ‘সহমর্মিতার মাস’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। দীর্ঘদিন রোজা রাখার কারণে রোজাদারের মধ্যে দরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি সহমর্মিতাবোধ জাগ্রত হয়। সহমর্মিতা জ্ঞাপন করার জন্য মহানবী (স.) রমজান মাসে অধিক পরিমাণে দান করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (স.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল। রমজান মাসে তিনি আরও অধিক দানশীল হয়ে ওঠতেন...’ (বুখারি: ৬)

মুসলিম উম্মাহর পূর্বসূরীরা অসহায় ও হতদরিদ্রের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। আমরাও রমজান থেকে শিক্ষা  নিয়ে তাঁদের অনুসৃত পথে চলার চেষ্টা করবো। সাহাবায়ে কেরামের পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহমর্মিতা সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা তাদের নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়; নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। যাদের অন্তর কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে তারাই সফলকাম। (সুরা হাশর: ৯)
সুতরাং সুখে-দুখে অসহায়, অনাথের প্রতি আমরা যেন সহমর্মিতা প্রদর্শন করি।

৪) ধৈর্যধারণ 
হাদিসে রমজান মাসকে ‘ধৈর্যের মাস’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। রোজাদারের সামনে সুস্বাদু খাবার থাকলেও তিনি আহার করেন না, রূপসী স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সহবাস করেন না। এমনকি আচার-আচরণেও ধৈর্যধারণ করেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার।’ (বুখারি: ১৯০৪)

আরও পড়ুন: ইসলামে ধৈর্যের পুরস্কার

ধৈর্যধারণকারীর সাফল্য সুনিশ্চিত, কারণ আল্লাহ তাআলা ধৈর্য ধারণকারীর সঙ্গে থাকেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা: ১৫৩)

তাই মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানের ধৈর্যপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর যেন পুনরায় পরের মাসগুলোতে অধৈর্য না হন। 

৫) ইখলাস 
রোজা এমন একটি ইবাদত, যা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যেই পালন করা হয়। লোকচক্ষুর অন্তরালে পানাহার ও যৌনাচার করার সুযোগ পরিহার করেই রোজা রাখেন একজন রোজাদার। এজন্যই হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য। কিন্তু রোজা আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব।’ (বুখারি: ১৯০৪)

আল্লাহর দরবারে বান্দার আমল কবুল হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে ইখলাস। ইবাদত হবে কেবল আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে; মানুষের প্রশংসা বা পার্থিব সুবিধা-চিন্তা এতে থাকতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের কেবল একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ (সুরা বাইয়িনা: ৫)
তাই ইবাদতে ইখলাস তথা নিষ্ঠার শিক্ষাকে পরবর্তী ১১ মাস কাজে লাগাবেন একজন প্রকৃত মুসলমান।

আরও পড়ুন: দোয়া কবুলের জন্য যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

৬) ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব
রমজানে ধনী-গরীব, সাদা-কালো একসঙ্গে তারাবির নামাজ, একই দস্তরখানে সম্মিলিতভাবে ইফতার করা এবং জাকাত ও সদকাতুল ফিতর প্রদান ইত্যাদির মাধ্যমে ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধন তৈরি হয়। এই ভ্রাতৃত্ববোধ মুসলমানদের প্রতি সৃষ্টিকর্তার একান্ত অনুগ্রহ ও আশীর্বাদ। 

ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন। এভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শন সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করেন, যাতে তোমরা সৎ পথ লাভ করতে পারো।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)

মুমিনের উচিত- পবিত্র রমজানের শিক্ষা থেকে উপরোক্ত গুণাবলী অর্জন করা এবং জীবনে ধারণ করে আলোকিত মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর