বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০২৪, ঢাকা

দোয়া কবুলের জন্য যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০২:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

দোয়া কবুলের জন্য যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দোয়া কবুলের মাধ্যমে অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’(সূরা মুমিন: ৬০)। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি: ২১৩৯) 

দৃঢ় বিশ্বাস
আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করবেন—এ কথার ওপর দৃঢ় সংকল্প সহকারে দোয়া করতে হবে। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তোমার দোয়ার জবাব দেবেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে আল্লাহকে ডাকো। তবে, এটাও জেনে রাখো যে, গাফেল (অমনোযোগী ও অসাড়) অন্তরের দোয়ার জবাব দেওয়া হয় না।’ (তিরমিজি: ৭৪৭৯)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: আল্লাহ যেভাবে বান্দার ডাকে সাড়া দেন

সংশয় নয়
দোয়া কবুলের ব্যাপারে মনে কোনো দ্বিধা রাখা যাবে না। সংশয় রাখার কোনো কারণও নেই। কারণ, আল্লাহ তাআলা শয়তানের দোয়াও কবুল করেছেন। শয়তান দোয়া করেছিল, তাকে যেন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দেওয়া হয়। ‘সে (ইবলিস) বলল, ‘আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন’। তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘নিশ্চয় তুই অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’ (সুরা আরাফ: ১৪-১৫) 

ইখলাস থাকলে আল্লাহ সবার দোয়া কবুল করেন
অবিশ্বাসীরাও (মুশরিক) বিপদে পড়লে আল্লাহকে ডাকে এবং তিনি তাতে সাড়াও দেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তারা কোনো জলযানে আরোহন করে, তারা আল্লাহকে একনিষ্ঠভাবে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন নিরাপদে তাদের স্থলে পৌঁছে দেন, তখন তারা তাঁর সঙ্গে শরিক করতে থাকে।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৫)

আল্লাহ জানেন যে, তাদেরকে নিরাপদে তীরে পৌঁছে দেওয়ার পর তারা আবারও শিরক করবে। তারপরও তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। কারণ, তারা ক্ষণিকের জন্য হলেও আল্লাহকে ডেকেছে ইখলাস বা একনিষ্ঠতার সঙ্গে। এই উপায়ে দোয়া করলে যদি মুশরিকের দোয়াও কবুল করা হয়, তাহলে তাওহিদের অনুসারীদের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাই দরকার ইখলাস বা একনিষ্ঠতা।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: শিরক থেকে বেঁচে থাকার পুরস্কার

অবিরত দোয়া করা এবং হতাশ না হওয়া
মুমিন মুসলমানের জন্য বাঞ্ছনীয়- রাতারাতি দোয়া কবুল না হলেও ক্রমাগত দোয়া করতে থাকা। হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং দোয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এমনটি বলা যাবে না যে, আমি এত দোয়া করলাম, অথচ আল্লাহ কবুল করলেন না। এভাবে বান্দা মূলত নিজের দোয়াকে নিজেই ধ্বংস করে ফেলে।

সালাফদের মধ্যে দেখা যায়, কেউ ২০ বছর ধরে একটি জিনিস চেয়ে পাননি, তারপরও তাঁরা আশা ছেড়ে দেননি। অবিরত দোয়া করে গেছেন এই আশায় যে, একদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করবেন।

দোয়ার আগে-পরে দরুদ পাঠ করা
কবুল হওয়ার জন্য দোয়ার শুরু ও শেষে এবং মাঝখানে দরুদ পাঠ করা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে আবু সুলায়মান আদ-দারানি সুন্দর একটি কথা বলেছেন যে ‘নবীর প্রতি দরুদ এমনিতেই কবুল হয়। আর আল্লাহ কোনো দোয়ার শুরু এবং শেষ অংশ কবুল করবেন, মাঝখানের অংশ প্রত্যাখ্যান করবেন, এমনটি হতে পারে না।’ তাই কবুলের জন্য দোয়ার আগে ও পরে দরুদ পড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আরও পড়ুন: দরুদ ও সালামের অবিশ্বাস্য ফজিলত

হারাম থেকে বেঁচে থাকা
দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি পরিহার করা। হারাম উপার্জনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে যতই দোয়া করা হোক, তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। রাসুল (স.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত, অবিন্যস্ত ও সারা শরীর ধুলামলিন। সে আসমানের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে, হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবন-জীবিকাও হারাম। এমতাবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? (তিরমিজি: ৮৯৬৯)

মনে রাখতে হবে, দোয়া কখনো বিফলে যায় না। হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করেন। ১) হয়ত তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন। ২) অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন। ৩) অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদ তার থেকে দূরে করে দেন। সহাবিরা বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি বলেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (আত-তারগিব: ১৬৩৩)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে একনিষ্ঠভাবে কাকুতি-মিনতি করে তাঁর কাছে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর