শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

যে ফেতনাকে সাহাবিরাও ভয় পেতেন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ জুন ২০২২, ১২:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

যে ফেতনাকে সাহাবিরাও ভয় পেতেন

রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সাহাবিরা যে অরাজকতার ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যেতেন সেটি হলো দাজ্জালের ফেতনা। এই ফেতনাকে তাঁরা সবচেয়ে বেশি ভয় পেতেন। কারণ দাজ্জালের ফেতনাই হবে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। নবীজির কাছে দাজ্জালের কথা শোনার সময় তারা ভয়ে কুঁকড়ে যেতেন। নবীজি (স.) বলেছেন—

‘..যা কিছু আমাকে ইতিপূর্বে দেখানো হয়নি, তা আমি আমার এ স্থানেই দেখতে পেয়েছি। এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামও দেখেছি। এরপর আল্লাহ তাআলা আমার কাছে অহি প্রেরণ করলেন, তোমাদেরকে কবরের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে দাজ্জালের ন্যায় (কঠিন) পরীক্ষা অথবা তার কাছাকাছি..।’ (বুখারি: ৮৬)

লক্ষ্য করুন, হাদিসে কবরের ফেতনাকে দাজ্জালের ফেতনার কাছাকাছি বলা হয়েছে। অর্থ স্পষ্ট, কবরে তো মুমিনদের ঈমান হারানোর ভয় নেই, কিন্তু দাজ্জালের ফেতনায় ঈমানহারা হবে মানুষ, যা তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। দাজ্জালের আগমন কেয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। 

‘দাজ্জালের সঙ্গে দুটি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে। যার সঙ্গে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে, সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ সেই পানি সুমিষ্ট। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে কাফের লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবে।’ (মুসলিম- কিতাবুল ফিতান)

দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করবে। ‘সে মানুষের কাছে গিয়ে বলবে, আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই, তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবে অবশ্যই মানব। এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে বলবে, হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক।’ (সহিহ জামে আস্-সগির: ৭৭৫২)

নাওয়াস বিন সামআন (রা.) বলেন, ‘একদা রাসুল (স.) সকাল বেলা আমাদের কাছে দাজ্জালের বর্ণনা করলেন। তিনি তার ফেতনাকে খুব বড় করে তুলে ধরলেন। বর্ণনা শুনে আমরা মনে করলাম, নিকটস্থ খেজুরের বাগানের পাশেই সে হয়ত অবস্থান করছে। আমরা রাসুল (স.)-এর নিকট থেকে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা আবার তাঁর কাছে গেলাম। এবার তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কি হলো? আমরা বললাম- হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যেভাবে দাজ্জালের আলোচনা করেছেন, শুনে আমরা ভাবলাম হতে পারে সে খেজুরের বাগানের ভেতরেই রয়েছে। নবী (স.) বললেন, দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের ওপর আমার আরো ভয় রয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেই যদি দাজ্জাল আগমণ করে তাহলে তোমাদেরকে ছাড়া আমি একাই তার বিরুদ্ধে ঝগড়া করবো। আর আমি চলে যাওয়ার পর যদি সে আগমণ করে তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে হেফাজত করবে। আর আমি চলে গেলে আল্লাহই প্রতিটি মুসলিমকে হেফাজতকারী হিসেবে যথেষ্ট।’ (তিরমিজি, কিতাবুল ফিতান; সহিহ মুসলিম: ২৯৩৭; সুনানে তিরমিজি: ২২৪০; মুসনাদে আহমদ: ১৭৬২৯; মুসতাদরাকে হাকিম: ৪/৬৬১ হাদিস: ৮৫৭৩)


বিজ্ঞাপন


প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য, দাজ্জালের ফেতনা মোকাবেলায় সচেতন থাকা। সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা। নবীজি বলেছেন—
দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচতে সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করার কথা এসেছে হাদিসে। বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ১০টি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা হতে হেফাজতে থাকবে (মুসলিম, কিতাবুল ফিতান)। অন্য হাদিসে এসেছে- ‘তোমাদের কাউকে যদি সে পেয়ে বসে, তাহলে তার ওপর সুরা কাহাফের প্রথম থেকে পড়বে’। (মুসলিম)

সুরা কাহাফ পাঠের নির্দেশ এজন্যও হতে পারে যে, মুমিন ব্যক্তি এগুলো গভীরভাবে পাঠ করলে দাজ্জালের বিস্ময়কর ঘটনা দেখে কিছুতেই বিচলিত হবে না। এতে সে হতাশ হয়ে বিভ্রান্তিতেও পড়বে না।

জুমার দিনে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করলে দাজ্জালের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমাবারে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, দাজ্জাল তার নাগাল পেলেও তার ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে না (অর্থাৎ তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না)।’ (বায়হাকি: ২৭৭৬)

এছাড়াও ইসলামকে সঠিকভাবে যারা আঁকড়ে ধরবে, তাদের জন্য দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিজেকে বাঁচানো সহজ হবে। একইসঙ্গে তার কাছ থেকে দূরে পালানোর কথাও এসেছে হাদিসে। তার সময়ে জনসমাগম এড়িয়ে চলাটাই নিরাপদ। মক্কা-মদিনায় যারা বাস করবেন, তারা বেশি নিরাপদ। কারণ, ‘সে সময় মক্কা-মদিনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতারা পাহারা দেবেন।’ (মুসলিম- কিতাবুল ফিতান)

আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের পূর্ববর্তী সময়ে অভিশপ্ত দাজ্জালের ভয়াবহ ফেতনা থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করুন। উল্লেখিত আমলসমূহ যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর