বিয়ে ইসলামের একটি পবিত্র চুক্তি, যার অপরিহার্য অংশ হলো মোহরানা। এটি স্ত্রীর নিঃশর্ত অধিকার। আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন- ‘আর তোমরা নারীদের তাদের মোহরানা আনন্দচিত্তে প্রদান করো।’ (সুরা নিসা: ৪) কিন্তু প্রশ্ন জাগে, ২০ বছর আগে নির্ধারিত মোহরানা কি শুধু টাকার অঙ্কে পরিশোধ করলেই চলবে, নাকি সময়ের মূল্যহ্রাস বিবেচনায় নিতে হবে?
নির্ধারিত টাকার মোহরানা বৈধ
ফিকহি বিচার অনুযায়ী, যদি মোহরানা নির্দিষ্ট টাকার বা দিরহামের অঙ্কে নির্ধারিত হয়ে থাকে, তাহলে সেই নির্ধারিত পরিমাণ যেকোনো সময়েই পরিশোধযোগ্য। এখানে সময়ের ব্যবধানে মুদ্রার মূল্যহ্রাসকে ফরজ পর্যায়ে বিবেচনায় আনা হয় না।
ফিকহি গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘যদি ঋণ বা মোহরানা নির্দিষ্ট পরিমাণে ধার্য করা হয়, তবে সেই পরিমাণ পূর্ণ করা যথেষ্ট; বৃদ্ধি বা হ্রাস বিবেচ্য নয়।’ (দুররুল মখতার: ৭/৩৯০; ফতোয়া হামিদিয়া: ১/২৯৪)
ফলে, শরিয়তের মৌলিক বিধান (ফরজ স্তর) অনুযায়ী ২০ বছর আগের নির্ধারিত টাকার অঙ্ক পরিশোধ করলেই দায়িত্ব আদায় হবে।
আরও পড়ুন: মোহরানা নিয়ে ৫ ভুল ধারণা, যা ইসলাম অনুমোদন করে না
বিজ্ঞাপন
অতিরিক্ত দেওয়া সুদ নয়, বরং ইহসান
এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট করা জরুরি যে, মোহরানা স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত দিলে সেটি সুদ (রিবা) হবে না। বরং খুশি মনে দেওয়া অতিরিক্ত টাকা হাদিয়া বা ইহসান হিসেবে গণ্য হবে, যা সম্পূর্ণ জায়েজ ও প্রশংসনীয়।
হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘এক লোক নবী (স.)-এর নিকট তার (প্রাপ্য) উটের তাগাদা দিতে আসে। আল্লাহর রাসুল (স.) সাহাবিদের বললেন, তাকে একটি উট দিয়ে দাও। তাঁরা বললেন, তার চেয়ে উত্তম বয়সের উটই পাচ্ছি। লোকটি বলল, আপনি আমাকে পূর্ণ হক দিয়েছেন, আল্লাহ আপনাকে যেন পূর্ণ হক দেন। আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, তাকে সেটি দিয়ে দাও। কেননা, মানুষের মধ্যে সেই উত্তম, যে উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ করে।’ (সহিহ বুখারি: ২৩৯২)
এই হাদিসটি প্রমাণ করে, ঋণ বা হক আদায়ের সময় উত্তম জিনিস দেওয়া শরিয়তের দৃষ্টিতে উত্তম আচরণ (ইহসান) এবং এটি সুদ থেকে সম্পূর্ণ পৃথক।
আরও পড়ুন: স্ত্রী মারা গেলে মোহরানার টাকার কী হবে?
বাস্তব প্রয়োগ ও নৈতিক দিক
যেমন ১৯৯০ সালে ২০ হাজার টাকা মোহরানা নির্ধারিত হয়। আজকের দিনে সেই টাকার ক্রয়ক্ষমতা অনেক কম। শরিয়তের মৌলিক বিধান অনুসারে ২০ হাজার টাকাই যথেষ্ট। তবে, ন্যায়বিচার, দাম্পত্য সম্প্রীতি ও উত্তম আচরণ (ইহসান) এর আলোকে স্বামীর জন্য উত্তম পথ হলো- বর্তমান বাজারমূল্য বা স্বর্ণের দর বিবেচনা করে স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করে পরিশোধ করা। এটি ফরজ নয়, কিন্তু অধিক সওয়াব ও বরকতের কারণ।

