শীতকাল মুমিনের জন্য বিশেষ নেয়ামত। কারণ এ মৌসুমে দিন ছোট, রাত দীর্ঘ—ইবাদত-বন্দেগি করার সুযোগও বেশি। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’ (মুসনাদে আহমাদ: ১১৬৫৬)
শীতের ঠাণ্ডাকে উপেক্ষা করে যারা আল্লাহর ইবাদতে মনোযোগী হয়, তাদের জন্য রয়েছে বিপুল সওয়াব, গুনাহ মাফ এবং জান্নাতের প্রতিশ্রুতি। নিচে শীতকালে সহজেই আদায়যোগ্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো।
বিজ্ঞাপন
১. রোজা রাখার স্বর্ণালি সুযোগ
শীতকালে দিন ছোট ও আবহাওয়া শীতল হওয়ায় রোজা রাখা সহজতর হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- ‘শীতকালের সিয়াম অনায়াসলব্ধ গনিমত সম্পদের মতো।’ (তিরমিজি: ৭৯৫)
এ সময় কাজা রোজা আদায়, নফল রোজা এবং বিশেষ রোজাগুলোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া যায়:
- আইয়ামে বিজ: প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ
- সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা: রাসুল (স.) এ দুই দিনে রোজা রাখতেন (তিরমিজি: ৭৪৫–৭৪৭)
- সাওমে দাউদ: দাউদ (আ.)-এর রোজার প্রশংসা করেছেন নবীজি। ‘তিনি একদিন রোজা রাখতেন আর একদিন ছেড়ে দিতেন। (ফলে তিনি দুর্বল হতেন না) এবং যখন তিনি শত্রুর সম্মুখীন হতেন তখন পলায়ন করতেন না।’ ( বুখারি: ১৯৭৮)
শীতকাল তাই রোজার জন্য এক অনন্য সুযোগ।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড শীতে মুখ ঢেকে নামাজ পড়া যাবে?
২. তাহাজ্জুদ: দীর্ঘ রাতের বিশেষ ইবাদত
শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় তাহাজ্জুদ পড়া খুব সহজ হয়ে যায়। কেউ চাইলে ভালোভাবে ঘুমিয়েও শেষ রাতে উঠতে পারে। আল্লাহতাআলা মুত্তাকিদের প্রশংসায় বলেন- ‘তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে...’ (সুরা সাজদাহ: ১৬)
তাহাজ্জুদ পড়লে আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য ও দয়া লাভ হয়।
৩. পরিপূর্ণ অজু ও নামাজের অপেক্ষা
শীতের ঠাণ্ডায় অজু করা কষ্টকর মনে হলেও এটি অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- ‘কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণাঙ্গ অজু করা, অধিক পদক্ষেপে মসজিদে যাওয়া এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষা করা—এগুলো গুনাহ মোচন করে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে।’ (মুসলিম: ২৫১)
শীতকালে নামাজগুলো কাছাকাছি সময়ে হওয়ায় এটি পালন করা আরও সহজ।
আরও পড়ুন: সুন্দরভাবে অজু করার বিস্ময়কর ফজিলত
৪. শীতার্ত মানুষের সহায়তা: জান্নাতের পথ
হাড়–কাঁপানো শীতে অসহায় মানুষের কষ্ট বহুগুণ বেড়ে যায়। তাদের জন্য উষ্ণ বস্ত্র দান করা ইসলামের দৃষ্টিতে মহৎ ইবাদত। রাসুল (স.) বলেন- ‘যে মুমিন অন্য বিবস্ত্র মুমিনকে কাপড় পরিয়ে দিল, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরাবেন।’ (তিরমিজি: ২৪৪৯)
শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো মানবিক ও ধর্মীয় উভয় দায়িত্ব।
৫. কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির-আজকার
দীর্ঘ শীতরাত ইলম চর্চা, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকিরের জন্য উপযোগী সময়। হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি রাতে দশ আয়াত তেলাওয়াত করল, সে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে না।’ (আবু দাউদ: ১৩৯৮)
এ সময় সুরা মুখস্থ করা, দোয়া শেখা ও ইলমের চর্চাও সহজ হয়।
আরও পড়ুন: কঠিন সময়ে বন্ধু হবে কোরআন
৬. ফজর ও এশার নামাজে সতর্কতা
শীতকালে মূল পরীক্ষার জায়গা হলো এশা ও ফজরের নামাজ। ঠাণ্ডার অজুহাত দেখিয়ে অনেকেই গাফেল হয়ে পড়ে। অথচ নবীজির ঘোষণা- ‘যে ব্যক্তি দুই শীতের (ফজর ও আছরের) সালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি: ৫৭৪)
এশা ও ফজরের নামাজের গুরুত্ব তাই অপরিসীম।
মোটকথা, শীতকাল শুধু আবহাওয়ার পরিবর্তন নয়, এটি মুমিনের জন্য ইবাদতের বসন্তকাল। শীতের প্রতিটি মুহূর্তকে ইবাদত, দান, তেলাওয়াত ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে কাজে লাগানোই একজন বুদ্ধিমান মুমিনের পরিচয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শীতের এই বরকতময় সুযোগগুলো পূর্ণভাবে গ্রহণ করার তাওফিক দিন। আমিন।

