সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সুন্দরভাবে অজু করার বিস্ময়কর ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

সুন্দরভাবে অজু করার ফজিলত

পবিত্রতা অর্জনের জন্যে সুন্দরভাবে অজু করা অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল। হজরত ওমর (র.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন—‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গভাবে অজু করে, অতঃপর বলে—‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।’ তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, সে প্রবেশ করতে পারবে।’ (মুসলিম: ১৭/২২৪, মেশকাত, পৃ-৩৯)

পরিশুদ্ধ অজুর বরকতে বান্দার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এমনকি নবজাতকের মতো নিষ্পাপ হয়ে যায় বলে হাদিস রয়েছে। হজরত আমর ইবনে আবাসা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— আমি একদিন প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অজুর ফায়দা কী? তিনি বলেন, ‘যখন তুমি অজু করবে ও দুই হাতের কবজি পরিষ্কার করে ধৌত করবে, তখন গুনাহসমূহ আঙুলের অগ্রভাগ ও নখ দিয়ে বের হয়, যখন নাকের ছিদ্র পরিষ্কার করবে, মুখ ও হস্তদ্বয় কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে, মাথা মাসেহ করবে ও উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে, তখন তুমি যেন তোমার গুনাহগুলোকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দিলে। এরপর যখন তুমি তোমার চেহারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে জমিনে রাখবে, তখন তুমি এমনভাবে গুনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তোমার মা তোমাকে জন্ম দিয়েছিল।’ (নাসায়ি: ১৪৭)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: অজু করে ঘুমানোর বিস্ময়কর ফজিলত

কেয়ামতের ময়দানে অজুকারী ব্যক্তিদের অঙ্গগুলো নুরের আলোয় ঝলমল করতে থাকবে। হাশরে উপস্থিত সকলে অজুকারী ব্যক্তির দিকে বারবার তাকাতে থাকবে। হজরত নোয়াঈম মুজমির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.) এর সঙ্গে মসজিদের ছাদে উঠলাম। তিনি অজু করলেন। তারপর বললেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয়ই কেয়ামত দিবসে আমার উম্মতকে এমন অবস্থায় ডাকা হবে, অজুর প্রভাবে তাদের হাত-পা ও মুখমণ্ডল উজ্জ্বল থাকবে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার ইচ্ছা রাখে, সে যেন তা করে নেয়।’ (বুখারি:১৩৬)

অজুর বিধান
অজুর বিধান সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে মুমিনরা! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে তখন তোমাদের মুখ ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং মাথা মাসেহ করবে আর পা টাখনু (গ্রন্থি) পর্যন্ত ধৌত করবে...।’ (সুরা মায়েদা: ৬)

পূর্ণাঙ্গ অজুর পদ্ধতি
অজুর নিয়ম সুন্দরভাবে বলা হয়েছে হজরত ওসমান (রা.) বর্ণিত হাদিসে। হাদিসটি হলো—ওসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি অজুর পানি চাইলেন। এরপর অজু করতে শুরু করলেন। (বর্ণনাকারী বলেন), তিনি ওসমান (রা.) তিনবার তার হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, এরপর কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। এরপর তিনবার তার মুখমণ্ডল ধুলেন এবং ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর বাম হাত অনুরূপভাবে ধুলেন। অতঃপর তিনি মাথা মাসেহ করলেন। এরপর তার ডান পা টাখনু পর্যন্ত তিনবার ধুলেন- অতঃপর একইভাবে বাম পা ধুলেন।


বিজ্ঞাপন


তারপর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমার এ অজুর মতো অজু করতে দেখেছি এবং অজুশেষে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ অজুর মতো অজু  করবে এবং একান্ত মনোযোগের সাথে দু’রাকাআত সালাত আদায় করবে, সে ব্যক্তির পেছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, আমাদের ‘আলিমগণ বলতেন যে, সালাতের জন্যে কারোর এ নিয়মের অজুই হল পরিপূর্ণ অজু (মুসলিম: ৪২৬-(৩/২২৬)

আরও পড়ুন: ফরজ গোসলের পর নামাজের জন্য অজু করতে হবে কি?

এ হাদিসটি যদি আমরা সুরা মায়েদার ৬নং আয়াতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখি, তখন অজুতে কী কী করতে হবে, তা সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে। সে হিসেবে অজুতে নিম্নোক্ত কাজগুলো আবশ্যক।

১. মুখমণ্ডল ধৌত করা (মুখ ও নাক মুখমণ্ডলেরই অংশ) ২. কনুইসহ দু’হাত ধৌত করা ৩. মাথা মাসেহ করা (দু’কান মাথারই অংশ) ৪. দু’পা ধৌত করা ৫. ধৌত অঙ্গের মধ্যে পরস্পর ক্রমবিন্যাস বা ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ৬. অজু করার সময় এক অঙ্গ ধৌত করার পর বিলম্ব না করে অন্য অঙ্গ ধৌত করা ৭. নিয়ত করে (অন্তরে সুদৃঢ়ভাবে নির্ধারণ করে) সালাতে দাঁড়ানো।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুন্দরভাবে অজু করার তাওফিক দান করুন। এর পূর্ণ ফজিলত আল্লাহ আমাদের দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর