মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

কঠিন সময়ে বন্ধু হবে কোরআন

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৮ এএম

শেয়ার করুন:

কঠিন সময়ে বন্ধু হবে কোরআন

কোরআনুল কারিম আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশীগ্রন্থ। বিশ্বমানবতার চিরন্তন মুক্তির সনদ, যার তেলাওয়াত, অধ্যয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ ও সফলতা। কোরআন তেলাওয়াতের গুরুত্ব ও ফজিলত অপরিসীম। কোরআনের গুরুত্ব তুলে ধরে মহান আল্লাহ প্রিয়নবী (স.)-কে লক্ষ্য করে বলেন, إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا ‘আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি গুরুত্বপূর্ণ বাণী।’ (সুরা মুজাম্মিল: ৫)

হাশরের ময়দানে বান্দার নেক আমল নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকাসহ সব ইবাদতের একটা আকৃতি থাকবে এবং বান্দার মুক্তির জন্য সেগুলোর ভুমিকা থাকবে। এ সবের মাঝে কোরআনের ভূমিকা থাকবে বেশি। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবীজী (স.) বলেন, ‘কোরআন ও রোজা আল্লাহ তাআলার কাছে সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও মনের খায়েশাত মিটানো থেকে বিরত রেখেছিলাম। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব আমাদের সুপারিশ কবুল করুন। তখন আল্লাহ তাআলা সুপারিশ কবুল করে নিবেন।’ (মুসনাদে আহমদ) সহিহ মুসলিমে আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেন, ‘ তোমরা কোরআন পড়ো, কেননা তেলাওয়াতকারীদের জন্য কোরআন সুপারিশকারী হিসেবে আসবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৮০৪) 


বিজ্ঞাপন


সহিহ ইবনে হিব্বানে এসেছে, ‘কোরআন এমন সুপারিশকারী যার সুপারিশ কবুল করা হবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পথপ্রদর্শক বানাবে কোরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পশ্চাতে ফেলে রাখবে কোরআন তাকে জাহান্নামে পাঠাবে।’ (ইবনে হিব্বান: ১২৪)

আরও পড়ুন: কোরআন যাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না

যারা কোরআন পড়তে জানে না, তাদের শেখার চেষ্টা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে ও কোরআন শিক্ষা দেয়।’ (আবু দাউদ: ১৪৫২) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সহি শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাদের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন সহি শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়, তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। (আবু দাউদ: ১৪৫৮; মুসলিম: ১৮৯৮)

আলেমদের পরামর্শ হলো—প্রতিদিন হাফেজ নন এমন ব্যক্তির এক পারা কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। যেন মাসে এক খতম পূর্ণ হয়ে যায়। আর হাফেজদের তিন পারা তেলাওয়াত করা উচিত। যারা কোরআন না পড়তে পড়তে এমনভাবে ভুলে যায় যে দেখেও পড়তে পারে না। তাদের ব্যাপারে হাদিসে কঠিন শাস্তির কথা এসেছে। তারা কেয়ামতের দিন অঙ্গহানি অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। (আবু দাউদ: ১৪৭৪)


বিজ্ঞাপন


বিশুদ্ধ তেলাওয়াতের পাশাপাশি সুন্দর কণ্ঠে কোরআন পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা সুললিত কণ্ঠে কোরআন শরিফ পড়, কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়।’ (শুআবুল ইমান: ২১৪১)

প্রতিদিন বিভিন্ন সময় কোরআন তেলাওয়াত করতে উৎসাহ দিয়েছেন প্রিয়নবী (স.)। সকালে সুরা ইয়াসিন, আয়াতুল কুরসিসহ বিভিন্ন সুরা তেলাওয়াত করতেন পূর্ববর্তী আলেমরা। জোহরের পর সুরা ফাতহ, আসরের পর সুরা নাবা, মাগরিবের পর বা রাতে সুরা ওয়াকেয়া ও এশার পর সুরা মুলক ও সুরা সাজদাহ পাঠের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে।

আরও পড়ুন: রাতে অতি ফজিলতপূর্ণ তিন জিকির

আয়াতুল কুরসি সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান: ২৩৯৫)
সুরা ফাতহ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুল (স.) ওমর (রা.)-কে বলেন, ‘আজ রাতে আমার ওপর এমন একটি সুরা নাজিল হয়েছে, যা আমার কাছে সূর্যালোকিত সব স্থান থেকে উত্তম। এরপর তিনি সুরা ফাতহের প্রথম আয়াত পাঠ করেন।’ (বুখারি: ৪১৭৭) 
সুরা নাবার ফজিলত সম্পর্কে এক হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা নাবা পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে কেয়ামতের দিন ঠাণ্ডা পানীয় দিয়ে তৃপ্ত করবেন।’ (তাফসিরে কাশশাফ: ৬/৩০৩)

মাগরিবের পর সুরা ওয়াকেয়া সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াকেয়া তেলাওয়াত করবে, তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না’। ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন। (বায়হাকি: শুআবুল ঈমান: ২৪৯৮; মেশকাত পৃ: ১৮৯)

এশার পর সুরা মুলক ও সুরা সাজদাহ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, জাবের (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর রাসুল (স.) সুরা সাজদাহ ও সুরা মুলক তেলাওয়াত করা ছাড়া ঘুমাতেন না।’ (তিরমিজি: ২৮৯২) এছাড়াও রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘কোরআনে এমন একটি সুরা আছে, যার মধ্যে ৩০ আয়াত আছে। আয়াতগুলো পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো ‘তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলকু’ (সুরা মুলক)।’ (তিরমিজি: ২৮৯১)

মূলত কোরআন তেলাওয়াতে প্রতিটি অক্ষরের বিনিময়ে ১০টি করে সওয়াব লাভ হয়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর তেলাওয়াত করল তার বিনিময়ে সে একটি নেকি পাবে, আর একটি নেকির বদলা হবে ১০ গুণ, একথা বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম, একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, মীম একটি অক্ষর।’ (তিরমিজি: ২৯১০)

কোরআন তেলাওয়াত এতই ফজিলতপূর্ণ আমল যে, তেলাওয়াতকারীর ওপর ঈর্ষা করা পর্যন্ত জায়েজ। অর্থাৎ কেউ যদি অন্তরে পোষণ করে যে আমার অমুক ভাই এত সুন্দর করে কোরআন তেলাওয়াত করে আমি পারব না কেন—এরকম ঈর্ষা বৈধ করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দুই ব্যক্তির প্রতি হিংসা করা বৈধ-(১) ওই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন আর সে তা দিনরাত তেলাওয়াত করে আর তার প্রতিবেশী তা শুনে বলে হায়! আমাকেও যদি এভাবে কোরআন মাজিদ শিখানো হত যেমন তাকে শিখানো হয়েছে, তাহলে আমিও এভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতাম, (২) ওই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দিয়েছেন আর সে ওই সম্পদ মহান আল্লাহর পথে ব্যয় করতে থাকে, আর তার প্রতিবেশী তা দেখে বলে হায়! আমাকেও যদি তার মতো সম্পদ দেয়া হত যেমন তাকে দেয়া হয়েছে  তাহলে আমিও তার মতো মহান আল্লাহর পথে ব্যয় করতাম যেমন সে করছে।’ (বুখারি: ৫০২৬)

আরও পড়ুন: জীবনে ৭ অবস্থা আসার আগেই নেক আমলের নির্দেশ

হাদিসে কোরআন তেলাওয়াতকারীদের আল্লাহর পরিজন বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কতক লোক আল্লাহর পরিজন। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তারা কারা? তিনি বলেন, কোরআন তেলাওয়াতকারীগণ আল্লাহর পরিজন এবং তাঁর বিশেষ বান্দা।’ (ইবনে মাজাহ: ২১৫)

হাশরে কোরআন তেলাওয়াতকারীদের বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (স.) বলেছেন, কোরআন কেয়ামত দিবসে হাজির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু! একে (কোরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি এক এক আয়াত পাঠ করতে থাকো এবং ওপরের দিকে উঠতে থাকো। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে।’ (তিরমিজি: ২৯১৫)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (স.) বলেছেন, (কেয়ামতের দিন) কোরআনের বাহককে বলা হবে, পাঠ করতে থাকো এবং উপরে আরোহণ করতে থাকো এবং দুনিয়ায় যেভাবে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে, ঠিক সেইরূপে ধীরেসুস্থে পাঠ করতে থাকো। যে আয়াতে তোমার পাঠ সমাপ্ত হবে সেখানেই তোমার স্থান।’ (তিরমিজি: ২৯১৪)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে প্রতিদিন যত বেশি সম্ভব সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াতের তাওফিক দান করুন। কোরআন অধ্যয়নের তাওফিক দান করুন। কোরআন অনুযায়ী সমাজ গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর