বিবাহিত নারীর জন্য স্বামীর প্রতি আনুগত্য এবং তাঁর হক যথাযথভাবে পালন করা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীত সম্পর্কের স্মৃতি, বিশেষ করে প্রথম স্বামীর কথা মনে পড়া স্বাভাবিক। ইসলাম এ স্মৃতিকে স্বাভাবিক ও অজান্তে ঘটলে গুনাহ বলে গণ্য করে না। তবে বর্তমান স্বামীর অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখা অপরিহার্য।
স্মৃতির স্বাভাবিকতা
মানব মস্তিষ্ক অতীত স্মৃতি ধরে রাখে। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে যা স্বাভাবিক ও অনিচ্ছাকৃত ঘটে, তা পাপ নয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের সেই চিন্তা ও ধারণা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যা অন্তরে স্থান পায় কিন্তু কাজে পরিণত হয়নি।’ (সহিহ বুখারি: ৬৬৬৪)
আরও পড়ুন: খারাপ কল্পনার কারণে গুনাহ লেখা হয়?
২. বর্তমান স্বামীর হক
ইসলামে স্বামীর হক এত গুরুত্বপূর্ণ যে, তা আল্লাহর হক আদায়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। রাসুল (স.) বলেছেন- ‘আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে সেজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সেজদা করতে। সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! স্ত্রী তার স্বামীর প্রাপ্য অধিকার আদায় না করা পর্যন্ত তার প্রভুর প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে সক্ষম হবে না।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৮৫৩)
বিজ্ঞাপন
এই হাদিসটি স্বামীর মর্যাদা ও অধিকারের গুরুত্ব বোঝাতে একটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, প্রকৃত সেজদা নয়।
আরও পড়ুন: পাপ লিখতে ফেরেশতাদের ৬ ঘণ্টা বিলম্ব: এই সুযোগ কাজে লাগানোর ৩ উপায়
স্বামীর হকের মূল দিকসমূহ
- শারীরিক ও মানসিক আনুগত্য
- অর্থ ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার
- গোপনীয়তা রক্ষা
- গৃহস্থালি ও সংসারের সুশৃঙ্খল পরিচালনা
কখন গুনাহ হয় এবং কখন হয় না
যা গুনাহ নয়: স্বাভাবিক স্মৃতি, অতীতের ভালো সময় মনে পড়া, কোনো অনুশোচনা না থাকা। আল্লাহ তাআ লা বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তার উপর অত্যাচার করে না, বরং মানুষ নিজেই নিজের উপর অত্যাচার করে।' (সুরা ইউনুস: ৪৪)
অর্থাৎ, যখন স্মৃতি মানসিক পীড়া বা বর্তমান দায়িত্বে অবহেলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখনই তা ক্ষতির কারণ হয়।
গুনাহ এড়াতে সতর্ক থাকার বিষয়সমূহ: অতীতের জন্য আবেগপ্রবণ হওয়া, বর্তমান স্বামীকে প্রথম স্বামীর সঙ্গে তুলনা করা, প্রথম স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ চেষ্টা করা, বর্তমান স্বামীর হক ক্ষুণ্ণ করা।
আরও পড়ুন: গুনাহগার বান্দা যেভাবে ডাকলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন
জটিল বিষয় ও পরামর্শ
তালাক, পুনর্বিবাহ, বা স্বামীর হক সম্পর্কিত জটিল মাসআলা সমাধানের জন্য স্থানীয় মুফতি বা আলেমের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আল্লাহ বলেন- ‘অতএব তোমরা জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো, যদি তোমরা না জানো।’ (সুরা নাহল: ৪৩)
মানসিক প্রশান্তির জন্য করণীয়
- ইবাদত ও দোয়া: ‘হে আল্লাহ! আমি আমার মনের অশুভ চিন্তা থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’
- বর্তমান কাজে মনোযোগ: স্বামী ও সংসারের দায়িত্বে ব্যস্ত থাকা
- জ্ঞান অর্জন: ইসলামিক বই ও আলেমদের বক্তব্য পড়া
মনে রাখবেন, আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু ও ক্ষমাশীল। তিনি আমাদের মানবিক দুর্বলতাগুলো বুঝেন। গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের প্রচেষ্টা ও নিয়ত—অতীতের দিকে আটকে না থেকে বর্তমানকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলার। হে পরম দয়ালু আল্লাহ! আমাদের মনকে আপনার স্মরণে স্থির রাখুন, অতীত ভুল ক্ষমা করুন এবং বর্তমান দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করার তাওফিক দিন। আমিন।

