মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পাপ লিখতে ফেরেশতাদের ৬ ঘণ্টা বিলম্ব: এই সুযোগ কাজে লাগানোর ৩ উপায়

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০৩:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

পাপ লিখতে ফেরেশতাদের ৬ ঘণ্টা বিলম্ব: এই সুযোগ কাজে লাগানোর ৩ উপায়

আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ রহমত হলো, যখন কোনো মুমিন বান্দা পাপ করে, তখন ফেরেশতারা সেই পাপ তাৎক্ষণিক লিপিবদ্ধ করেন না। হাদিসে এসেছে, ফেরেশতারা প্রায় ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এর কারণ হলো, বান্দা যেন অনুতপ্ত হয়ে তওবা ও ইস্তেগফার করার সুযোগ পায়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় বামের ফেরেশতা (যিনি পাপ লেখেন) ছয় ঘণ্টা কলম তুলে রাখেন মুসলিম বানিনের পাপের ক্ষেত্রে। যদি সে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তাহলে তা লেখা হয় না। আর যদি না চায়, তবে একটি পাপ লেখা হয়।’ (তাবারানি, বায়হাকি; সহিহুল জামে: ২০৯৭)

এই ছয় ঘণ্টার সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা কীভাবে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করতে পারি, নিচে তার তিনটি কার্যকর উপায় আলোচনা করা হলো।


বিজ্ঞাপন


১. দ্রুত ইস্তেগফার ও তওবা করুন

পাপ উপলব্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে অন্তর থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা সবচেয়ে জরুরি। এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো তওবা।

কী করবেন: পাপের অনুশোচনা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই রাকাত নামাজের সাথে এই ইস্তেগফারটি পাঠ করুন:

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ


বিজ্ঞাপন


উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ: আমি সেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব ও চিরন্তন এবং আমি তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি। (আবু দাউদ: ১৫১৭)

কেন জরুরি: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো গুনাহ করে ফেলল, এরপর অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি: ৩০০৬, সহিহ)

আরও পড়ুন: গুনাহ মাফের ২৩ আমল

২. সদকা করে পাপ মোচনের চেষ্টা করুন

পাপের কালিমা দূর করতে দ্রুত কিছু সদকা বা দান করা অত্যন্ত কার্যকর। এতে করে আপনার পাপ মোচনের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টিও লাভ হবে।

কী করবেন: সামর্থ্য অনুযায়ী দ্রুত সদকা দিন—হোক তা সামান্য অর্থ, খাবার, জামাকাপড় অথবা অন্য কোনো উপকারের কাজ। পরিমাণে নয়, আন্তরিকতাই আসল।

কেন জরুরি: রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সদকা গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।’ (মুসনাদ আহমদ: ২২০১৬)। হাদিসে আরও এসেছে, ‘তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচো, যদিও তা খেজুরের টুকরা দিয়েও হয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৪১৭)

৩. নেক আমল বৃদ্ধি করুন

পাপ করার পর অনুশোচনার সঙ্গে কিছু ভালো কাজ করে পাপের প্রভাবকে দুর্বল করা যায়। সৎ কাজের মাধ্যমে অসৎ কাজের প্রভাব দূর হয়ে যায়।

কী করবেন: পাপ হয়ে গেলে দ্রুত কিছু নেক কাজ করুন, যেমন—দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ বা অন্য কোনো সেবামূলক কাজ করা।

আরও পড়ুন: ইস্তেগফার কীভাবে করতে হয়?

কেন জরুরি: আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সৎ কাজগুলো অসৎ কাজগুলোকে দূর করে দেয়।’ (সুরা হুদ: ১১৪)। হাদিসে এসেছে, প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করলে যেমন শরীরে ময়লা থাকে না, তেমনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের কারণে আল্লাহ সকল পাপ নিঃশেষ করে দেন। (সহিহ মুসলিম: ১৪০৮)

সতর্কতা: সুযোগকে অবহেলা করবেন না

ফেরেশতাদের এই ছয় ঘণ্টার বিলম্বকে কখনো পাপ করার অজুহাত হিসেবে নেবেন না। পাপকে ছোট বা তুচ্ছ মনে করা যাবে না। বরং এই সময়টিকে গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য সজাগভাবে ব্যবহার করুন। নিয়মিত ইস্তেগফার ও আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আল্লাহ আমাদের প্রতি যে অগাধ দয়া রেখেছেন, এটি তার এক জীবন্ত প্রমাণ। আসুন, আমরা সবাই এই সুযোগকে কাজে লাগাই। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর