হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম, যার মাধ্যমে একজন মুসলমান তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করিয়ে নতুন জীবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন। তবে কেবল হজ করা যথেষ্ট নয়, বরং হজের পরে সেই ইবাদতের প্রভাব ব্যক্তি জীবনে দেখা না গেলে হজের প্রকৃত উদ্দেশ্য পূর্ণ হয় না। তাই হজের পর প্রত্যেক হাজির জন্য রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল, যা তাকে ধারাবাহিকভাবে দ্বীনদার রাখবে এবং জান্নাতের পথ প্রশস্ত করবে।
১. তাওহিদের দৃঢ়তা ও শিরকমুক্ত জীবন
হজের প্রতিটি রুকন এক আল্লাহর ইবাদত ও একনিষ্ঠতা শেখায়। তাই হজ থেকে ফিরে সর্বপ্রথম কাজ হলো— তাওহিদের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরা এবং শিরকের সব পথ থেকে দূরে থাকা। ইবরাহিম (আ.)-এর ঘোষণা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তুলে ধরে বলেন- ‘আমি সম্পূর্ণ একনিষ্ঠভাবে সেই সত্তার দিকে নিজের মুখ ফেরালাম, যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (সুরা আনআম: ৭৯)
আরও পড়ুন: হজের সামর্থ্য না থাকলে এই ৫টি আমল করুন
২. গুনাহ থেকে বিরত থাকা ও জীবনের মোড় ঘোরানো
যার হজ কবুল হয়, তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। সে আর আগের মতো গুনাহে ফিরে যায় না। এটাই হজের সবচেয়ে বড় চিহ্ন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি হজ করল এবং অশ্লীল কথা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে হজ থেকে ফিরে আসল যেন সে মায়ের গর্ভ থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়েছে।’ (বুখারি: ১৫২১)
বিজ্ঞাপন
৩. নামাজ, কোরআন ও জিকিরে অভ্যস্ত হওয়া
হজ একটি ইবাদতের প্রশিক্ষণকেন্দ্র। সেখান থেকে ফিরে এসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়া, কোরআন তেলাওয়াত এবং আল্লাহর জিকিরে মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন- ‘নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত: ৪৫)
৪. নামের সঙ্গে ‘হাজি’ বিশেষণ জুড়ে না দেওয়া
হজ কোনো পদবি বা পরিচয় নয়; এটি ইবাদত ও আত্মশুদ্ধির নাম। অনেকে হজশেষে নামের আগে ‘আলহাজ বা হাজি’ শব্দ জুড়ে দেন। এটি অহংকারের প্রকাশ হতে পারে। রাসুল (স.)এর উপদেশ হলো- ‘যে ব্যক্তি বিনয় অবলম্বন করে, আল্লাহ তাকে উঁচু মর্যাদা দান করেন।’ (মুসলিম: ২৫৮৮)
আরও পড়ুন: প্রথম ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন ৩৬৯ হাজি
৫. ভ্রাতৃত্ববোধ ও মুসলিম ঐক্যে সচেতন থাকা
হজের সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য। হজ শেষে উম্মাহর ঐক্য রক্ষা ও মতানৈক্য থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)
৬. হজের স্মৃতি হৃদয়ে ধারণ করে কৃতজ্ঞ থাকা
হজ একটি দাওয়াত, আল্লাহ যাকে ডাকেন তিনিই সেখানে যেতে সক্ষম হন। তাই কৃতজ্ঞ চিত্তে জীবনের প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা উচিত। আর তাদের চাওয়াগুলো আল্লাহ পূরণ করে দেন। রাসুল (স.) বলেন, ‘হজ ও ওমরা পালনকারীরা আল্লাহর অতিথি। আল্লাহ তাঁদের দোয়া কবুল করেন।’ (ইবনে মাজাহ: ২৮৯৩)
৭. হজ করার পর জীবনের লক্ষ্য বদলাতে হবে
হজ শুধু নামের ইবাদত নয়, এটি চরিত্র, আচরণ ও জীবনধারায় আমূল পরিবর্তনের দাওয়াত। হজে গিয়ে বদলায়নি—এমন ব্যক্তি হজের আত্মা ধরতে পারেননি। হজ করে এসে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য, মানুষকে ভালোবাসা, দ্বীনি কাজকে প্রাধান্য দেওয়া, হালাল-হারাম মেনে চলা ও হক আদায়ের প্রবল আগ্রহ জন্ম নেওয়া উচিত।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।