বর্তমানে সৌন্দর্যচর্চার একটি বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট। অনেকেই জানতে চান, ইসলামের দৃষ্টিতে এটি বৈধ কি না, হারাম কি না। এ বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহ ও ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্য থেকে উঠে এসেছে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও শর্তসাপেক্ষ মতামত।
অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ
ইসলাম শরীর ও সৌন্দর্যে অহেতুক হস্তক্ষেপকে শয়তানি কর্মকাণ্ড বলে আখ্যায়িত করেছে। এটি আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করার শামিল। যেমন— বয়সের বলিরেখা দূর করার জন্য সার্জারি, চামড়ার রঙ বদলে ফেলা, এবং মাথায় পরচুলা লাগানো ইত্যাদি।
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন সেই নারীর ওপর, যে চুল লাগিয়ে দেয় এবং যে লাগাতে চায়।’ (সহিহ বুখারি: ৫৯৩৭)

বিজ্ঞাপন
হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট কখন জায়েজ?
ইসলামিক স্কলারদের মতে, যদি নিজের শরীর থেকেই চুল নিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়, এবং এটি দ্বারা টাক দূর হয়, তাহলে তা জায়েজ। কারণ এটি চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের মতোই বৈধ।
ফুকাহায়ে কেরাম হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট জায়েজ হওয়ার তিনটি শর্ত উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো- এটি যদি নিজের চুল দিয়ে করা হয়, যদি চুল গজানোর চিকিৎসা হিসেবে করা হয় এবং যদি কোনো প্রতারণা বা সাজসজ্জার উদ্দেশ্যে না হয়।
কৃত্রিম বা অন্যের চুল ব্যবহার করলে?
অন্যের চুল দিয়ে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানো কিংবা কৃত্রিম চুল স্থায়ীভাবে মাথায় বসানো ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ। এটি মানুষের চুল ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রতারণা ও আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করার শামিল।
তবে, ‘পশম বা কৃত্রিম জিনিস দিয়ে তৈরি পরচুলা ব্যবহারে সমস্যা নেই।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২৫৭৪৩)

আরও পড়ুন: ১০ ব্যক্তির ওপর নবীজির অভিশাপ
ট্রান্সপ্ল্যান্টের পর অজু ও গোসলের বিধান
পরচুলা বা নকল চুল লাগানো হলে অজু ও গোসলের সময় সতর্ক থাকতে হয়, কারণ এতে পানি চুলের গোড়ায় না পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকে। তবে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হলে সেটি মাথার অংশে পরিণত হয়, এতে অজু বা গোসলের বাধা থাকে না।
শেষ কথা, নিজের চুল ব্যবহার করে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানো হালাল। অন্যের বা কৃত্রিম চুল ব্যবহার করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হারাম। শরিয়তের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যচর্চা যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতারণা না হয় বা অহংকারের মাধ্যমে না হয়, তা সীমার মধ্যে বৈধ থাকতে পারে।
(তথ্যসূত্র: সহিহ বুখারি: ৫৯৩৩, ৫৯৩৭; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ২৫৭৪৩; সুনানে আবু দাউদ: ৪১৬৮; কিতাবুন নাওয়াজেল: ১৬/২৩১-২৩২; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৭২; বাজলুল মাজহুদ: ১৭/৫৮)

