শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

১০ ব্যক্তির ওপর নবীজির অভিশাপ

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০২২, ০৫:৩২ পিএম

শেয়ার করুন:

১০ ব্যক্তির ওপর নবীজির অভিশাপ

আল্লাহ তাআলার আদেশ না মানা এবং নিষেধ থেকে নিজেকে বিরত না রাখাই মূলত গুনাহ। সব গুনাহই ঘৃণিত। কেননা এর মাধ্যমে মহান স্রষ্টার অবাধ্য হওয়া ছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্রে। এর মধ্যে আবার কিছু পাপ এমন, যেগুলোর সঙ্গে জড়িতদের অভিশাপ দিয়েছেন মহানবী (স.)। নিচে তেমনই ১০টি পাপের কথা উল্লেখ করা হলো।

১) শরীরে উল্কি অঙ্কনকারী
আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক সেসব নারীর ওপর, যারা শরীরে উল্কি অঙ্কন করে এবং যারা অঙ্কন করায়, আর সেসব নারীর ওপর, যারা চুল, ভ্রু তুলে ফেলে এবং সেসব নারীর ওপর, যারা সৌন্দর্যের জন্য সম্মুখের দাঁত কেটে সরু করে, দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করে, যা আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি কেন তার ওপর অভিশাপ করব না, যাকে নবী (স.) অভিশাপ করেছেন? আর আল্লাহর কিতাবে আছে, ‘রাসুল (স.) তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ করো।’ [সুরা হাশর: ৭ (বুখারি: ৫৯৩১)]


বিজ্ঞাপন


২) চোর
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবী (স.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, চোরের ওপর আল্লাহর লানত হোক, যখন সে একটি হেলমেটও চুরি করে এবং এজন্য তার হাত কাটা হয় এবং সে একটি রশি চুরি করে এজন্য তার হাত কাটা হয়। (বুখারি: ৬৭৮৩)

৩) অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখায় যে
অন্যায়ভাবে বা দুষ্টুমি করে কারো দিকে ধারালো অস্ত্র তাক করে ভয় দেখানো ইসলামে নিষিদ্ধ। যারা এ কাজে লিপ্ত আল্লাহর রাসুল (স.) তাদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। তাবেঈন ইবনে সিরিন (রহ.) বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বলতে শুনেছি, নবীজি (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রতি (লৌহ নির্মিত) মারণাস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করে সে তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত ফেরেশতারা তাকে অভিসম্পাত করতে থাকে যদিও সে তার আপন ভাই হয়। (মুসলিম: ৬৫৬০)

৪) নারী-পুরুষ অভিন্ন পোশাক পরিধানকারী
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) অভিসম্পাত করেছেন ওই সব পুরুষকে, যারা নারীর অনুরূপ পোশাক পরে এবং ওই সব নারীকে, যারা পুরুষের অনুরূপ পোশাক পরিধান করে। (আবু দাউদ: ৪০৯৮)

আরও পড়ুন: যে নামাজে জীবনের গুনাহ মাফ


বিজ্ঞাপন


৫) মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই
আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, মদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ১০ শ্রেণির লোককে রাসুলুল্লাহ (স.) অভিসম্পাত করেছেন। এরা হলো, মদ তৈরিকারী, মদের ফরমাশকারী, মদ পানকারী, মদ বহনকারী, যার জন্য মদ বহন করা হয়, মদ পরিবেশনকারী, মদ বিক্রেতা, এর মূল্য ভোগকারী, মদ ক্রেতা এবং যার জন্য মদ ক্রয় করা হয়। (তিরমিজি: ১২৯৫)

৬) সুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই
যারা সুদ কারবারির সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের প্রত্যেকের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (স.)-এর অভিশাপের ঘোষণা এসেছে। সাহাবি জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) লানত করেছেন সুদখোরের ওপর, সুদদাতার ওপর, এর লেখকের ওপর ও তার সাক্ষী দুজনের ওপর এবং বলেছেন এরা সবাই সমান। (মুসলিম: ৩৯৮৫)

৭) তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিয়ে 
আমিরুল মুমিনিন আলি (রা.) বলেন, নবী (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিবাহ করে, সে এবং যে স্বামী তালাক দেওয়ার পর পুনরায় গ্রহণের ইচ্ছায় তাকে অন্যের কাছে বিবাহ দিয়ে তার জন্য হালাল করে নেয়, তারা উভয়ে অভিশপ্ত। (আবু দাউদ: ২০৭৬)

আরও পড়ুন: ছোট শিরক সবচেয়ে ভয়ঙ্কর

৮) যে স্ত্রী স্বামীর বিছানায় সাড়া দেয় না
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, কোনো লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে কোনো ওজর ছাড়া তা অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর ওপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশতারা এমন স্ত্রীর ওপর সকাল পর্যন্ত লানত দিতে থাকে। (বুখারি: ৩২৩৭)

৯) মা-বাবাকে লানত করে যে
আবু তুফায়ল আমির ইবনে ওয়াসিলাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলি ইবনে আবি তালিব (রা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তাঁর কাছে এসে বলল, নবী (স.) আপনাকে আড়ালে কী বলেছিলেন? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বলেন, নবী (স.) লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল হে আমিরুল মুমিনিন, সে চারটি কথা কী? তিনি বলেন, ১) যে লোক তার মাতা-পিতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২) যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে পশু জবাই করে আল্লাহ তার ওপরও অভিসম্পাত করেন, ৩) ওই ব্যক্তির ওপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোনো বিদআতি লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪) যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার ওপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (মুসলিম: ৫০১৮)

১০) পবিত্র মদিনায় পাপ কাজ করা
তাবেঈন আসিম (রহ.) থেকে বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ (স.) কি মদিনাকে হারাম করেছেন? তিনি বলেন, হ্যাঁ, এখান থেকে ওখানের মধ্যবর্তী স্থান। অতএব যে ব্যক্তি এখানে কোনো পাপ করে, তিনি পুনরায় আমাকে বলেন, তা খুবই ভয়ঙ্কর ব্যাপার যে এখানে কোনো পাপ করে তার ওপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সমগ্র মানব জাতির লানত। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাঁর ফরজ অথবা নফল কোনো ইবাদত কবুল করবেন না। বর্ণনাকারী আসিম (রহ.) বলেন, আনাস (রা.)-এর পুত্র বলেন, ‘অথবা যে কোনো পাপীকে আশ্রয় দিল’। (মুসলিম: ৩২১৪)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অভিশপ্ত এসব পাপ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর