রমি শব্দের অর্থ ছোড়া বা নিক্ষেপ করা। মিনায় শয়তানকে পাথর মারাকে রমি বলে। যথাসময়ে রমি করা ওয়াজিব। হজরত ইবরাহিম (আ.) যখন শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন শয়তান কুমন্ত্রণা দিচ্ছিল যেন কোরবানি বাধাগ্রস্ত হয়। তখন ইবরাহিম (আ.) তিন স্থানে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করে বিতাড়ন করেছিলেন। স্মৃতিবিজড়িত সেই ঘটনাকে চিরজাগ্রত রাখার জন্য রমি বা কঙ্কর নিক্ষেপকে হজের বিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
যে তিন স্থানে ইবলিস তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সেই তিন স্থান নিশানার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করে রাখা আছে। যেগুলোকে জামারাহ বলে। জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ তিন জামারায় সর্বমোট (৭+২১+২১) ৪৯টি পাথর নিক্ষেপ করতে হয় হাজিদের।
বিজ্ঞাপন
নারী হোক বা পুরুষ, নিজের রমি নিজেই করবে। সামর্থ্য থাকলে অন্যকে দিয়ে পাথর মারা জায়েজ নয়। এতে কংকর মারার হক আদায় হবে না। এক্ষেত্রে পুনরায় কংকর মারা ওয়াজিব। না মারলে দম ওয়াজিব হবে। (ইবনে আবি শায়বা: ১৫৩৯৪; মানাসিক: ২৪৭; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃ. ১৮৭)
আরও পড়ুন: হজের বিশেষ স্থান ও পরিভাষা পরিচিতি
প্রচণ্ড ভীড়ের কারণে কিংবা অন্যকোনো শরয়ি ওজরে অন্যকে দিয়ে রমি করানো যায়। শরয়ি ওজর হলো- এমন অসুস্থতা বা দুর্বলতা যার কারণে বসে নামাজ পড়া জায়েজ। যেমন অসুস্থতার কারণে জামারাত পর্যন্ত পেঁছা খুবই কষ্টকর হলে কিংবা রোগ অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে অন্যকে দিয়ে রমি করাতে পারবে। (আহকামে হজ: ৭৬-৭৭)
যার পরিবর্তে রমি করবেন, তার অনুমতি জরুরি। অনুমতি ছাড়া রমি গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে, অচেতন, পাগল ও ছোট বাচ্চার অনুমতি ছাড়াই তাদের পক্ষ থেকে অভিভাবক রমি করে দিতে পারবে। (আহকামে হজ: ৭৭)
বিজ্ঞাপন
কারো পরিবর্তে রমি করলে আগে নিজের রমি শেষ করা উত্তম। একটি কংকর নিজের পক্ষ থেকে আরেকটি অন্যের পক্ষ থেকে এভাবে মারা মাকরুহ। তাই আগে নিজের সাত কংকর মারবে এরপর বদলি আদায় করবে। (আহকামে হজ: ৭৭) ঋতুবর্তী নারীরা রমি করতে পারবে। (সহিহ বুখারি: ১/২২৩)
কঙ্কর নিক্ষেপের সময় ধীরস্থিরতা বজায় রাখা জরুরি, যাতে আল্লাহর নিদর্শনের অসম্মান না হয়। রাগ-আক্রোশ নিয়ে জুতো কিংবা বড় পাথর নিক্ষেপ করা কখনো উচিৎ নয়; বরং এটি মারাত্মক ভুল। জামরাতে শয়তান বাঁধা আছে বলে কেউ কেউ ধারণা করেন, তা ঠিক নয়। জামরার স্তম্ভগুলো শুধুমাত্র স্থানের নির্দেশক; শয়তান বা শয়তানের চিহ্ন নয়। তাই এগুলোকে পাথর মেরে ঘায়েল করতে হবে না। বরং সেখানে ঘিরে রাখা বেসিনের মতো জায়গাটির মধ্যে পাথর মারলেই আমলটি পালন হয়ে যাবে।

