হজ ও ওমরা করার জন্য ইহরাম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রথম রুকন। ইহরাম বাঁধা ফরজ। ইহরাম (اَلْاِحْرَامُ) শব্দটি হারাম (حَرَامٌ) শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো কোনো বিষয়কে নিজের ওপর হারাম বা নিষিদ্ধ করে নেওয়া। ইহরামের মাধ্যমে নিজের ওপর স্ত্রী সহবাস, মাথার চুল, হাতের নখ, গোঁফ, বগল ও নাভির নিচের ক্ষৌর কর্যাদি, সুগন্ধি ব্যবহার, সেলাই করা পোশাক পরিধান এবং শিকার করাসহ কিছু বিষয়কে হারাম করে নেওয়া হয়। ইহরাম বাঁধার জন্য পুরুষ সেলাইবিহীন দুই টুকরো সাদা কাপড় আর নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যময় শালীন পোশাক পরিধান করবেন।
মক্কায় প্রবেশের জন্য নির্ধারিত স্থান অতিক্রম করার আগে ইহরাম বাঁধা জরুরি। ওই নির্ধারিত স্থানগুলোকে বলা হয় মিকাত। বিশ্বের যে প্রান্ত থেকেই মানুষ হজ বা ওমরা করতে আসুক, তাদেরকে যাত্রাপথে ওই মিকাতগুলো অতিক্রমের আগে ইহরাম বাঁধতে হয়।
বিজ্ঞাপন
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী (স.) মদিনাবাসীদের জন্য জুল—হুলাইফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহ্ফা, নাজদবাসীদের জন্য কারনুল মানাজিল ও ইয়ামেনবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম মিকাত নির্ধারণ করেছেন। উক্ত মিকাতসমূহ হজ ও ওমরার উদ্দেশে আগমনকারী সে স্থানের অধিবাসীদের জন্য এবং অন্যকোনো অঞ্চলের লোক ওই সীমানা দিয়ে অতিক্রমকারীদের জন্যও। এছাড়াও যারা মিকাতের ভেতরের অধিবাসী তারা যেখান থেকে সফর শুরু করবে সেখান থেকেই (ইহরাম বাঁধবে) এমন কি মক্কাবাসীরা মক্কা থেকেই।’ (সহিহ বুখারি: ১৫৩০)
আরও পড়ুন: ইহরাম অবস্থায় নারীরা যে ভুলটি বেশি করেন
মিকাত অতিক্রমের আগে ইহরাম না বাঁধলে ওমরা আদায় হবে না। বাসা থেকে ইহরাম বাঁধেন বা বিমানে ওঠার আগে বাঁধেন, তাতে সমস্যা নেই; মিকাত পার না হলেই হলো। এমনকি বিমানেও ইহরাম বাঁধতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে আকশপথে ভুলে যেন ইহরাম বাঁধা ছাড়া মিকাত অতিক্রম না করেন।
কেউ যদি কোনো কারণে মিকাত অতিক্রমের আগে ইহরাম বাঁধতে না পারেন তিনি মিকাতের ভেতরে গিয়েও ইহরাম বাঁধতে পারবেন। তবে বিনা ইহরামে মিকাত অতিক্রম করার কারণে তার উপর দম ওয়াজিব হবে। অবশ্য যদি পুনরায় মিকাতে গিয়ে ইহরাম বাঁধেন, তাহলে ইহরাম ছাড়া মিকাত অতিক্রমের ভুলের কারণে দম দিতে হবে না। কিন্তু মিকাত অতিক্রম করার পর ইহরাম বাঁধার জন্য পুনরায় মিকাতে যেতে কোনো কারণে অক্ষম হলে দম রহিত হবে না।
বিজ্ঞাপন
উল্লেখ্য, শুধুমাত্র চাকরি, ব্যবসা, চিকিৎসা, পড়াশোনা, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়ানো বা অন্যকোনো কারণে মক্কা শরিফ প্রবেশ করলে ইহরাম বাঁধা জরুরি নয়।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৮/৪০৩; আলবাহরুল আমিক: ১/৬১৮; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৫৭৯-৫৮০; আলবাহরুর রায়েক: ৩/৪৮; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২৫৩)

