রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হজরত ইবরাহিমের যে প্রশ্ন শুনে বাদশাহ লা-জওয়াব

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০৪:০৬ পিএম

শেয়ার করুন:

হজরত ইবরাহিমের যে প্রশ্ন শুনে বাদশাহ লা-জওয়াব

পবিত্র কোরআনে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও এক অত্যাচারী বাদশাহর বিতর্কের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। যেখানে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়ে পড়ে কাফির বাদশাহ।

মুফাসসির ও বিশিষ্ট আলেমদের মতে, ওই শাসক ছিল ব্যাবিলনের বাদশাহ নমরুদ। বংশ পরম্পরা- নমরুদ ইবনে কিনআন ইবনে কাওশ ইবনে সাম ইবনে নূহ। মুজাহিদ (রহ) প্রমুখ বলেন, সে ছিল সারা পৃথিবী শাসন করা বাদশাহদের একজন। ঐতিহাসিকদের মতে, পৃথিবীতে এমন বাদশাহর সংখ্যা মোট চার। ২জন কাফির, বাকি ২ জন মুমিন। মুমিনরা হলেন হজরত জুলকারনাইন ও হজরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম। আর কাফির দুজনের নাম নমরুদ ও বুখত নাসার। মুফাসসিরদের মতে, নমরুদ চারশ বছর পর্যন্ত তার রাজত্ব চালিয়েছিল।


বিজ্ঞাপন


হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন নমরুদকে লা-শরিক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দিলেন, তখন নমরুদের অহংকার ও মূর্খতা আল্লাহ তাআলাকে অস্বীকার করতে উদ্বুদধ করে এবং নিজেকে খোদা বলে দাবি করে। তখন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম খোদার আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন, আমার পালনকর্তা তো তিনি, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তখন নমরুদ বলল, আমিও জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই।

আরও পড়ুন: নবীগণ যে ৬ বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছেন

নমরুদ তার কথার প্রমাণস্বরূপ জেলখানা থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’ব্যক্তিকে ডেকে এনে একজনকে হত্যা ও অন্যজনকে ক্ষমা ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে সে বুঝাতে চেয়েছে যে, জীবন-মৃত্যু তার হাতে। অথচ নমরুদের এই পন্থাটি ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কথার সঠিক উত্তর ছিল না। বরং এর মাধ্যমে তার মুর্খতাই প্রকাশ পেয়েছে। কারণ, ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কথার মূলতত্ত্ব ছিল- সবকিছুর একজন পরিচালক রয়েছেন। স্রষ্টাকে তো তলোয়ার ধরে জবাই করে মৃত্যু দিতে হয় না। কিন্তু তাঁর পরিচালনায় জন্ম-মৃত্যু সবকিছু সংঘটিত হয়।

আরও পড়ুন: নবী-রাসুলদের কার কী পেশা ছিল


বিজ্ঞাপন


একজনকে ক্ষমা ও অপরজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মাধ্যমে নমরুদ নিজেকে জীবন-মৃত্যুর ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করলে সঙ্গে সঙ্গে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বললেন, ‘তুমি যদি সত্যিই নিজেকে রব হিসেবে দাবি করো তবে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যকে উদিত করে দেখাও। নমরুদ নিজেকে সূর্যের অবতার মনে করত। সূর্যকে দেবতা মানার এ ভ্রান্ত আকিদার মূলে কুঠারাঘাত করতেই তিনি নমরুদকে বললেন, ‘আমি যার দিকে মানুষকে আহ্বান করি তিনি পূর্ব দিক থেকে সূর্য উদিত করেন। তুমি নিজেকে রব ও সূর্যদেবীর অবতার মনে করলে পশ্চিম দিক থেকে সূর্যকে একবারের জন্য হলেও উদিত করে দেখাও। 

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের এ দাবিতে নমরুদের আওয়াজ বন্ধ হয়ে যায়। তা করে দেখানো দূরের কথা প্রশ্ন শুনেই নমরুদ নির্বাক ও হতভম্ব। এই কথার জওয়াব দেওয়ার মতো কোনো যুক্তি তার কাছে রইল না। (কাসাসুল আম্বিয়া, ইবনে কাসীর)

এ ঘটনা কুরআনে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে—

اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡ حَآجَّ اِبۡرٰهٖمَ فِیۡ رَبِّهٖۤ اَنۡ اٰتٰىهُ اللّٰهُ الۡمُلۡکَ ۘ اِذۡ قَالَ اِبۡرٰهٖمُ رَبِّیَ الَّذِیۡ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ ۙ قَالَ اَنَا اُحۡیٖ وَ اُمِیۡتُ

“তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখনি, যে ইবরাহীমের সঙ্গে তার রবের ব্যাপারে বিতর্ক করেছে যে, আল্লাহ তাকে রাজত্ব দিয়েছেন? যখন ইবরাহীম বলল, ‘আমার রব তিনিই’ যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমিই জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটাই।” (সূরা বাকারা ২৫৮ আয়াতের প্রথম অংশ)

আয়াতের পরের অংশে বলা হয়েছে—

قَالَ اِبۡرٰهٖمُ فَاِنَّ اللّٰهَ یَاۡتِیۡ بِالشَّمۡسِ مِنَ الۡمَشۡرِقِ فَاۡتِ بِهَا مِنَ الۡمَغۡرِبِ فَبُهِتَ الَّذِیۡ کَفَرَ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ

“ইবরাহীম বলল, নিশ্চয় আল্লাহ পূর্বদিক থেকে সূর্য উঠান। অতএব তুমি তা পশ্চিম দিক থেকে আনো। তখন কাফের হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়াত দেন না।” (সূরা বাকারা ২৫৮ আয়াতের শেষ অংশ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানি চেতনা বৃদ্ধিতে নবী-রাসুলদের ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর