বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

সফরে রোজা রাখার বিধান

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৭:২৮ পিএম

শেয়ার করুন:

সফরে রোজা রাখার বিধান

রোজা বা সিয়াম ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। প্রত্যেক সক্ষম মুসলিমের ওপর রোজা ফরজ। কিন্তু মুসাফির ও অসুস্থদের জন্য রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। এমনকি সক্ষমতা থাকলেও একজন মুসাফির চাইলে রোজা না রাখতে পারবেন।

সফরে রোজার বিধান
ভ্রমণকালীন সময় বা সফর অবস্থায় রোজা না রাখার অবকাশ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা সফরের রোজা প্রসঙ্গে ইরশাদ করেন- فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ‘অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ অথবা সফরে থাকবে সে অন্য সময় পূরণ করে নেবে।’ (সুরা বাকারা: ১৮৪)


বিজ্ঞাপন


সক্ষমতা থাকলেও মুসাফিরের রোজা না রাখাতে গুনাহ নেই
সফর কষ্টদায়ক হোক বা আরামদায়ক হোক তাতে হুকুমের পরিবর্তন হবে না। তাই সক্ষমতা থাকলেও সফর অবস্থায় কেউ রোজা না রাখলে গুনাহ হবে না। হজরত হামজা ইবনে আমর আল আসলামি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- হে আল্লাহর রাসুল, সফর অবস্থায় আমার সিয়াম পালনের ক্ষমতা রয়েছে। এ সময় সিয়াম পালন করলে আমার কোনো গুনাহ হবে কি? তিনি বললেন-  هِىَ رُخْصَةٌ مِنَ اللَّهِ فَمَنْ أَخَذَ بِهَا فَحَسَنٌ وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصُومَ فَلاَ جُنَاحَ عَلَيْهِ ‘এটা আল্লাহর পক্ষ হতে এক বিশেষ অবকাশ, যে তা গ্রহণ করবে, তা তার জন্য উত্তম। আর যদি কেউ সিয়াম পালন করতে চায়, তবে তার কোনো গুনাহ হবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫১৯)

আরও পড়ুন: যেসব কারণে রোজা ভাঙলে কাফফারা দিতে হয় না

সফরে আল্লাহর দেওয়া সুযোগ গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى رُخَصُهُ كَمَا يُحِبُّ أَنْ تُؤْتَى مَعْصِيَتُهُ ‘আল্লাহ তাআলা তাঁর অবকাশ দেয়া কাজগুলো কার্যকরী হওয়া পছন্দ করেন। যেমন তিনি তাঁর অবাধ্যতাকে অপছন্দ করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৫৮৬৬)

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসুল (স.) এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এর কী হয়েছে? তারা বলল, সে রোজাদার। আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন- لَيْسَ مِنَ الْبِرِّ الصِّياَمُ في السَّفَرِ ‘সফরে সওম পালন কোনো নেকির কাজ নয়।’ (বুখারি: ১৯৪৬)


বিজ্ঞাপন


সক্ষমতা থাকলে সফরে রোজা রাখা যাবে
তবে, সফরে থাকা অবস্থায়ও রোজা পালন করা যাবে। সেক্ষেত্রে বেশি কষ্ট হলে বা ইচ্ছা করলে তিনি রোজা ছাড়তেও পারবেন। এই রোজা পরে সুবিধামতো নিকটতম সময়ে কাজা আদায় করে নেবেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) রমজান মাসে মদিনা থেকে (মক্কা অভিযানে) রওনা হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১০ হাজার সাহাবি। তখন হিজরত করে চলে আসার সাড়ে আট বছর পার হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলমানরা রোজা অবস্থায় মক্কা অভিমুখে রওনা হন। অবশেষে তিনি যখন উসফান ও কুদাইদ স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদিদ নামক জায়গায় ঝরনার কাছে পৌঁছলেন তখন তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলমানরা ইফতার করেন। (বুখারি: ৪২৭৬)

আরও পড়ুন: জীবনে ছেড়ে দেওয়া নামাজ ও রোজা কীভাবে আদায় করবেন

সফর অবস্থায় কেউ রোজা রাখলে ভেঙে ফেলা গুনাহ
হানাফি মাজহাব মতে, সফর অবস্থায় কেউ আল্লাহর দেওয়া ছাড় গ্রহণ না করে রোজা শুরু করে দিলে বিনা ওজরে রোজা ভেঙে ফেলা জায়েজ নয়; বরং ওই রোজা পুর্ণ করা তার উপর জরুরি হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও কেউ যদি এ রোজা ভেঙ্গে ফেলে গুনাহগার হবেন। তবে এর কারণে তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না; শুধু কাজা করে নিলেই চলবে। একইভাবে যে ব্যক্তি মুকিম (স্থায়ী বাসিন্দা) অবস্থায় সাহরি খেয়ে সফর শুরু করেছেন, তাঁর জন্য সফরের অজুহাতে রোজা ভাঙা জায়েজ নয়। ভাঙলে গুনাহগার হবেন, তবে শুধু রোজার কাজা ওয়াজিব হবে।

(মুসনাদে আবু হানিফা: ১০৯-১১০; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২/৪৩২; কিতাবুল আছল: ২/২০৬; ফাতহুল কাদির: ২/২৮৪; সহিহ বুখারি: ১/২৬১; সহিহ মুসলিম: ১/৩৫৫-৩৫৬; আলবাহরুর রায়েক: ২/৫০৬; তাবয়িনুল হাকায়েক: ১/৩৪০; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২০৬)

উল্লেখ্য, সফরে রোজা না রাখা বৈধ হওয়ার শর্ত হলো- সফর পরিমাণ দূরত্ব হতে হবে। শরয়ি সফরের দূরত্ব হলো ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর