জনপ্রিয় ইসলামি আলোচক ও গবেষক ড. মিজানুর রহমান আজহারীর লেখা ‘এক নজরে কুরআন’ নিয়ে কিছুদিন থেকে ফেসবুকে নানারকম আলাপ চলছে। ইউজারদের কেউ কেউ বলছেন, আজহারীর লেখা বইটি বিদেশি বই থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। আবার কেউ বলছেন, এটা একটা টিমওয়ার্ক, একক ব্যক্তির নয়।
এরকম বিভিন্ন কথার উত্তর পাওয়া গেলো আজহারীর পোস্টে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেসবুক পেজের এক স্ট্যাটাসে আজহারী বলেন, আসলে কুরআন সংক্রান্ত যেকোনো কাজে, নিজে আগবাড়িয়ে মতামত দেবার চেয়ে বিজ্ঞ আলেমদেরকে অনুসরণ করাটাই তুলনামূলক নিরাপদ। এই মূলনীতিটি সামনে রেখেই এক নজরে কুরআন বইটি সাজিয়েছি। এক্ষেত্রে দুটো ধারাকে একসাথে নিয়ে এসেছি। একটি হলো তুরাসি ধারা। অর্থাৎ কন্টেন্টের দিক থেকে আমরা প্রাচীন তাফসির গ্রন্থগুলো সামনে রেখেছি। আরেকটি হচ্ছে আধুনিক ইনফোগ্রাফিক স্টাইল। অর্থাৎ, ডিজাইন ও উপস্থাপনার ক্ষেত্রে আমরা আধুনিক বইগুলো সামনে রেখেছি। আরবি ও ইংরেজি ভাষায় এরকম ইনফোগ্রাফিক কাজগুলো বেশ জনপ্রিয় ও সহজপাঠ্য।
বিজ্ঞাপন
আজহারী আরও বলেন, ‘এক নজরে কুরআন’ রচনার জার্নিটা বেশ লম্বা। দেশে কিংবা প্রবাসে, তাফসির করতে গিয়ে আমাকে শত শত পৃষ্ঠা নোটস নিতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আল আযহার কিংবা মালয়শিয়াতে অধ্যয়নকালীন কুরআন সংশ্লিষ্ট অসংখ্য আধুনিক গ্রন্থের সাথে পরিচিত হয়েছি। তাছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর বিভিন্ন লাইব্রেরিতেও যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। সেখানে নানান বিষয়ের ওপর চমৎকার চমৎকার ইনফোগ্রাফিক বই দেখেছি। সেসব অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে, কুরআন রিলেটেড সহজে বোঝা ও মনে রাখা যায় এরকম একটি ইনফোগ্রাফিক কাজ বাংলাভাষী পাঠকদের জন্য আনা গেলে ভালোই হয়। এভাবেই ‘এক নজরে কুরআন’ গ্রন্থটি নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া।
আরও পড়ুন: আজহারির ‘এক-নজরে কুরআন’ পাওয়া যাবে বইমেলায়
আধুনিক যেসব কাজ সামনে রেখে বইটি রচনা করা হয়েছে, তার একটা তালিকা দিয়েছেন আজহারী। তালিকায় দেখা গেছে, তিনি বেশ কিছু বিদেশি বইয়ের সহায়তা নিয়েছেন। সেগুলো হলো- ১. বিতাক্বতু সুওয়ারিল কুরআন (بطاقات سور القرآن) ২. বিতাক্বতুত তা’রীফি বি-সুওয়ারিল মুসহাফিশ শরিফ (بطاقات التعريف بسور المصحف الشريف) ৩. মাআলিমুস সুওয়ার (معالم السور) ৪. Know Your Quran by Alimah Nadia Sadiq ৫. Quranic Diagrammatic Overview by Masood Khan
উল্লেখিত বইগুলো সম্পর্কে আজহারি লেখেন, প্রতিটি বইয়েরই কিছু না কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। তারমধ্যে বিতাক্বতুত তা’রীফি বি-সুওয়ারিল মুসহাফিশ শরিফ- বইটি অসাধারণ। মাআলিমুস সুওয়ার বইটিও চমৎকার, তবে বইটির তথ্যের চেয়ে ডিজাইনটা বেশি সুন্দর ছিল। এসব বইয়ের ফিচারগুলো থেকে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছি।
বিজ্ঞাপন
আজহারী বলেন, শুরু থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল, ‘এক নজরে কুরআন’ বইটিতে আমি একটা লিটারেচার রিভিউ যুক্ত করব। সেখানে বইটি গ্রন্থনা করবার পুরো জার্নিটা স্বল্পকথায় লেখা থাকবে। কোন কোন বই থেকে আমি আইডিয়া নিয়েছি, সেসব বইয়ের কোথায় কোথায় গ্যাপ রয়ে গেছে, অন্যদের থেকে আমার বইটি কোথায় ব্যতিক্রম, ভবিষ্যতে এরকম আরও কী কী কাজ হতে পারে- এ ধরনের একটি লিটারেরি রিভিউ আমার বইতে যুক্ত করবো। আমি সে-কথা আমার প্রকাশনীকে জানিয়েও ছিলাম।
‘প্রকাশনী থেকে বলা হলো, এরকমটা হতে পারে। তবে এটা যেহেতু কোনো থিসিস পেপার না, সেই বিবেচনায় এরকম কিছু যুক্ত না করলেও চলে। তো তখন আমি আর এ বিষয়ে কিছু বলিনি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, ব্যাপারটি উল্লেখ করে দিলে ভালো হবে। আরবি ও ইংরেজি-জানা পাঠকগণ এরকম আরও কিছু কিতাব থেকে উপকৃত হবার সুযোগ পাবেন। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণেই লিটারেচার রিভিউ ও ভূমিকা অংশে আমার জার্নিটার কথা উল্লেখ থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
আরও পড়ুন: মবোক্রেসি প্রসঙ্গে আজহারী বললেন এখনই থেমে যাওয়া উচিত
‘বইটি পাঠকরা এখনো হাতে পাননি। মোড়ক উন্মোচনে যেগুলো আনা হয়েছিল, সেগুলো ছিল অল্পকিছু সিগনেচার কপি। আশা করি ২১ ফেব্রুয়ারির পর থেকে পাঠকরা বইটি হাতে পেতে থাকবেন ইনশাআল্লাহ। হাতে পেলেই পাঠকরা বুঝতে পারবেন, বইটির পেছনে আমাকে কী পরিমাণ শ্রম দিতে হয়েছে। বইটি আরবি কোনো বই থেকে কপি-পেস্ট বা অনুবাদ নয়।’
‘কুরআনের সাথে আমার দীর্ঘ জার্নি, আমার শতশত নোটস ও তুরাসি বইগুলো থেকে নির্যাস নিয়ে আমার মতো করে আমি বইটি সাজিয়েছি। নতুন অনেকগুলো পয়েন্ট ও দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করেছি। যেমন: মেজর থিম, কজ অ্যান্ড ইফেক্ট, কেইস-স্টাডি, গতিপথ, ওভারভিউ, শানে নুযুল, কিছু শব্দ জানতেই হয় ইত্যাদি। একই জনরার কাজ হওয়াতে, যে ভাষাতেই এই ধরণের কাজ করা হোক, তথ্যগত কিছু মিল থাকা অস্বাভাবিক নয়। যারাই বইটি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, কাজ করে যাচ্ছেন, পৌঁছে দিচ্ছেন হাতে হাতে- সবার জন্যই আন্তরিক দুআ ও ভালোবাসা রইলো।’