বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

রমজানে হাফেজ নিয়োগ

নিজস্ব হাফেজ ঠিক রেখে ইন্টারভিউ নেওয়া কি ঠিক?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

নিজস্ব হাফেজ ঠিক রেখে ইন্টারভিউ নেওয়া কি ঠিক?

রমজানের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমল তারাবি নামাজ। তারাবি নামাজের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা গুনাহ মাফ করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়বে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৩৬)

এখন চলছে শাবান মাস। কদিন পরই কোরআন নাজিলের মাস পবিত্র রমজান শুরু হবে। মহিমান্বিত এ মাসর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তারাবি নামাজের জন্য হাফেজ ঠিক করা হচ্ছে বিভিন্ন মসজিদে। কিছু মসজিদে নিজস্ব হাফেজ ঠিক রেখে ইন্টারভিউ নাটক সাজানো হয় বলে প্রায় প্রতিবছরই অভিযোগ ওঠে। 


বিজ্ঞাপন


কোরআনের হাফেজদের নিয়ে এরকম অসম্মানজনক আচরণ ও হয়রানি কবিরা গুনাহ। ইন্টারভিউর এরকম পাতানো আনুষ্ঠানিকতা মূলত ধোঁকা। যা শরিয়ত সাপোর্ট করে না। (তথ্যসূত্র: সহিহ বুখারি: ১৮৪; সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯১)

দ্বিতীয়ত, কোরআন নাজিলের মাসে পুরো কোরআন একবার শোনার নিয়তে খতমে তারাবির যে আয়োজন, তাতে চেনাজানার মধ্যে সর্বাধিক যোগ্য হিসেবে তাকেই নির্বাচিত করা উচিত, যে বিনিময় গ্রহণ করবে না। শুধুমাত্র সওয়াবের নিয়তে তারাবি পড়াবেন। আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পড়ো। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না।’ (মুসনাদে আহমদ ৩/৪২৮, হাদিস: ১৫৫২৯; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৫/২৪০)

আরও পড়ুন: নাবালকের পেছনে তারাবি পড়া যাবে?

ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা কোরআন পড় এবং আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করো। তোমাদের পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। (মুসনাদে আহমদ ৪/৪৩৭, হাদিস: ১৯৯১৭)


বিজ্ঞাপন


মূলত তারাবির কোরআন খতমের বিনিময় দেওয়া ও নেওয়া কোনোটিই জায়েজ নেই। ইসলামি শরিয়তের নির্দেশনা হলো- বিনিময় দেওয়া ছাড়া যদি কোনো হাফেজ না পাওয়া যায় তাহলে সুরা ফিল বা ‘আলাম তারা’ থেকে শেষ পর্যন্ত সুরাগুলো দিয়ে (তারাবি) নামাজ পড়ে নিবে। (সুরা বাকারা: ১৪; মুসনাদে আহমদ: ২৪/ ২৯৫; রদ্দুল মুহতার: ৬/৫৫-৬৫; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৪/৪৪৮; খুলাসাতুল ফতোয়া: ৩/১১৪; ইমদাদুল আহকাম: ২/২৬৯; ইমদাদুল ফতোয়া: ১/৪৮৪)

আরও পড়ুন: দ্রুত তারাবি পড়লে যে ক্ষতি

ফুকাহায়ে কেরাম কেবল ওসব ইবাদতের ক্ষেত্রে পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েজ বলেছেন যেগুলো ‎জরুরিয়াতে দ্বীন তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় ‎বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- ১। দ্বীন শেখানো, ইমামতি, মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব ইত্যাদি। খতম তারাবি জরুরিয়াতে দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় যে, তা না হলে দ্বীনের ক্ষতি হয়ে যাবে। চাইলে সহজে সুরা তারাবিও পড়াতে পারেন ইমাম। সুতরাং টাকার প্রশ্ন আসলে হাফেজ নির্ধারণ করা জায়েজ নেই; হাফেজদের পক্ষ থেকে টাকা দাবি করাও জায়েজ নেই। 

হাফেজদের বিনিময় দেওয়াকে জায়েজ করার জন্য হিলা গ্রহণের অনুমতিও ইসলামি শরিয়তে নেই। কেউ কেউ মনে করেন, রমজানে হাফেজকে দুয়েক ওয়াক্ত নামাজের ইমামতির দায়িত্ব দেওয়া হলে তার তারাবির হাদিয়া হালাল হয়ে যাবে। এটি সঠিক নয়। এটি কেবল বাহানা। যা পরিহার করা জরুরি। কারণ এই হিলার অর্থ হলো—এ বিনিময়টা তাকে ফরজ নামাজের ইমামতির জন্য দেওয়া হচ্ছে, খতম তারাবির জন্য নয়। কিন্তু নিজের মনকে একটু প্রশ্ন করে দেখুন, যদি ওই হাফেজ সাহেব তার দায়িত্বে অর্পিত ফরজ নামাজের ইমামতি যথাযথ গুরুত্বের সাথেই আদায় করেন, কিন্তু খতম তারাবির ইমামতি না করেন তবে কি তাকে ওই বিনিময় দেওয়া হত? এ কথা সুস্পষ্ট যে, কখনও তা দেওয়া হত না। বোঝা গেল, বিনিময়টা মূলত খতম তারাবির, ফরজের ইমামতির নয়। এজন্যই আকাবিরদের অনেকে এই হিলা প্রত্যাখ্যান করেছেন। দলিলের ভিত্তিতে তাঁদের ফতোয়াই সহিহ। (দেখুন: ইমদাদুল ফতোয়া: ১/৩২২; ইমদাদুল আহকাম: ১/৬৬৪)

হাদিয়া গ্রহণের আগ্রহ ছাড়া শুধুমাত্র সওয়াবের নিয়তে খতমে তারাবি পড়াবেন—এরকম একাধিক যোগ্য প্রার্থী পাওয়া গেলে তাদের মধ্য থেকে হাফেজ বাছাইয়ের জন্য ইন্টারভিউ নেওয়া যাবে। তবে কোনো অবস্থাতেই নিজস্ব লোক আগে থেকে ঠিক রেখে ইন্টারভিউর আনুষ্ঠানিকত বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সহিহ বুঝ দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর