শুক্রবার, ২৮ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

মদিনার খেজুর নিয়ে যা বলেছেন নবীজি

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

খেজুর একটি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধকও রয়েছে এতে। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (স.)-এর একাধিক বর্ণনায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা উঠে এসেছে। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, ‘মদিনার উচ্চভূমিতে উৎপন্ন আজওয়া খেজুরের মধ্যে রোগের নিরাময় রয়েছে। আর প্রথম ভোরে তা আহার করা বিষের প্রতিষেধক।’ (মুসলিম: ৫১৬৮; সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৩৫৩৯)

হজরত সাদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.) বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি ভোরে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও যাদু-টোনা তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি: ৫৪৪৫; মুসলিম: ২০৪৭-১৫৫; আবু দাউদ: ৩৮৭৬)


বিজ্ঞাপন


azwaa_khejur_dhakamail

আরেক হাদিসে সাদ (রা.) বর্ণনা করেন— একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (স.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তার হাত আমার বুকের ওপর রাখেন। আমি তার শীতলতা আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ: ৩৮৩৫)

আরও পড়ুন: এক কাপ উষ্ণ দুধে দুটো খেজুর মিশিয়ে খেলে যা ঘটবে

হজরত আলি (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২; অবশ্য বর্ণনাটি অনেকের মতে দুর্বল)


বিজ্ঞাপন


হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ঈমানদার ব্যক্তির জন্য খেজুর দিয়ে সেহরি খাওয়া কতোই না উত্তম! (আবু দাউদ: ২৩৪৫) আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণিত অন্য হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে...।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০৬৬)

ajwaa_khejur_dhakamail_2

আজওয়া পবিত্র নগরী মদিনায় উৎপন্ন হওয়া বিশেষ প্রজাতির খেজুর। এক ইহুদির হাত থেকে সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্ত করার জন্য এই গাছ রোপনে অংশ নিয়েছিলেন রাসুলুল্লাহ (স.)। ইহুদির দুটি কঠিন শর্ত ছিল। শর্ত দুটি পূরণ করতে পারলে সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্তি দেওয়া হবে। তার উদ্দেশ্য ছিলো— অসম্ভব শর্তে তাকে আটকে রাখা। শর্ত দুটি হলো- ১. অল্প কয়েক দিনের মধ্যে নগদ ৬০০ দিনার ইহুদিকে দিতে হবে এবং ২. অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ৩০টি খেজুর গাছ রোপন করে তাতে খেজুর ধরে পাকাতে হবে। তবেই সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্তি দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: আজওয়া খেজুরে লেগে আছে নবীজির হাতের ছোঁয়া

যা পূর্ণ করা ছিলো অসম্ভব ব্যাপার। বিষয়টি নবীজি (স.) অবগত হলে তিনি প্রথমে ৬০০ দিনারের ব্যবস্থা করলেন। তারপর হজরত আলী (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে ইহুদির কাছে গেলেন। ইহুদি এক কাঁদি খেজুর দিয়ে বলল, এই খেজুর থেকে চারা উৎপন্ন করে তাতে ফল ফলাতে হবে। রাসুল (স.) দেখলেন যে, ইতোমধ্যে খেজুরগুলো আগুনে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলেছে সে, যাতে চারা না গজায়।

রাসুল (স.) খেজুরের কাঁদি হাতে নিয়ে আলী (রা.)-কে গর্ত করতে বললেন আর সালমান ফারসিকে বললেন পানি আনতে। আলী (রা.) গর্ত করলে রাসুল (স.) নিজ হাতে প্রতিটি গর্তে সেই পোড়া খেজুর রোপন করলেন। বাগানের একদিক থেকে পোড়া কালো দানা রোপণ করতে করতে বাগানের শেষ পর্যন্ত গেলেন। রাসুল (স.) সালমান ফারসিকে এ নির্দেশ দিলেন যে, বাগানের শেষ প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত তুমি পেছন ফিরে তাকাবে না। সালমান ফারসি পেছনে না তাকিয়ে পানি দিতে লাগলেন। বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি তাকিয়ে দেখলেন যে প্রতিটি গাছ খেজুরে পরিপূর্ণ। আল্লাহর অশেষ মহিমায় সেই পোড়া খেজুর থেকে চারা গজালো। আর খেজুরগুলো পেকে কালো বর্ণ হয়ে গেল। কারণ এই খেজুরের দানাগুলো ছিলো আগুনে পোড়া কয়লার মতো কালো। 

তাই এর স্বাদও অনেকটা পোড়া পোড়া। গন্ধও তাই। এই খেজুর সবচেয়ে দামি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নবীজির প্রিয় খাবার এবং নবীজির হাতের ছোঁয়ায় প্রথম পৃথিবীতে জন্মানো খেজুরের বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন