শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আজওয়া খেজুরে লেগে আছে নবীজির হাতের ছোঁয়া

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ৩০ মার্চ ২০২৩, ১১:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

আজওয়া খেজুরে লেগে আছে নবীজির হাতের ছোঁয়া

পবিত্র নগরী মদিনায় উৎপন্ন হওয়া বিশেষ প্রজাতির খেজুর ‘আজওয়া’। রাসুলুল্লাহ (স.) সর্বপ্রথম নিজ হাতে এ খেজুর গাছ রোপণ করেছিলেন। যার ফলে এ খেজুরের রয়েছে বিশেষ বরকত ও ফজিলত। হাদিস শরিফে এই ফলটিকে জান্নাতের ফল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহানবী (স.) বলেন, ‘আজওয়া জান্নাতের ফল, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে..।’ (তিরমিজি: ২০৬৬) 

রাসুল (স.) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালবেলা সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, সেদিন কোনো বিষ ও জাদু তার ক্ষতি করবে না।’ (বুখারি: ৫৪৪৫)


বিজ্ঞাপন


আজওয়া খেজুর হৃদরোগে আক্রান্তদের জন্যও অত্যন্ত উপকারী ওষুধ। রাসুল (স.) তাঁর এক সাহাবিকে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে হৃদরোগের জন্য আজওয়া খেজুরের তৈরি ওষুধ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি অসুস্থ হলে রাসুল (স.) আমাকে দেখতে আসেন। এ সময় তিনি তাঁর হাত আমার বুকের ওপর রাখলে আমি তাঁর শৈত্য আমার হৃদয়ে অনুভব করি। এরপর তিনি বলেন, তুমি হৃদরোগে আক্রান্ত। কাজেই তুমি সাকিফ গোত্রের অধিবাসী হারিসা ইবনে কালদার কাছে যাও। কেননা সে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক। আর সে যেন মদিনার আজওয়া খেজুরের সাতটা খেজুর নিয়ে বিচিসহ চূর্ণ করে তোমার জন্য তা দিয়ে সাতটি বড়ি তৈরি করে দেয়। (আবু দাউদ: ৩৮৩৫)

আজওয়া খেজুরের ইতিহাস
আজওয়া খেজুরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক বিস্ময়কর ইতিহাস। রাসুলুল্লাহ (স.) একজন ইহুদির হাত থেকে সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্ত করার জন্য এই গাছ রোপনে অংশ নিয়েছিলেন। ইহুদির দুটি কঠিন শর্ত ছিল। শর্ত দুটি পূরণ করতে পারলে সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্তি দেওয়া হবে। তার উদ্দেশ্য ছিলো— অসম্ভব শর্তে তাকে আটকে রাখা। শর্ত দুটি হলো- (১) অল্প কয়েক দিনের মধ্যে নগদ ৬০০ দিনার ইহুদিকে দিতে হবে এবং (২) অল্প কয়েক দিনের মধ্যে ৩০টি খেজুর গাছ রোপন করে তাতে খেজুর ধরে পাকতে হবে। তবেই সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্তি দেওয়া হবে।

যা পূর্ণ করা ছিলো সম্পূর্ণ অসম্ভব ব্যাপার। বিষয়টি নবীজি (স.) অবগত হলে তিনি প্রথমে ৬০০ দিনারের ব্যবস্থা করলেন। তারপর হজরত আলী (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে ইহুদির কাছে গেলেন। ইহুদি এক কাঁদি খেজুর দিয়ে বলল, এই খেজুর থেকে চারা উৎপন্ন করে তাতে ফল ফলাতে হবে। রাসুল (স.) দেখলেন যে, ইতোমধ্যে খেজুরগুলো আগুনে পুড়িয়ে কয়লা করে ফেলেছে সে, যাতে চারা না গজায়।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন:
রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দোয়াটি পড়তে ভুলবেন না
ভোররাতে মসজিদের মাইকে ডাকাডাকি, যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
যেসব কারণে রোজা ভাঙলে কাফফারা দিতে হয় না

রাসুল (স.) খেজুরের কাঁদি হাতে নিয়ে আলী (রা.)-কে গর্ত করতে বললেন আর সালমান ফারসিকে বললেন পানি আনতে। আলী (রা.) গর্ত করলে রাসুল (স.) নিজ হাতে প্রতিটি গর্তে সেই পোড়া খেজুর রোপন করলেন। বাগানের একদিক থেকে পোড়া কালো দানা রোপণ করতে করতে বাগানের শেষ পর্যন্ত গেলেন। রাসুল (স.) সালমান ফারসিকে এ নির্দেশ দিলেন যে, বাগানের শেষ প্রান্তে না যাওয়া পর্যন্ত তুমি পেছন ফিরে তাকাবে না। সালমান ফারসি পেছনে না তাকিয়ে পানি দিতে লাগলেন। বাগানের শেষ প্রান্তে যাওয়ার পর তিনি তাকিয়ে দেখলেন যে প্রতিটি গাছ খেজুরে পরিপূর্ণ। আল্লাহর অশেষ মহিমায় সেই পোড়া খেজুর থেকে চারা গজালো। আর খেজুরগুলো পেকে কালো বর্ণ হয়ে গেল। কারণ এই খেজুরের দানাগুলো ছিলো আগুনে পোড়া কয়লার মতো কালো। 

তাই এর স্বাদও অনেকটা পোড়া পোড়া। গন্ধও তাই। এই খেজুর পৃথিবীর সবচেয়ে দামি খেজুর। আর স্বাদের দিক দিয়েও সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু। হাদিস শরিফে খেজুরটির গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে এবং জান্নাতের ফল হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আজওয়া জান্নাতের, এতে বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক রয়েছে..।’ (তিরমিজি: ২০৬৬)

আরও পড়ুন: 
রোজা রেখে নাটক-সিনেমা দেখা যাবে?
রাসুলুল্লাহ (স.) কী দিয়ে ইফতার করতেন?
রমজানে দোয়া কবুলের বিশেষ তিনটি সময়

উরওয়া (রহ.) বর্ণনা করেন, আয়েশা (রা.) পরপর সাত দিন সাতটি আজওয়া খেজুর খেয়ে সকালের উপবাস ভাঙার অথবা এই অভ্যাস তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২৩৯৪৫) 

আলি (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সাতটি আজওয়া খেজুর প্রতিদিন আহার করে, তার পাকস্থলীর প্রতিটি রোগ নির্মূল হয়ে যায়।’ (কানজুল উম্মাল: ২৮৪৭২) যদিও এই বর্ণনাকে দুর্বল বলেছেন অনেকে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নবীজির প্রিয় খাবার এবং নবীজির হাতের ছোঁয়ায় প্রথম পৃথিবীতে জন্মানো খেজুরের বরকত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর