পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহর ঐশী কালাম। এর মধ্যে কোনো কোনো সুরা বা আয়াত বিশেষ ফজিলতপূর্ণ। যেগুলো তেলাওয়াতের মাধ্যমে বান্দা অধিক সওয়াব ও ফজিলত লাভ করতে পারে। যেগুলোর মাধ্যমে বান্দা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারে। তেমনই এক ফজিলতপূর্ণ সুরার নাম ‘ইখলাস’। পবিত্র কোরআনের ১১২তম এই সুরাকে মহান আল্লাহ বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন।
এই সুরা মানুষকে শিরক থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র মহান আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা দেয়। এছাড়াও এই সুরা তেলাওয়াতের মাধ্যমে পুরো কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ তেলাওয়াতের সওয়াব পাওয়া যায়। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি জনৈক সাহাবিকে দেখলেন, বারবার ‘কুল হুআল্লাহু আহাদ’ সুরাটি পড়ছেন। সকাল হলে ওই ব্যক্তি রাসুল (স.)-এর সামনে বিষয়টি পেশ করলেন। লোকটি হয়তো ভেবেছে, এ ছোট একটি সুরা বারংবার পড়তে থাকা তেমন সওয়াবের কাজ নয়—তখন রাসুল (স.) বলেন, ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারি: ৫০১৩)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: লুত (আ.)-এর কাছে বালকের বেশে আসা ফেরেশতাদের ঘটনা
এজন্য নবীজি (স.) সাহাবায়ে কেরামকে এই সুরা পড়তে বিশেষ তাগিদ দিতেন, বিশেষ করে রাতের ইবাদতে যেন এই সুরাটি থাকে, সে ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আবুদ দারদা (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি একদিন বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেই কি প্রতিরাতে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করতে পারে না? সাহাবিরা বললেন, আমরা দুর্বল, প্রতিরাতে এত বেশি পরিমাণ তেলাওয়াত করা আমাদের সাধ্যের বাইরে। রাসুল (স.) বলেন, আল্লাহ তাআলা পুরো কোরআনকে তিন ভাগে ভাগ করেছেন এবং সুরা ইখলাসকে তিন ভাগের এক ভাগ গণ্য করেছেন। (মুসনাদে আহমদ: ২৭৪৯৮)
সুবহানাল্লাহ, বেশি বেশি সুরা ইখলাস তেলাওয়াত যে কতটা ফজিলতপূর্ণ, তা এক সাহাবির ইন্তেকালের ঘটনা থেকে আরো স্পষ্ট হয়ে যায়। নিয়মিত সুরা ইখলাস তেলাওয়াতকারী এক সাহাবি ইন্তেকাল করলে মহান আল্লাহ জিবরাইল (আ.)-এর নেতৃত্বে ৭০ হাজার ফেরেশতাকে তাঁর জানাজায় শরিক হতে পাঠান।
বিজ্ঞাপন
হাদিস শরিফে এসেছে, মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আলমুযানি আললাইছি (রা.) ইন্তেকাল করলে ৭০ হাজার ফেরেশতাসহ জিবরাইল (আ.) নবীজির কাছে আগমন করেন। মহানবী (স.) জিবরাইল (আ.) এবং এসব ফেরেশতাদের নিয়ে তাঁর জানাজায় শরিক হন। নামাজ শেষ হলে নবীজি (স.) জিবরাইল (আ.)-কে জিজ্ঞেস করেন, হে জিবরাইল! কোন আমলের মাধ্যমে মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া মুযানি এই উচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে? জবাবে জিবরাইল (আ.) বলেন, এই মর্যাদা লাভের কারণ হলো, সে দাঁড়িয়ে, বসে, হেঁটে হেঁটে, সওয়ারিতে (বাহনে চড়া অবস্থায়) তথা সর্বাবস্থায় সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করত। (মুজামে কাবির: ৮/১১৬, হাদিস ৭৫৩৭; মুজামে আওসাত, তবারানি )
আরেক বর্ণনায় এসেছে, নবীজি জিজ্ঞেস করেছেন, হে জিবরাইল! কোন আমল দ্বারা মুয়াবিয়া ইবনে মুয়াবিয়া আল্লাহর নিকট এই মর্যাদা লাভ করেছে? জিবরাইল (আ.) উত্তর দিয়েছেন, এর কারণ হলো, সে সুরা ইখলাসকে মহব্বত করত এবং চলতে-ফিরতে, উঠতে-বসতে সর্বাবস্থায় এই সুরা তেলাওয়াত করত। (মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৪২৬৮)