একজন মুমিনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বাধ্যতামূলক ইবাদত নামাজ। ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, সুন্নাহ পদ্ধতিতে সময়মতো নামাজ পড়তেই হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্যকর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)
স্বাভাবিক অবস্থায় নামাজ আদায়ের যে পদ্ধতি শরিয়তে বর্ণিত হয়েছে, অস্বাভাবিক ও বিশেষ অবস্থার ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনের ঘোষণা— لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ‘আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কোনো হুকুম বান্দার ওপর আরোপ করেন না ‘ (সুরা বাকারা: ২৮৫)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাআলা কোরআনের অন্যত্র বলেছেন— الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ অর্থাৎ যারা দাঁড়ানো, বসা এবং শোয়া অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে। (আলে ইমরান: ১৯১) ইমাম দাহহাক বলেন, এই আয়াতে অসুস্থ-অপারগ ব্যক্তিদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী (যেভাবে পারে) ইবাদত পালন করবে। (আল মুহিতুল বুরহানি: ৩/২৬)
আরও পড়ুন: বন্যাদুর্গত এলাকায় লাশের গোসল, জানাজা ও দাফনের বিধান কী
সুতরাং কোনো ব্যক্তি যখন বন্যার পানিতে আটকা পড়ে যায় এবং স্বাভাবিক পদ্ধতিতে নামাজ আদায় করতে না পারে তখন তার নামাজ আদায়ের পদ্ধতিতে ক্ষেত্রবিশেষে নিম্নলিখিত ছাড় অনুমোদিত হয়—
১. বন্যার্ত ব্যক্তি যদি পানিতে আটকা পড়ে যায় এবং তার কাছে নৌকা থাকে তো নামাজ নৌকাতে পড়ে নিবে। আর যদি নৌকা না থাকে তাহলে সে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার অপেক্ষা করবে। অতঃপর ওয়াক্ত শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে পানিতেই নামাজ পড়ে নিবে। এক্ষেত্রে পানিতে দাঁড়িয়ে যেভাবে সম্ভব সেভাবেই নামাজ আদায় করবে। যেমন— ক. যদি পানি অল্প হয় এবং রুকু করতে সক্ষম হয় তাহলে রুকু সহকারে নামাজ আদায় করবে। আর সেজদা ইশারায় করে নিবে। খ. যদি রুকু করতেও সক্ষম না হয় তাহলে পানিতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়কালে রুকু-সেজদা উভয়টা ইশারায় করবে। গ. তবে যদি সাঁতার-পানি হয় তাহলে সে তখন নামাজ আদায় করবে না। বরং পরবর্তীতে কাজা আদায় করে নিবে। (হাশিয়াতুত তাহতাবি আলা মারাকিয়িল ফালাহ: ৪০৭)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: রাস্তার ময়লা পানি কাপড়ে লাগলে নামাজ পড়া যাবে?
২. পানিতে আটকে পড়া ব্যক্তির ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব হবে না। কেননা জুমার নামাজ আদায়ের জন্য জামাত শর্ত। জুমার নামাজের জন্য ইমাম ছাড়া কমপক্ষে তিনজন মুসল্লি হওয়া আবশ্যক। ইমাম খুতবা দেবেন, বাকি তিনজন খুতবা শুনবেন এবং জুমায় শরিক থাকবেন। এর চেয়ে কমসংখ্যক মুসল্লি হলে জুমা সহিহ হবে না। (রদ্দুল মুহতার: ৩/২৪)

