আমলই বান্দার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ। নিজ আমলগুণে মানুষ যেমন জান্নাতি হতে পারেন, তেমনি কর্মদোষে হতে পারেন জাহান্নামি। একশ্রেণির মানুষ আছেন, যাদের ওপর জাহান্নাম হারাম ঘোষণা করা হয়েছে হাদিসে। কারো ব্যাপারে বলা হয়েছে- তারা জাহান্নামে যাওয়া তো দূরের কথা, জাহান্নামের আগুন চোখেও দেখবেন না। এ প্রসঙ্গে সুপ্রসিদ্ধ হাদিসটি হলো- রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তিনটি চোখ জাহান্নামের আগুন দেখবে না—যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদারি করে, যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে, যে চোখ আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ জিনিস দেখে ক্ষুব্ধ হয়।’ (আল মুজামুল কাবির লিত-তিবরানি: ১০০৩)
এই হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদার, আল্লাহর ভয়ে যিনি কাঁদেন এবং আল্লাহর নিষেধ করা বিষয় দেখলে যিনি ক্ষুব্ধ হন—এই তিন শ্রেণির মানুষ জাহান্নামের আগুন দেখবেন না। নিচে বিশদ আলোচনা করা হলো।
বিজ্ঞাপন
১. আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদার
রাসুলুল্লাহ (স.) সীমান্ত পাহারা দেওয়ার ফজিলত বর্ণনা করে বলেন, আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত পাহারা দেওয়া দুনিয়া ও এর মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম (বুখারি: ২৮৯২; মেশকাত: ৩৭৯১)। তিনি আরও বলেন, ‘একটি দিন ও রাত আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত পাহারায় নিজেকে নিয়োজিত রাখা, এক মাস দিনে সিয়াম ও রাতে সালাতে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে উত্তম (মুসলিম: ১৯১৩; মেশকাত: ৩৭৯৩)। এছাড়াও সীমান্ত পাহারা দেওয়া এমন একটি আমল যা সদকায়ে জারিয়ার সমতুল্য। এর সওয়াব সে কেয়ামত পর্যন্ত পেতে থাকবে (আহমদ: ১৭৩৯৬; সহিহুত তারগিব: ১২১৮)
আরও পড়ুন: যে আমল করলে জাহান্নামে যেতে হবে না
আবদুর রহমান ইবনে জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহর পথে যে বান্দার দু’পা ধুলায় মলিন হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে এমন হতে পারে না। (সহিহ বুখারি: ৪/২৮১১)
২. আল্লাহর ভয়ে যিনি কাঁদেন
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এমন অসম্ভব, যেমন দোহনকৃত দুধ পুনরায় ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না।’ (তিরমিজি : ১৬৩৩
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, যে মুমিন বান্দার দু’চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদি তা মাছির মাথার পরিমাণও হয়, এবং তা চেহারা বেয়ে পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুজ জুহুদ: ৪১৯৭)
বিজ্ঞাপন
হাশরের দিনেও আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জন্য বিশেষ ঘোষণা রয়েছে হাদিসে। সেদিনের কঠিন পরিস্থিতিতে সাত শ্রেণির মুমিন আরশের নিচে আশ্রয় পাবেন। তাদের এক শ্রেণি সম্পর্কে রাসুল (স.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণের সময় তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে।’ (বুখারি: ৬৬০; মুসলিম: ৭১১)
আরও পড়ুন: হাজারে ৯৯৯ জন জাহান্নামি, এই হাদিসের অর্থ কী?
৩. আল্লাহর নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি যার ঘৃণা
আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি অন্তরে ঘৃণা তৈরি হওয়া বিশেষ মুমিনদের গুণ। এটি মুজাহাদার মাধ্যমে তৈরি করতে হয়। বলা হচ্ছে, তারাও জাহান্নামের আগুন দেখবেন না। তারা আল্লাহর আনুগত্য ও জিকিরের মাধ্যমে মনে প্রশান্তি অনুভব করেন, সব রকম আনুগত্যের কর্মকাণ্ড সম্পাদন করে ঈমানের পরিপূর্ণ স্বাদ লাভ করেন এবং সমস্ত অন্যায় থেকে তিনি পরিপূর্ণভাবে মুক্ত থাকেন। তাদের উদ্দেশে আল্লাহ বলেন, ‘হে প্রশান্ত আত্মা- তুমি প্রশান্তচিত্তে তোমার পালনকর্তার দিকে ফিরে চলো। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা ফজর: ২৭-৩০)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘শপথ প্রাণের আর তার যিনি তাকে সুবিন্যস্ত করেছেন। অতঃপর তাকে অসৎকর্ম ও সৎ কর্মের জ্ঞান দান করেছেন। যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করবে সে অবশ্যই সফলকাম হয়। আর যে নিজেকে কলুষিত করবে সে নিশ্চয়ই ব্যর্থ মনোরথ হয়।’ (সুরা আশ-শামস: ৭-১০)
আরও পড়ুন: মুসলিম হয়েও জান্নাতে যাবেন না যারা
আরও যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম ঘোষণা
নবীজির ঘোষণা অনুযায়ী আরও একাধিক মানুষের জন্য জাহান্নাম হারাম। যেমন— প্রত্যেক এমন ব্যক্তি যারা মানুষের কাছাকাছি, বন্ধুসুলভ ও সহজ-সরল। (তিরমিজি: ২৪৮৮)। আল্লাহর একত্ববাদের আন্তরিক সাক্ষ্যদাতা (সহিহ মুসলিম: ৩৩২)। সেজদার চিহ্ন রয়েছে যার শরীরে। (সহিহ মুসলিম: ৩৫৮)। যারা জোহরের আগে-পরের সুন্নত নামাজের প্রতি যত্নশীল। (সুনানে তিরমিজি: ৪২৮)। যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে নামাজ আদায় করে, জাহান্নাম তাকে স্পর্শ করবে না। (সহিহ মুসলিম: ৬৩৪)। যে অপর ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সম্মান রক্ষা করে। (সুনানে তিরমিজি: ১৯৩১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত সকল গুণ অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।