রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

ঈমান নষ্ট হয় কীভাবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

ঈমান নষ্ট হয় কীভাবে

ঈমান মুসলমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। মুসলমানরা ঈমান থাকার কারণেই মুসলমান। মহামুল্যবান এই সম্পদকে চিনতে হয়, কদর করতে হয়। অন্যথায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। মূলত তিন কারণে ঈমান নষ্ট হয়। আকিদাগত, আমলগত ও উক্তিগত। প্রত্যেক মুমিনের জন্য ঈমান ভঙের মৌলিক কারণগুলো জানা খুব জরুরি। আলেমরা এ ব্যাপারে অনেক লম্বা আলোচনা করেছেন। এখানে ঈমান ভঙ্গের উল্লেখযোগ্য ১০টি কারণ আলোচনা করা হলো।

১. আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে— اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সঙ্গে অংশীদার করা ক্ষমা করেন না; তা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যে কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে সে এক মহাপাপ করে।’ (সুরা নিসা: ৪৮) আরও ইরশাদ হয়েছে- اِنَّهٗ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ الۡجَنَّۃَ وَ مَاۡوٰىهُ النَّارُ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ ‘কেউ আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলে অবশ্যই আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন এবং তার আবাস জাহান্নাম। আর জালেমদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা: ৭২)


বিজ্ঞাপন


২. নিজের ও আল্লাহর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী নির্ধারণ করা
আল্লাহ তাআলা বলেন- وَ یَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ مَا لَا یَضُرُّهُمۡ وَ لَا یَنۡفَعُهُمۡ وَ یَقُوۡلُوۡنَ هٰۤؤُلَآءِ شُفَعَآؤُنَا عِنۡدَ اللّٰهِ ؕ قُلۡ اَتُنَبِّـُٔوۡنَ اللّٰهَ بِمَا لَا یَعۡلَمُ فِی السَّمٰوٰتِ وَ لَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ سُبۡحٰنَهٗ وَ تَعٰلٰی عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ‘তারা আল্লাহকে ছাড়া যার ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী। বলুন, তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিচ্ছ, যা তিনি জানেন না? তিনি মহান, পবিত্র এবং তারা যাকে শরিক করে তা হতে তিনি ঊর্ধ্বে।’ (সুরা ইউনুস: ১৮)

আল্লাহ আরও বলেন-  اَلَا لِلّٰهِ الدِّیۡنُ الۡخَالِصُ ؕ وَ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِهٖۤ اَوۡلِیَآءَ ۘ مَا نَعۡبُدُهُمۡ اِلَّا لِیُقَرِّبُوۡنَاۤ اِلَی اللّٰهِ زُلۡفٰی ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَحۡکُمُ بَیۡنَهُمۡ فِیۡ مَا هُمۡ فِیۡهِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ۬ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِیۡ مَنۡ هُوَ کٰذِبٌ کَفَّارٌ ‘জেনে রাখ, অবিমিশ্র আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য। যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, “আমরা তো এদের পূজা এজন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যাবে।” তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে আল্লাহ তার ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী ও কাফের আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ (সুরা জুমার: ৩)

আরও পড়ুন: শিরক না করার কারণে যেসব প্রতিদান পাবেন

৩. মুশরিক-কাফেরদের কাফের মনে না করা
যার কাফের হওয়ার ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত একমত, যেমন ইহুদি-খ্রিস্টান-মুশরিক ছাড়াও প্রকাশ্যে আল্লাহ, রাসুল বা দ্বীনের কোনো অকাট্য ব্যাপার নিয়ে কটূক্তিকারী; যাদের কুফরির ব্যাপারে হকপন্থি আলেমরা একমত, তা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। যদি কোনো ব্যক্তি তা বিশ্বাস না করে, তাহলে সে-ও কাফের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ বলেন-  وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ یَتَعَدَّ حُدُوۡدَهٗ یُدۡخِلۡهُ نَارًا خَالِدًا فِیۡهَا ۪ وَ لَهٗ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের (কথাকে) অমান্য করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে দাখিল করবেন। সে তাতে চিরকাল থাকবে এবং অবমাননাকর শাস্তি ভোগ করবে।’ (সুরা নিসা: ১৪)


বিজ্ঞাপন


৪. নবীজি (স.)-এর ফায়সালার তুলনায় অন্য কারও ফয়সালাকে উত্তম মনে করা
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-  اَلَمۡ تَرَ اِلَی الَّذِیۡنَ یَزۡعُمُوۡنَ اَنَّهُمۡ اٰمَنُوۡا بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یَّتَحَاکَمُوۡۤا اِلَی الطَّاغُوۡتِ وَ قَدۡ اُمِرُوۡۤا اَنۡ یَّکۡفُرُوۡا بِهٖ ؕ وَ یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّضِلَّهُمۡ ضَلٰلًۢا بَعِیۡدًا ‘আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা দাবি করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে, আমরা তার ওপর ঈমান এনেছি। তারা বিচার-ফয়সালা নিয়ে যেতে চায় তাগুতের কাছে, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা তাকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদের প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।’ (সুরা নিসা: ৬০)

আরও পড়ুন: নবীজির অনুসরণ কেমন হওয়া উচিত

৫. রাসুলুল্লাহ (স.)-এর আনিত কোনো বিধানকে অপছন্দ করা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-  فَلَا وَ رَبِّکَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ حَتّٰی یُحَکِّمُوۡکَ فِیۡمَا شَجَرَ بَیۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا یَجِدُوۡا فِیۡۤ اَنۡفُسِهِمۡ حَرَجًا مِّمَّا قَضَیۡتَ وَ یُسَلِّمُوۡا تَسۡلِیۡمًا ‘অতএব, আপনার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে বিচারক বলে মনে না করে। এরপর আপনার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।’ (সুরা নিসা: ৬৫)

৬. দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা
আল্লাহ বলেন-  وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَهُمۡ لَیَقُوۡلُنَّ اِنَّمَا کُنَّا نَخُوۡضُ وَ نَلۡعَبُ ؕ قُلۡ اَ بِاللّٰهِ وَ اٰیٰتِهٖ وَ رَسُوۡلِهٖ کُنۡتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُوۡنَ لَا تَعۡتَذِرُوۡا قَدۡ کَفَرۡتُمۡ بَعۡدَ اِیۡمَانِکُمۡ ‘আপনি তাদের প্রশ্ন করলে তারা নিশ্চয়ই বলবে, ‘আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতূক করছিলাম।’ বলেন, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রূপ করছিলে?’ তোমরা অজুহাত দেওয়ার চেষ্টা করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফুরি করেছ।” (সুরা তওবা: ৬৫-৬৬)

৭. জাদু করা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- وَ مَا کَفَرَ سُلَیۡمٰنُ وَ لٰکِنَّ الشَّیٰطِیۡنَ کَفَرُوۡا یُعَلِّمُوۡنَ النَّاسَ السِّحۡرَ ‘সুলায়মান কুফরি করেনি, কুফরি তো করেছিল শয়তানরাই। তারা মানুষকে জাদু শিক্ষা দিত…।’ (সুরা বাকারা: ১০২)

আরও পড়ুন: যে তিন অভ্যাস থাকলে জাহান্নাম নিশ্চিত 

৮. মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সমর্থন ও সহযোগিতা করা
আল্লাহ বলেন- یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡۤا اٰبَآءَکُمۡ وَ اِخۡوَانَکُمۡ اَوۡلِیَآءَ اِنِ اسۡتَحَبُّوا الۡکُفۡرَ عَلَی الۡاِیۡمَانِ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّهُمۡ مِّنۡکُمۡ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের পিতা ও ভাইও যদি ঈমানের বিপরীতে কুফরিকে বেছে নেয়, তবে তাদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদের অন্তরঙ্গরূপে গ্রহণ করে, তারাই সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা তাওবা: ২৩)

আরও ইরশাদ হয়েছে-  یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوا الۡیَهُوۡدَ وَ النَّصٰرٰۤی اَوۡلِیَآءَ ۘؔ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ؕ وَ مَنۡ یَّتَوَلَّهُمۡ مِّنۡکُمۡ فَاِنَّهٗ مِنۡهُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই একজন বলে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপাচারী সম্প্রদায়কে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ (সুরা মায়েদা: ৫১)

৯. কাউকে দ্বীন-শরিয়তের ঊর্ধ্বে মনে করা
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন- اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়েদা: ৩)

আরও পড়ুন: মা-বাবা শিরক করলে সম্পর্ক ছিন্ন করা যাবে?

১০. দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া
আল্লাহ তাআলা বলেন-  وَ مَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنۡ ذُکِّرَ بِاٰیٰتِ رَبِّهٖ ثُمَّ اَعۡرَضَ عَنۡهَا ؕ اِنَّا مِنَ الۡمُجۡرِمِیۡنَ مُنۡتَقِمُوۡنَ ‘যে ব্যক্তি তার রবের আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হয়ে, আবার তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে বড় জালেম আর কে? নিশ্চয় আমি অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী। (সুরা সাজদাহ: ২২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। ঈমানহারা হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আন্তরিক তওবা ও কালেমা শাহাদাহর মাধ্যমে ঈমান নবায়ন করার তাওফিক দান করুন। সকল মুমিনকে হেদায়াত ও রহমতের চাঁদরে ঘিরে রাখুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর