শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

যে তিন অভ্যাস থাকলে জাহান্নাম নিশ্চিত 

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫ আগস্ট ২০২২, ১০:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

যে তিন অভ্যাস থাকলে জাহান্নাম নিশ্চিত 

মহান আল্লাহ মানবজাতিকে দুটি পরিণাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন। একটি জান্নাত, অপরটি জাহান্নাম। তিনি নবী-রাসুলদের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন পরম সুখের জান্নাত কেবল নেককার বান্দাদের জন্য, আর অসৎ কর্মশীলদের জন্যে নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম। যেসব কাজ ও বিশ্বাস মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়, সে বিষয়ে নবীজি (স.) মুসলিম উম্মাহকে বারে বারে সচেতন করেছেন।

আর কিছু নিষেধাজ্ঞা তিনি বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন উম্মতের কাছে। তেমনই তিনটি বড় গুনাহ নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে, যেসব গুনাহ বান্দাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। হজরত আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না: অভ্যস্ত মদ্যপায়ী, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ও জাদুতে বিশ্বাসী।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৯৫৮৭)


বিজ্ঞাপন


অভ্যস্ত মদ্যপায়ী
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মদপানকারী ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল করা হয় না। সে তাওবা করলে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। যদি আবার সে মদপান করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল করেন না। যদি সে তাওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা গ্রহণ করেন। সে যদি আবার মদপানে লিপ্ত হয়, তাহলে তার ৪০ দিনের নামাজ আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। সে চতুর্থবারে মদপানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন না এবং তাকে ‘নাহরুল খাবাল’ হতে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আবু আবদুর রাহমান (ইবনু উমার)! খাবাল নামক ঝরনাটি কী? তিনি বললেন, জাহান্নামিদের পুঁজের ঝরনা। (তিরমিজি: ১৮৬২)

আরও পড়ুন: চার গুনাহ করার সময় ঈমান থাকে না

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! মদ, জুয়া, পূজার বেদি ও ভাগ্যনির্ণায়ক শর হচ্ছে শয়তানের অপবিত্র কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা মায়েদা: ৯০)

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী
ইসলাম সবসময় আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। যারা অযৌক্তিক কারণে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে, মহান আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর দেওয়া প্রতিশ্রুতির পর তা লঙ্ঘন করে আর (আত্মীয়তার) সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রাখার আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে এবং পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ। আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।’ (সুরা আর রাদ: ২৫)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: গুনাহ যেভাবে সওয়াবে পরিণত হয়

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৪১৫)

জাদু-টোনায় বিশ্বাস করা
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরি করেনি, বরং শয়তানরা কুফরি করেছে। তারা মানুষকে জাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাজিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারুত ও মারুতের ওপর। আর তারা (হারুত ও মারুত) কাউকে শেখাত না—যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরি করো না। এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোনো ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত, যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা অবশ্যই জানত, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোনো অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদের বিক্রয় করেছে। যদি তারা জানত।’ (সুরা বাকারা: ১০২)

এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে জাদু-টোনার নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। বরং আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত জাগতিক নিয়ম ও নির্দেশেই তা প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ, যা কখনো মঙ্গল বয়ে আনে না। বরং এগুলো মানুষের দুনিয়া ও আখিরাতের ধ্বংস ডেকে আনে। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, আল্লাহর বাণী—‘আমরা তোমাদের জন্য পরীক্ষাস্বরূপ। সুতরাং তোমরা কুফুরি করো না’—এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, জাদু শিক্ষা করা কুফরি। (ফাতহুল বারি: ১০/২২৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর