শিরক অর্থ অংশীদার করা, সহযোগী বানানো, সমকক্ষ করা ও সম্পৃক্ত করা। এমন সব বিশ্বাস, কাজ, কথা ও অভ্যাসকে শিরক বলা হয়, যার মাধ্যমে মহান আল্লাহর রুবুবিয়্যাত (রব), উলুহিয়্যাত (ইলাহ), নাম ও গুণাবলীতে অপর কারো অংশীদারিত্ব প্রতীয়মান হয়। ইসলামে সবচেয়ে বড় পাপ হলো শিরক। এর পরিণাম ভয়াবহ। শিরক থেকে বেঁচে থাকার অনেক পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে কোরআন ও হাদিসে।
মানুষ যত গুনাহই করুক, ক্ষমা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, কিন্তু শিরকের কোনো ক্ষমা নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করার অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর এটি ছাড়া সব গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’ (সুরা নিসা: ৪৭)
বিজ্ঞাপন
আল্লাহ তাআলা শিরক না করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শরিক করো না। নিশ্চয়ই শিরক অতি বড় জুলুম।’ (সুরা লোকমান: ১৩)
শিরক সংঘটিত হতে শতভাগ অংশীদার সাব্যস্ত করা আবশ্যক নয়; বরং একভাগ অংশীদার করলেও তাকে অংশীদার বলা হয়। তাই আল্লাহ তাআলার হকের সামান্যতম অংশ অন্যকে দিলেই তা শিরকে পরিণত হয়। সুতরাং মুমিনের জন্য ঈমান-ইবাদতসহ জীবনের সবক্ষেত্রে শিরক পরিহার করা আবশ্যক।
শিরক না করার প্রতিদান
শিরকমুক্ত ঈমান ও ইবাদতের অসংখ্য পুরস্কার কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন—
১. নিরাপত্তা ও হেদায়াত লাভ: যারা ঈমান আনার পর শিরকে লিপ্ত হয় না, আল্লাহ তাদের চূড়ান্ত হেদায়াত দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাদের ঈমানের সঙ্গে জুলুমের (শিরকের) সংমিশ্রণ ঘটায়নি তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারা সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা আনআম: ৮২)
বিজ্ঞাপন
২. ক্ষমা লাভ: যারা আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে না, আল্লাহ তাদের ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়ে হাদিসে কুদসিতে বলেন, ‘হে আদম সন্তান, তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৫৪০)
৩. কষ্ট ও ভোগান্তি হতে মুক্তি: আল্লাহ মুমিন বান্দাদের যাবতীয় বিপদ থেকে রক্ষা করেন। কোরআনের দলিল- ‘তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদের উদ্ধার করেন, তখন তারা শিরকে লিপ্ত হয়।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৫)
৪. জান্নাত লাভ: যারা শিরকমুক্ত জীবন নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হবে, আল্লাহ তাদের জান্নাত দান করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করে যে সে তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করেনি, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ২৮০)
৫. আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ: যারা ঈমান ও ইবাদতে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না পরকালে আল্লাহ তাদের সাক্ষাৎ দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার আকাঙ্ক্ষা করে সে যেন নেক আমল করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহাফ: ১১০)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।