মক্কায় মসজিদুল হারামের অভ্যন্তরে জমজম কূপের অবস্থান। এ কূপের পানি পৃথিবীর সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সর্বোত্তম পানি। ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী, নবী ইবরাহিম (আ.)-এর শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.)-এর পায়ের আঘাতে এই কূপের সৃষ্টি হয়েছিল। হজ ও ওমরা আদায়কারীর জন্য বিশেষভাবে এবং পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য সাধারণভাবে জমজমের পানি পান করা মোস্তাহাব। সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- নবীজি (স.) নিজে জমজম থেকে পানি পান করেছেন। (সহিহ বুখারি: ১৫৫৬)
জমজমের পানি পানের পদ্ধতি
জমজমের পানি দাঁড়িয়ে বা বসে উভয়ভাবে পান করা যায়। সাধারণত পানি পানের সুন্নত পদ্ধতি হলো- বসে পান করা। কিন্তু জমজমের পানি নবীজি দাঁড়িয়ে পান করেছেন বলে হাদিস রয়েছে। (সহিহ মুসলিম: ২০২৭) তাই কেউ নবীজির অনুসরণে দাঁড়িয়ে পান করলে অবশ্যই সওয়াব পাবেন। শামসুল আইম্মা হালওয়ানি রহ., শাইখুল ইসলাম খাহারযাদা রহ. (আলমুহিতুল বুরহানি: ১/১৭৯), ইবরাহিম হালাবি রহ. (শরহুল মুনইয়াহ: ৩৬), মোল্লা আলি ক্বারি রহ. (শরহুশ শামায়েল: ১/২৫০) প্রমুখ ফকিহ ও হাদিসবিশারদরা জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করাকে উত্তম ও আদব বলেছেন।
বিজ্ঞাপন
তবে বসে পান করাও জায়েজ। আলেমদের একাংশের মতে, সাধারণত দাঁড়িয়ে পানি পান করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে হাদিসে। তাই জমজমের পানিও বসে পান করা উত্তম। তাদের মতে, জমজমের পানি নবীজি হয়ত কোনো কারণবশত দাঁড়িয়ে পান করেছিলেন। হতে পারে নিচে কাদা বা স্যাঁতস্যাঁতে ছিল অথবা জমজমের পানি দাঁড়িয়েও পান করা যায়—সেটা বোঝানোর জন্য ইত্যাদি।
জমজমের পানি পানের সুন্নত
জমজমের পানি পানের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হয়ে পান করা। এছাড়াও কেবলামুখী হওয়া, বিসমিল্লাহ বলা, তিন শ্বাসে পান করা, পরিতৃপ্ত হওয়া, শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা ইত্যাদি জমজমের পানি পানের আদব। জমজমের পানি পান করার সময় আরেকটি বড় কাজ হলো দোয়া করা।
জমজমের পানি পানের দোয়া
জমজমের পানি পান করার সময় একটি দোয়া পাঠ করা সুন্নত। দোয়াটি হলো— اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْئَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَّرِزْقًا وَّاسِعًا وَّشِفَاءً مِّنْ كُلِّ دَاءٍ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিআও ওয়া রিজকান ওয়াসিয়াও ওয়া শিফাআম মিন কুল্লি দা-ইন।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং যাবতীয় রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি।’ (দারা কুতনি: ৪৬৬)
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: খাওয়ার আগে-পরের দোয়া
অন্যান্য দোয়াও করা যাবে। পূর্বসূরি মনীষীদের জীবনিতিহাসে দেখতে পাই, তারা জমজমের পানি পানের সময় বিভিন্ন দোয়া করতেন। ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) জমজমের পানি পান করতেন স্মৃতিশক্তির জন্য। প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা ইবনুল আরাবি (রহ.) প্রতিবার জমজমের পানের সময় ইলম ও ঈমানের নিয়ত করতেন। হাকিম আবু আবদুল্লাহ (রহ.) জমজমের পানি পান করেন উৎকৃষ্ট রচনা সংকলনের নিয়তে। ফলে তিনি ছিলেন স্বীয় যুগের সবচেয়ে ভালো মানের লেখক ও সংকলক। ইবনুল জাজারি (রহ.)-এর পিতা ৪০ বছর পর্যন্ত কোনো সন্তান লাভ করেননি। এরপর পুণ্যবান সন্তান পাওয়ার নিয়তে জমজমের পানি পান করলেন। পরে মুহাম্মদ আল জাজারির জন্ম হয়। হাফিজ ইবনে হাজার (রহ.) বর্ণনা করেন, ইমাম শাফেয়ি (রহ.) তীর নিক্ষেপে পারদর্শিতা অর্জনের নিয়তে জমজমের পানি পান করেন। ফলে প্রতি ১০টি তীরের ৯টিই তিনি লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে দিতে পারতেন। (ফায়জুল কাদির: ২/৫০৭; তাবাকাতুল হুফফাজ: ১/৫২২; আহকামুল কোরআন: ৩/৯৮; ফাতহুল কাদির: ২/৩৯৮-৪০০; আল গায়াহ: ১/৫৮)