শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

পরকালে ৫ কারণে মুমিন আফসোস করবে

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:২৭ পিএম

শেয়ার করুন:

পরকালে ৫ কারণে মুমিন আফসোস করবে

কেয়ামতের একটি নাম ইয়াওমুল হাসরা বা আফসোসের দিন। সেদিন জাহান্নামিদের যেমন আফসোসের অন্ত থাকবে না, মুমিনদেরও নানা কারণে আফসোস হবে। নিচে মুসলিম-অমুসলিমের আফসোসের কারণগুলো কোরআন-হাদিসের আলোকে তুলে করা হলো।

পরকালে মুমিনদের আফসোসের কারণ
১. নেতৃত্বের কারণে
যারা ক্ষমতা ও নেতৃত্বের জন্য লোভ করে এবং ক্ষমতা পাওয়ার পর যথাযথ দায়িত্ব পালন করে না তারা কেয়ামতের দিন আফসোস করবে। আবু হুরায়রা (রা.) নবী (স.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘অচিরেই তোমরা শাসক হওয়ার লোভ করবে। অথচ তার শেষ ফল লজ্জাকর ও অনুতাপের হয়। কেননা তা অতি উত্তম দুগ্ধদায়িনী (অর্থাৎ যখন তা লাভ হয়, তখন তো খুবই উত্তম মনে হয়) আর অতি নিকৃষ্ট ছাড়ানদাত্রী (অর্থাৎ যখন তা চলে যায়, তখন খুবই বেদনাদায়ক হয়)। (নাসায়ি: ৪২১১)


বিজ্ঞাপন


২. সুরা বাকারা না পড়ার কারণে
সুরা বাকারা পড়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও না পড়া আফসোসের কারণ হবে। কেয়ামতের দিন যখন এই সুরার বরকত ও বিনিময় প্রকাশিত হবে তখন মুমিন আফসোস করবে, কেন এই সুরা পড়েনি। আবু উসামা আল বাহিলি (রা.) বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা কোরআন পাঠ করো। কারণ কেয়ামতের দিন তা পাঠকারীর জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে উপস্থিত হবে। তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান পড়ো। কেয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি, যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা বাকারা পাঠ করো। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কারণ। (মুসলিম: ১৭৫৯)

আরও পড়ুন: বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ১০ সুরা

৩. অনর্থক কথা-কাজের কারণে
অনর্থক কথা ও কাজ ইসলামে একটি বাজে অভ্যাস। এই বাজে অভ্যাসের কারণে জান্নাতে যাওয়ার পরও মুমিনরা আফসোস করবে। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘জান্নাতিদের জান্নাতে যাওয়ার পর দুনিয়ার কোনো জিনিসের জন্য আফসোস থাকবে না। শুধু ওই সময়ের জন্য আফসোস হবে, যা আল্লাহর স্মরণ ব্যতীত অনর্থক কথা বা কাজে অতিবাহিত হয়েছে।’ (বায়হাকি: ৫০৯)

৪. জিকিরবিহীন বৈঠক-সমাবেশের কারণে
সামাজিক, অর্থনৈতিক, কিংবা রাষ্ট্রীয় যেকোনো বৈঠকে সাধারণত আল্লাহর স্মরণ করা হয় না। ইসলামের দৃষ্টিতে এটি অন্যায়। আল্লার ইচ্ছা ছাড়া যেহেতু কোনোকিছু হয় না, আল্লাহর রহমত ছাড়া যেহেতু এক কদম সামনে আগানো অসম্ভব, এমনকি এক মিনিট বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়, সেখানে আল্লাহর জিকির ছাড়া বৈঠক-অনুষ্ঠান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ সবকিছুই অজ্ঞতা ও আল্লাহবিমুখতার পরিচয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, যেসব লোক কোনো বৈঠকে বসেছে অথচ তারা আল্লাহ তাআলার জিকির করেনি এবং তাদের নবীর প্রতি দরুদও পড়েনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তাআলা চাইলে তাদের শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন। (তিরমিজি: ৩৩৮০)


বিজ্ঞাপন


৫. লোক দেখানো আমলের কারণে
কেয়ামতের দিন কিছু মানুষ এমন নেক আমলের ওপর আফসোস করবে যে আমলগুলো ছিল লোক দেখানো বা সুনাম খ্যাতির উদ্দেশ্যে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে এমন কিছু প্রকাশিত হবে, যা তারা ধারণাও করেনি।’ (সুরা জুমার: ৪৭)

পরকালে কাফেরদের আফসোসের কারণ
১. জান্নাতিদের সুখ-শান্তি দেখে
যখন নেককার লোকদেরকে জান্নাতে সুখ ও শান্তিময় জীবন যাপন করতে দেখবে এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের অধিবাসী হিসাবে দেখতে পাবে তখন আফসোস ও পরিতাপ করে বলবে, হায়! আমরাও যদি এ জীবনের জন্য সৎকর্ম সম্পাদন করতাম, তাহলে আজ আমাদের এই দুর্দশার শিকার হতে হতো না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং সেদিন জাহান্নামকে আনা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এই স্মরণ তার কী কাজে আসবে? সে বলবে, হায়, এ জীবনের জন্যে আমি যদি কিছু অগ্রে প্রেরণ করতাম!’ (সুরা ফাজর: ২৩-২৪)

আরও পড়ুন: জান্নাতের সুখ শান্তি

২. অসৎ বন্ধুত্বের কারণে
দুনিয়াতে যারা অসৎ লোককে বন্ধু বানিয়েছে এবং তাদের কারণে সেসব মানুষ বিপথগামী হয়েছে, সেদিন এর কারণে তারা আফসোস করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অপরাধী সেদিন স্বীয় হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায় আফসোস! আমি যদি রাসুলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম। হায়, দুর্ভোগ আমার! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমাকে তো সে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে উপদেশ পৌঁছার পর। আর শয়তান মানুষের জন্য মহাপ্রতারক।’(সুরা ফুরকান: ২৭-২৯)

৩. পথভ্রষ্ট নেতাদের অনুসরণের কারণে
দুনিয়াতে যারা ভ্রান্ত নেতাদের অনুসরণ করেছে এবং তাদের কথামতো নিজেদের জীবন-যাপন পরিচালনা করেছে, সেদিন তারা এর জন্য আফসোস করবে। কারণ তারা তখন বিশ্বাস করবে যে তারা দুনিয়াতে ভ্রান্ত পথে ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘তারা আরো বলবে, ‘হে আমাদের রব, আমরা আমাদের নেতা ও বড় লোকদের আনুগত্য করেছিলাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল। হে আমাদের রব, আপনি তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দিন এবং তাদের দিন মহা অভিসম্পাত।’ (সুরা আহজাব: ৬৭-৬৮)

৪. পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে উদাসীন থাকার কারণে
কেয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্য দেখে কাফেররা আফসোস করবে, আর মাটি হওয়ার ইচ্ছা করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম; যেদিন মানুষ তার কৃতকর্ম দেখতে পাবে এবং কাফের বলবে, হায়! আমি যদি  মাটি হতাম! (সুরা নাবা: ৪০)

আরও পড়ুন: মৃত্যুর কথা ভুলে থাকার পরিণাম

৫. মৃত্যু হবে না জেনে সবচেয়ে বেশি আফসোস
জাহান্নামিরা সবচেয়ে বেশি আফসোস করবে, যখন দেখবে মৃত্যুকে জবাই করে দেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ জীবনে আর কোনো দিন তাদের মৃত্যু হবে না। এ কথা যখন তারা বুঝতে পারবে তখন তাদের আফসোসের শেষ থাকবে না। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জান্নাতিরা জান্নাতে যাওয়ার পর আর জাহান্নামিরা জাহান্নামে যাওয়ার পর মৃত্যুকে উপস্থিত করা হবে, এমনকি জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থানে রাখা হবে। এরপর তাকে জবাই করে দেওয়া হবে, অতঃপর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দেবে যে হে জান্নাতিরা, (আর) মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামিরা, (আর) মৃত্যু নেই। তখন জান্নাতবাসীদের আনন্দের ওপর আনন্দ হবে। আর জাহান্নামিদের দুঃখের ওপর দুঃখ হবে। (বুখারি: ৬৫৪৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের মৃত্যুর আগে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভে বিশুদ্ধ ঈমানের সঙ্গে বেশি বেশি নেক আমলের তাওফিক দান করুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর