শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ১০ সুরা

প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

বিশেষ ফজিলতপূর্ণ ১০ সুরা

পবিত্র কোরআনের প্রতিটি সুরাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি সুরারই আলাদা মাহাত্ম্য রয়েছে। এর মধ্যে কিছু সুরা ও আয়াতের বিশেষ ফজিলত ও বৈশিষ্ট্যের কথা বলেছেন নবীজি (স.)। নিচে তেমনই ১০টি সুরা ও ফজিলত তুলে ধরা হলো-

১. সুরা ফাতিহা
সুরা ফাতেহা পবিত্র কোরআনের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ সুরা। তাওরাত, জবুর, ইনজিল, কোরআন কোনো কিতাবে এই সুরার তুলনীয় কোনো সুরা নেই। (বুখারি, মেশকাত: ২১৪২)
সুরা ফাতিহা এবং সুরা বাকারার শেষ তিনটি আয়াত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত বিশেষ নুর, যা ইতোপূর্বে কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি। (সহিহ মুসলিম: ৮০৬)
আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বলেন, একবার এক সফরে আমাদের এক সাথী জনৈক গোত্রপতিকে শুধুমাত্র সুরা ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন এবং তিনি সুস্থ হন। (সহিহ বুখারি: ৫৪০৫)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে জিবরাঈল (আ.) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরাঈল (আ.) ওপর দিকে এক শব্দ শুনতে পেলেন এবং চক্ষু আকাশের দিকে করে বললেন, এ হচ্ছে আকাশের একটি দরজা যা পূর্বে কোনোদিন খোলা হয়নি। সে দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন। যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। তা আপনার পূর্বে কোনো নবীকে প্রদান করা হয়নি। তা হচ্ছে সুরা ফাতিহা এবং সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত। (মুসলিম: ৮০৬)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত

২. সুরা বাকারা
সুরা বাকারাকে বলা হয় জিন শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে রক্ষার হাতিয়ার। নবীজি (স.) বলেন, ‘তোমাদের ঘরসমূহকে কবর সদৃশ করে রেখো না (অর্থাৎ নফল সালাতসমূহ বাড়িতে আদায় করবে)। কারণ, যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম:১৭০৯)। রাসুলুল্লাহ (স.) আরো বলেন, ‘কেউ যদি রাতে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট।’ (সহিহ বুখারি: ৫০০৯)
সুরা বাকারার ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে আরও এসেছে, ‘..তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান পড়ো। কেয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দুই খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি, যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা বাকারা পাঠ করো। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কারণ।’ (মুসলিম: ১৭৫৯)

৩. সুরা আলে ইমরান
কেয়ামতের দিন মেঘ খণ্ড হয়ে পাঠকারীকে ছায়া দেবে এই সুরা। নাওওয়াস ইবনু সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি নবী (স.)-কে বলতে শুনেছি কেয়ামতের দিন কোরআন ও কোরআন অনুযায়ী যারা আমল করত তাদেরকে আনা হবে। সুরা বাকারা এবং সূরা আলে ইমরান অগ্রভাগে থাকবে। রাসুলুল্লাহ (স.) সুরা দুটি সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন যা আমি কখনো ভুলিনি। তিনি বলেছিলেন, এ সুরা দুটি দুখণ্ড ছায়াদানকারী মেঘের আকারে অথবা দুটি কালো চাদরের মতো ছায়াদানকারী হিসেবে আসবে, যার মধ্যখানে আলোর ঝলকানি অথবা সারিবদ্ধ দু’ঝাঁক পাখীর আকারে আসবে এবং পাঠকারীদের পক্ষ নিয়ে যুক্তি দিতে থাকবে। (মুসলিম:১৭৬১)

৪. সুরা কাহাফ
দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি পেতে এই সুরার বিকল্প নেই। নবীজি (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত (আরেক বর্ণনা অনুযায়ী শেষ দশ আয়াত) মুখস্থ করবে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হবে।’ (সিলসিলাহ সহিহা: ৫৮২, আলবানি)
আরেক হাদিসে নবীজি বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নূর চমকাবে’ (সিলসিলাহ সহিহা: ৭৩৬, আলবানি)


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন: জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বেন যে কারণে

৫. সুরা মুলক
সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে, এই সুরা পাঠকারীর জন্যে সুপারিশ করবে। কবরের আজাব থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরাতে এই সুরা পাঠের কথা বলেছেন নবীজি (স.)। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘কোরআনে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)।’ (আবু দাউদ: ১৪০০; তিরমিজি: ২৮৯১)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতের বেলা তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক) তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। রাসুলুল্লাহ (স.) এর জামানায় আমরা এই সুরাকে “আল-মা’আনিয়াহ” বা সুরক্ষাকারী বলতাম। যে রাতের বেলা এই সুরাটি পড়ল সে খুব ভালো একটি কাজ করল’। (নাসায়ি ৬/১৭৯, আলবানির মতে হাদিসটি হাসান সহিহ, সহিহ আত-তারগিব ওয়াত তারহিব: ১৪৭৫)

৬. সুরা ওয়াকিয়া 
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, সুরা ওয়াকিয়া দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয়। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করবে, তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ২৪৯৮)
আলেমরা বলে থাকেন, এই সুরার বিশেষ দিক এটাই যে ধনাঢ্যতা লাভ করতে চাইলে এই সুরার চেয়ে বেশি কার্যকর কোনোকিছু নেই এবং এর সুফল কোরআন নাজিলের পর থেকে সবসময় পরীক্ষিত। ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তাঁর মেয়েদেরকে প্রতি রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন।’ (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ২৪৯৮)

৭. সুরা হাশর
এই সুরাকে বলা হয় জান্নাত লাভের মাধ্যম। ‘যে ব্যক্তি দিনে অথবা রাতে সুরা হাশরের শেষ আয়াত পড়বে, সে যদি সেদিন অথবা সে রাতে মৃত্যুবরণ করে, তার জন্য জান্নাত আবশ্যক।’ জইফ আল-জামি আস-সাগির: ৫৭৭০)। মাকাল বিন ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন—‘যে ব্যক্তি সকালে তিনবার আউজু বিল্লাহিস সামিইল আলিম মিনাশশাইত্বানির রাজিমসহ সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তেলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তির জন্যে ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন; যারা ওই ব্যক্তির জন্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকবে। আর এ সময়ের মধ্যে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহিদি মৃত্যু লাভ করবে। আর যে এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে অতঃপর ওই রাতে মারা যায়, তবে তারও একই মর্যাদা রয়েছে।’(সুনানে তিরমিজি: ৩০৯০; আবু দাউদ: ২৯২২; মুসনাদ আহমদ: ১৯৭৯৫; কানজুল উম্মাল: ৩৫৯৭)

আরও পড়ুন: সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফজিলত

৮. সুরা ইখলাস ৯. সুরা ফালাক ১০. সুরা নাস
এই তিন সুরার ফজিলত অনেক বেশি। মহানবী (স.) সুরা ইখলাস সম্পর্কে শপথ করে বলেন, ওই সত্তার শপথ, যার কুদরতের হাতে আমার জীবন, অবশ্যই এ সুরা কোরআন মাজিদের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারি: ৫০১৩, আবু দাউদ: ১৪৬১, নাসায়ি: ২/১৭১, মুআত্তা মালেক: ১/২০৮)
উকবাহ ইবনু আমির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে বললেন- আজ রাতে যে আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছে সেগুলোর মতো আর কখনো দেখা যায়নি। সেগুলো হলো- “কুল আউযু বিরব্বিল ফালাক” এবং “কুল আউযু বিরব্বিন না-স”-এর আয়াত।’ (সহিহ মুসলিম: ৮১৪)
আবদুল্লাহ ইবন খুবায়ব তার পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর রাতে গভীর অন্ধকারে আমাদের জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে আমারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে তালাশ করতে বের হলাম। এক স্থানে গিয়ে আমি তাঁকে পেলাম। তখন তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় আমাকে বললেন, বলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি বলব? তিনি বললেন, ‘সকাল-সন্ধ্যায় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ (সুরা ইখলাস) এবং মুআও’ওয়াযাতাইন (সূরা ফালাক, নাস) তিন বার পাঠ করবে; তবে তা সব কিছুর ক্ষেত্রে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।’ (তিরমিজি: ৩৫৭৫; সনদ হাসান)

আয়াতুল কুরসি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আয়াত
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি শোবার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তাহলে সকাল পর্যন্ত একজন ফেরেশতা তাকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করে।’ (সহিহ বুখারি: ৩২৭৫)
আবু উমামাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো বাঁধা থাকবে না। (নাসায়ি: ৯৪৪৮; তাবারানি: ৭৮৩২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উল্লেখিত সুরা ও আয়াতগুলো বেশি বেশি পাঠ করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে বর্ণিত ফজিলত দান করুন। আমিন।

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর