মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘আমার পাশের বাড়ির সবাই মারা গেছে’

আজিম বাপ্পি
প্রকাশিত: ০২ মার্চ ২০২২, ০৩:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘আমার পাশের বাড়ির সবাই মারা গেছে’

ঘুম ভেঙেছে গুলি, মিসাইল আর সাইরেনের শব্দে। জেগে ওঠার পর পালানোর চেষ্টা। কারণ এক মুহূর্ত বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা নেই। যেকোনো সময় বুক ঝাঁঝরা হয়ে যেতে পারে রুশ সৈন্যদের গুলিতে। ক’দিন আগেও যেখানে ছিল জনকোলাহল,নানান স্বপ্নের বুনন- সেখানে এখন ভর করে আছে আতঙ্ক। বাংলাদেশের আতাউদ্দিন হায়দার চৌধুরী শুভ যখন এই বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন তার গলার স্বর অস্পষ্ট। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের যে ভবনে তিনি আছেন সেটি সম্পূর্ণ ফাঁকা। কেউ নেই আশপাশে। প্রতিবেশী একটি পরিবারের সঙ্গে তার ছিল বেশ সখ্যতা। মস্কোর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মারা গেছেন সেই পরিবারের সবাই।

চোখের সামনে পরিচিত মানুষগুলোর মৃত্যু তাকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। তার জীবনের স্বাভাবিকতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে। এখন কোনোরকম বাংলাদেশে আসতে পারলেই তিনি বেঁচে যান। শুভর সঙ্গে কথা বলার সময় মোবাইলে শোনা যাচ্ছিল বিস্ফোরণের শব্দ। তখন একের পর এক মিসাইল পড়ছে। তিনি বলেন, বিমান থেকে মিসাইল ছুড়ছে মস্কো। অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। ওই পরিবারটির মৃত্যুর পর আমার এক প্রতিবেশী (পাকিস্তানি) দৌড়ে আমার বাসায় আসেন। তিনি আমাকে এখনই কিয়েভ ত্যাগ করতে বলেন। সকাল হলেই লিভিভের উদ্দেশে রওনা হবো। অনেক সময় লাগবে সেখানে পৌঁছাতে।
 
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে শুভ বলেন, ‘আমি যে গ্রামে ছিলাম তা এখন রাশিয়ার দখলে। সেখান থেকে ইউক্রেনীয়দের বের হতে দিচ্ছে না। যে যার ঘরে অবস্থান করছে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। অনেক কষ্টে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছি। কথা বলতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। মানসিকভাবে অনেক বিধ্বস্ত আমি।’


বিজ্ঞাপন


আপনি এতদিন কোথায় আর কিভাবে ছিলেন জানতে চাইলে ইউক্রেন প্রবাসী এই ব্যবসায়ী বলেন, এখানকার মেট্রোরেলের পাতাল সড়কগুলোর গভীরতা অনেক বেশি হওয়ায় মিসাইল আঘাত হানতে পারে না। আমিসহ আরও অনেক বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও আফ্রিকান নাগরিক সেখানে অবস্থান করেছি। আঠারো থেকে ষাট বছর বয়সের ইউক্রেনীয়রা যুদ্ধে গেছে। বাকি ষাটোর্ধ্ব এবং শিশুরাও আমাদের সঙ্গে এখানেই অবস্থান করছে।

ঢাকা মেইলের সঙ্গে কথা বলেন আরেক ইউক্রেন প্রবাসী আরিফ চৌধুরী। তিনি বর্তমানে পোল্যান্ডের মেজুকা বর্ডারের কাছে একটি রেল স্টেশনে আছেন। তিনি জানান, আসলে মৃত্যু যে কত কাছে আর কতভাবে হতে পারে তা অনেক কাছে থেকে দেখেছি। রাতে ঘুমিয়েছি কিন্তু বাড়ির চারপাশেই বম্বিং হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি রাশিয়ান সৈন্যদের দেখিনি, কিন্তু তাদের ধ্বংসস্তুপ দেখেছি। রাশিয়ান সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ করে এই প্রবাসী বলেন, রুশ সৈন্যরা যখন সরাসরি যুদ্ধে ইউক্রেনীয়দের সঙ্গে পেরে উঠছিল না তখন তারা চিকিৎসা, পানি ও গ্যাস সংযোগ মেরামতের নামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্থানীয়দের হত্যা করছে। এই ভয় থেকেই মূলত আমরা কিয়েভ ছেড়েছি। পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে আছি। 

ইউক্রেনে পড়তে গিয়েছেন আবুবক্কর। তিনি বলেন, ‘আমরা কিয়েভে থাকতাম। সেখানকার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। জীবনের নিরাপত্তার জন্য আমরা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের বলেছে কোনো ধরনের হেল্প লাগলে তারা করবে। পাসপোর্ট নিয়ে আসায় তারা (পোল্যান্ড) আমাদের ১৫ দিনের ভিসা দিয়েছেন।’

উল্লেখ্য, ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পর দেশটিতে সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে  চলছে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ। কিয়েভ পতনের লক্ষ্যে দিন দিন আক্রমণের তীব্রতা বাড়াচ্ছে মস্কো। রুশ বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে দেশত্যাগ করছে অনেক ইউক্রেনীয়। 


বিজ্ঞাপন


এইউ/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর