শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

বিহারি ক্যাম্পে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২২৮ কোটি টাকা

কাজী রফিক
প্রকাশিত: ২৭ আগস্ট ২০২২, ১০:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

বিহারি ক্যাম্পে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২২৮ কোটি টাকা
মিরপুর বিহারি ক্যাম্প। ছবি: সংগৃহীত

সারাদেশে উর্দুভাষীদের ক্যাম্প রয়েছে ১১৫টি। এরমধ্যে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে ক্যাম্প রয়েছে ৪৫টি। বছরের পর বছর ধরে এসব ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। প্রায় ছয় বছরে বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে মিরপুরে বকেয়া ১৫৭ কোটি টাকা আর মোহাম্মদপুরে বকেয়া ৭১ কোটি টাকা।

বিলের জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে হামলার শিকার হতে হয় বিদ্যুৎ কর্মীদের। এই ভয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে যান না তারা। অপর দিকে উর্দুভাষীরা বলছেন, তাদের বিদ্যুৎ বিল আগে দিত বিদেশি সংস্থা। ২০১৬ সাল থেকে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এরপর থেকে বিদেশি সংস্থা আর বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে না। এ কারণে এই বিল বকেয়া পড়েছে। তাদের কিছু দাবি-দাওয়া রয়েছে। সেগুলো পূরণ না হওয়ায় তারা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করছেন না।


বিজ্ঞাপন


গত ১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি—একনেক বৈঠকে বলেছেন, ‘আমার কাছেও বিল বকেয়া থাকলে একই ব্যবস্থা নিন। সরকারি-বেসরকারি অফিসের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। বিল আদায় করতে হবে।’

তবে সরকারপ্রধানের এমন বক্তব্যের পরও বিহারি ক্যাম্পগুলোর বিদ্যুৎ বিল আদায়ের কোনো তোড়জোড় লক্ষ্য করা যায়নি। বিচ্ছিন্ন করা হয়নি কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ।

আরও পড়ুন: বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


বিজ্ঞাপন


মিরপুরে অবাঙালি ক্যাম্প রয়েছে ৩৯টি। এসব ক্যাম্পে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে ১৫৭ কোটি টাকা।

মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্প, মার্কেট ক্যাম্প, সিআরও ক্যাম্প, টাউন হল ক্যাম্পসহ মোট ছয়টি ক্যাম্প রয়েছে। এখানে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়েছে ৭১ কোটি টাকা।  

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) শ্যামলী সাব-স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বিদ্যুৎ বিলের জন্য সংযোগ বিছিন্ন করার নির্দেশ আছে তাদের ওপর। কিন্তু বিহারিদের ক্ষেত্রে তারা সে নিয়ম পালনে ব্যর্থ।

শ্যামলী সাব-স্টেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘লাইন কাটলেই তারা গণ্ডগোল শুরু করে। রাস্তা অবরোধ করে। প্রচুর টাকা বকেয়া। তবুও কিছু করা যাচ্ছে না।’

একই ভাষ্য, মিরপুরের ক্যাম্পগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা ডেসকোর (ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি)। ২০১৬ সালের পর মিরপুরের ৩৯টি ক্যাম্পের বিদ্যুৎ বিল পাননি তারা। বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৭ কোটি টাকা।

bihari1

এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে একটি মামলা চলমান। মামলার বাদী উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্ট (ইউএসপিওয়াইআরএম) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদাকাত খান ফাক্কু। আগামীকাল রোববার (২৯ আগস্ট) এই মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। সিদ্ধান্ত আসতে পারে, উর্দুভাষীদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে।

 ঢাকা মেইলকে এই নেতা জানান, ২০১৬ সাল থেকে তাদের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। বিষয়টি নিয়ে ২০১৮ সালে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। বিপণন সংস্থা ক্যাম্পগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। পরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে উচ্চ আদালতে রিট করেন তিনি।

আরও পড়ুন: এক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চলছে: প্রতিমন্ত্রী

ফাক্কু বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ বিল তো বাংলাদেশ সরকার দিত না। দিত বৈদেশিক সংস্থা। ২০১৬ সাল থেকে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে এই সেবা বন্ধ করে দেওয়া হলো। একটা জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আমাদের কী লাভ হয়েছে? আমরা তো কিছু পাইনি। আমাদের কিছু দাবি আছে। সেগুলো পূরণ করতে হবে।’

বকেয়া ২২৮ কোটি টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে এই বিল উর্দুভাষীরা দেবে না বলে স্পষ্ট জানান উদুর্ভাষী নেতা।

ফাককু বলেন, ‘বকেয়া বিল আমরা দেব না। এটা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমরা কেন এই বিল দেব?’

কারই/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর