ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট পর্যবেক্ষণে দেশের সব ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। যেসব ভোটকেন্দ্রে আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলো সচল রাখার পাশাপাশি যেসব কেন্দ্রে নেই, সেখানে শুধু ভোটের দিনের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
ইসির সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সচিব এবং বিভাগের প্রধানদের বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞাপন
ইসি সূত্র জানায়, শুরুতে নির্বাচন ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কায় ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে কমিশন আগ্রহী ছিল না। তবে মাঠপর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রেই আগে থেকেই সিসি ক্যামেরা আছে। সেগুলো সচল রাখা গেলে অতিরিক্ত ব্যয় তেমন বাড়বে না। আর যেসব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা নেই, সেখানে কেবল ভোটের দিনের জন্য অস্থায়ীভাবে ক্যামেরা বসানো হবে।
এতে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা বাড়বে, ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং কোনো ধরনের অপরাধ ঘটলে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দ্রুত অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন।
ইসি সূত্র আরো জানায়, যেসব ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান সিসিটিভি সংযোগ সচল রাখা এবং যেসব কেন্দ্রে সিসিটিভি নেই, সেসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ বা কর্তৃপক্ষকে অন্তত ভোটের দিনের জন্য সিসিটিভি সংযোগের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভোটকেন্দ্রের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে প্রায় ৪২ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এসব কেন্দ্র ভোটারের চলাচল উপযোগী করতে হবে। তাছাড়া, ভোটকেন্দ্রের অবকাঠামো সংস্কারও প্রয়োজন। যেসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ নাই, সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। ভোটকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত যেসব প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি আছে, সেগুলোকে সচল রাখতে নির্দেশনা দিতে হবে।’
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, ভোটকেন্দ্রে বিদ্যমান সিসিটিভি সংযোগ সচল রাখতে হবে। যেসব কেন্দ্রে সিসিটিভি সংযোগ নেই সেসব কেন্দ্রের পরিচালনা পর্ষদ বা কর্তৃপক্ষকে ভোটের দিনের জন্য সিসিটিভি সংযোগের ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করতে হবে। নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিড মিনিস্ট্রি হিসেবে কাজ করবে। নিরাপত্তার জন্য ব্যাপকভাবে পরিকল্পনা করতে হবে। নির্বাচনে ৪টি বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। সেগুলো হলো- ১. জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ২. পোস্টাল ভোট ৩. সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার প্রতিরোধ ৪. নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সঠিক তথ্য ব্যাপকভাবে প্রচার। প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের ভোটের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিশেষ করে সাইক্লোন সেন্টারে। স্থানীয় সরকারের অফিসগুলো যেন রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিবেন বলে সভায় সবার উদ্দেশ্যে বলেন তিনি।
ওই সভায় নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ভোটের দিন সন্ধ্যার পর ভোটকেন্দ্রে বিদ্যুৎ সংযোগ অত্যাবশ্যক। প্রিজাইডিং অফিসার ভোটকেন্দ্রের সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ভোটকেন্দ্র সরাসরি পরিদর্শন করবেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র সশরীরে পরিদর্শন করবেন।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, দেশের ৬৪ জেলায় ৩০০ আসনে মোট ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯। এছাড়া অস্থায়ী ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রাথমিকভাবে ১৪টি।
এদিকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮ হাজার ২২৬টি ভোটকেন্দ্রকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইসি ‘ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র’ বলতে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে বোঝায়। এবারে একসঙ্গে দুই ধরনের ভোট হওয়ায় এ সংখ্যা বাড়তে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে ও পার্বত্য অঞ্চলের সাধারণ কেন্দ্রে ১৬ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন করে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন ছিল। মেট্রোপলিটন এলাকায় সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ৭২ জন এবং আনসার সদস্য ছিলেন ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন। পাশাপাশি মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে ১ হাজার ১১৫ প্লাটুন বিজিবি, কোস্টগার্ড ৭৫ প্লাটুন, র্যাব ৬০০ টিম, সেনাবাহিনী ৩৮ হাজার ১৫৪ জন, নৌবাহিনী দুই হাজার ৮২৭ জন নিয়োজিত ছিল।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৪৪ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ছিল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল, ভোটকক্ষ ছিল ২ লক্ষাধিক। দশম সংসদ নির্বাচনে ৩৭ হাজার ৭০৭টি; ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। নবম সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি; ভোটকক্ষ ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা টানা ৯ ঘণ্টা ধরে ভোটগ্রহণ করা হবে।
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ও প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনি প্রচার চলবে ২২ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
এমএইচএইচ/এমআর

