সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তফসিলে স্বস্তি, ভোটে অনিশ্চয়তা কাটার আশায় ব্যবসায়ীরা

মহিউদ্দিন রাব্বানি
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

তফসিলে স্বস্তি, ভোটে অনিশ্চয়তা কাটার আশায় ব্যবসায়ীরা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ও গণভোটের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশ নির্বাচনের ট্রেনে উঠে গেছে। ভোট নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল সেটা অনেকটা কেটে গেছে। এতে অন্যান্য পেশাজীবীদের মতো ব্যবসায়ীদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরেছে। অর্থনীতি ও বিনিয়োগে যে স্থবিরতা বিরাজ করছে সেটা এই নির্বাচনের মাধ্যমে কেটে যাবে বলে আশা করছেন তারা। এজন্য নির্বাচন যেন যথাসময়ে হয় এবং সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ী মহল।  

গত কয়েক মাস ধরেই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল পাঁচ দফা দাবিতে মাঠের কর্মসূচিও পালন করেছে। তবে শেষ দলগুলো মাঠের কর্মসূচি থেকে সরে এসে এবার নির্বাচনমুখী হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। তাদের প্রত্যাশা, সময়মতো নির্বাচন হলে স্থিতিশীলতা ফিরবে, যা অর্থনীতিকে নতুন করে প্রাণ দেবে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

রাজনৈতিক অস্থিরতায় ধুঁকছে অর্থনীতি, ভোটের অপেক্ষায় ব্যবসায়ীরা

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে, এটা আমাদের জন্য স্বস্তির খরব। তবে নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারেও লক্ষ্য রাখতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকতে হবে। নির্বাচন বানচালের যেকোনো ষড়যন্ত্র অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রুখে দিতে হবে।

ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা- আস্থার পরিবেশ তৈরি হবে

ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনিশ্চয়তার মধ্যে একটা নির্বাচনের অপেক্ষায় ছিলেন তারা। কারণ, নতুন বিনিয়োগ এগোচ্ছিল না, বড় অর্ডারের সিদ্ধান্তও আটকে ছিল। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে এখন সামনে একটি পরিষ্কার টাইমলাইন দেখা যাচ্ছে। এটি বাজারে আস্থা তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।  


বিজ্ঞাপন


call

তারা বলছেন, যেকোনো অর্থনীতিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হলো সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নতুন করে বাংলাদেশের বাজারকে বিবেচনায় নেবেন।

এফবিসিসিআই একজন সাবেক পরিচালক মনে করেন, স্বাভাবিক ব্যবসায়িক পরিবেশ ফিরতে শুরু করেছে। তার ভাষায়, আমরা ব্যবসায়ীরা চাই- নির্বাচন হোক সময়মতো এবং হোক শান্তিপূর্ণ। তাহলে বাজারে যে ধীরগতি ছিল তা কেটে যাবে। ব্যাংকিং খাতেও তারল্য বাড়বে, ঋণ কার্যক্রম আবার সক্রিয় হবে।

বিনিয়োগে গতি ফেরাতে স্থিতিশীলতা জরুরি

বিদেশি বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়েও আশাবাদী বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিডার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি চিন্তায় ফেলে। নির্বাচন ঘিরে পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে আমরা বেশ কয়েকটি আটকে থাকা বিদেশি বিনিয়োগ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের সম্ভাবনা দেখছি।

আরও পড়ুন

‘ভঙ্গুর অর্থনীতিতে গতি ফিরেছে, তবে আত্মতুষ্টির জায়গায় পৌঁছাতে পারিনি’

সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) এর চেয়ারম্যান এবং সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেছেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি ঘটবে।

মাসরুর আরেফিন বলেন, বর্তমানে ক্রেডিট গ্রোথ কিছুটা ধীর। ব্যবসায়ীরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন- এটা স্বাভাবিক, কারণ তারা জানতে চান দেশ কোন দিকে যাচ্ছে। আগের তুলনায় মূল্যস্ফীতি বেশ কমেছে। ১২ শতাংশ থেকে এখন নেমে এসেছে ৮.১৭ শতাংশে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য এটি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।

শেয়ারবাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত

তফসিল ঘোষণার পর শেয়ারবাজারে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রতিনিধিরা। ব্যবসায়ী বলেন, বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষারত অবস্থানে থাকলেও বাজারে ইতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে। বাজার আরও সক্রিয় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের খুচরা বাজার- বিশেষ করে আমদানিনির্ভর পণ্যের দামও স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক থাকলে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকে। এতে অযৌক্তিক দাম বৃদ্ধি থেমে যায় এবং ভোক্তা আস্থাও বাড়ে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখলে নির্বাচনের আগে কোনো বড় ধরনের অস্থিরতা হবে না। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে পরিবহন ও সাপ্লাই চেইন-সব খাতই স্বাভাবিকভাবে চলবে।

54

তারা বলছেন, সময়মতো নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে রাষ্ট্রব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষা পায়। আর সেই ধারাবাহিকতা ব্যবসা ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্থবিরতা কাটবে, আশায় ব্যবসায়ীরা

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি ও হক বে’র চেয়ারম্যান আব্দুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা বলবো নির্বাচন হলে দেশে-বিদেশে একটা ইতিবাচন পরিবেশ তৈরি হবে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হবে না। ফলে ব্যবসায়ীসহ সব মহলই সময় মতো নির্বাচন হোক- এটা চায়। আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু সুন্দর একটি নির্বাচন। স্থবির হয়ে পড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প খাত নতুন উদ্যোমে ঘুরে দাঁড়াবে। দেশি বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে।

তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে কোনো সন্দেহ করা উচিত নয়। যারা নির্বাচন চায় না তারা কায়েমি স্বার্থবাদী। অধিকাংশ মানুষই নির্বাচন চায়।

আরও পড়ুন

অভিভাবকহীন এফবিসিসিআই, নানা জটিলতায় ব্যবসায়ীরা

সরকার অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব আবদান রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খাদের কিনার থেকে তুলে এনেছে। ব্যাংক খাত সংস্কার, ডলার সংকট মোকাবেলাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বাস্তবায়নও করেছে অনেকটা। লাগাম টেনে ধরেছে মুদ্রাস্ফীতির। যদিও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকে। তবে সেটা রাজনৈতিক সরকার ছাড়া সম্ভব নয়। ফলে সময় মতো নির্বাচন হলেই ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে আমাদের প্রত্যাশা।

এ প্রসঙ্গে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সম্প্রতি ঢাকা মেইলকে বলেন, অনেকেই আমাদের দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ না থাকায় বিনিয়োগ করতে চান না। তারা আমাদের দেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, দেশে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য এক অনিশ্চিত ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ক্ষতি। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশে শিল্প-উৎপাদন এবং আমদানি-রফতানি খাত।

পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. এম মাশরুর রিয়াজ ঢাকা মেইলকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। সামনে রাজনৈতিক নতুন নতুন দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়মিত কাজে কিছুটা তো ব্যাঘাত ঘটবেই। এছাড়া আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ নেতিবাচক পর্যায়ে রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশ না হলে তা বিনিয়োগে আসবে না।

এমআর/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর