শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫, ঢাকা

নির্বাচনে শৃঙ্খলা আনতে আরপিও ও আচরণবিধি সংশোধনের পথে ইসি

মো. মেহেদী হাসান হাসিব
প্রকাশিত: ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

* আচরণবিধি ভাঙলে বাতিল হতে পারে প্রার্থিতা

* সোশাল মিডিয়ায় প্রচার, পলিথিন পোস্টারে নিষেধাজ্ঞা আসছে


বিজ্ঞাপন


* আচরণবিধি প্রতিপালনে দলীয় অঙ্গীকার বাধ্যতামূলক

* মনোনয়ন, প্রচার, হলফনামা নিয়ে যুক্ত হচ্ছে নতুন বিধান

* জুলাই-আগস্টেই প্রস্তুতি শেষ করার পরিকল্পনা ইসির

* ভুল তথ্য, ঋণখেলাপি ও আচরণবিধি লঙ্ঘনে কঠোর হচ্ছে নির্বাচন কমিশন


বিজ্ঞাপন


চলতি বছরের ডিসেম্বর সামনে রেখে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও প্রভাবমুক্ত করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) এবং প্রার্থীদের আচরণবিধিতে একগুচ্ছ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে নির্বাচনী হলফনামায় ভুল তথ্য প্রদান , ঋণখেলাপি কিংবা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে বাতিল করা হতে পারে সংসদ সদস্যদের পদ।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, ঋণখেলাপি ও হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে ভোটের পরেও ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান যুক্ত করার প্রস্তাব থাকবে আমাদের। সেই সঙ্গে ভালো নির্বাচনের জন্য সংস্কার কমিশনের কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করলেও অসুবিধা নেই।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) প্রার্থীর যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নির্ধারণে নতুন ধারাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে

ঋণখেলাপিদের বিষয়ে কঠোরতা অবলম্বন করে প্রয়োজনে সংসদ সদস্য পদ বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রার্থী হলফনামায় মিথ্যা বা গোপন তথ্য দিলে শুধু নির্বাচন বাতিল নয়, ভবিষ্যতেও তার নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্যতা কার্যকর হবে। মনোনয়ন ও বাছাইয়ের সময়সীমা নির্ধারণ, স্বতন্ত্র প্রার্থীর শর্ত সহজ করতে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষরের পরিবর্তে মাত্র ৫০০ ভোটারের সমর্থন নিতে হবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। একাধিক আসনে প্রার্থী হওয়ার বিধান বাতিল, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকা ব্যক্তি নির্বাচন করতে চাইলে তিন বছর আগেই পদ ছাড়তে হবে না, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধি পদত্যাগ না করলে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না।

আচরণবিধি নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আচরণবিধি যেটি আছে, সেটি একটু নতুন আঙ্গিকে আমরা দাঁড় করাচ্ছি। নতুন আঙ্গিকে বলতে নতুন কিছু এখানে ইনকরপোরেট হবে। বিদ্যমান আচরণ বিধিমালায় নির্বাচনী প্রচারে ভিআইপিরা যেন কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে অংশ নিতে না পারেন, সে বিষয়টি রয়েছে। এর সাথে নির্বাচিত সরকারের বাইরেও, যেমন বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রয়েছে বা ভবিষ্যতে কেয়ারটেকার সরকার থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে পদ-পদবি বা মন্ত্রী বা ভিআইপির সাথে উপদেষ্টা শব্দটিও ইনকরপোরেট করার প্রস্তাব করব আমরা।

তিনি আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ ভালো নির্বাচনের জন্য যেগুলো সহায়ক হবে সে পয়েন্টগুলো আমরা ইনকরপোরেট করার চেষ্টা করেছি।

এদিকে প্রার্থীদের আচরণবিধিতে বড় পরিবর্তন এনে নতুন করে সাজাতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদ্যমান আচরণ বিধি ২০০৮ প্রণীত যা সংশোধন করে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালা ২০২৫’ নাম দেওয়া হবে। 

নতুন আচরণবিধিতে যা থাকছে

নির্বাচনকালীন বা কেয়ারটেকার সরকারের সদস্য, উপদেষ্টা, ভিআইপি কেউ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। পলিথিন, প্লাস্টিক ব্যানার নিষিদ্ধ করা হবে। বিকল্প হিসেবে ব্যানার বা পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের চিন্তা চলছে। ফেসবুক-ইউটিউবসহ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রচারের সুযোগ থাকলেও সে প্রচারের ব্যয় নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রচারের আইডি জমা দিতে হবে।
উস্কানিমূলক বা মানহানিকর বক্তব্যের শাস্তি হিসেবে অর্থদণ্ডের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রচারণায় মাইকের ৬০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ হলে তা বিধি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান যুক্ত হচ্ছে নতুন আচরণবিধিতে।

এছাড়া প্রতীক বরাদ্দের আগে আচরণবিধি মানার দলীয় অঙ্গীকার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলে দল ও প্রার্থী দু’জনকেই জবাবদিহি করতে হবে।

এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন এক বক্তব্যে বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায় শুধু প্রার্থীর নয়, দলকেও নিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে সকল দলের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নেওয়া হতে পারে।

এদিকে সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আমলে নিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাচনকালীন সময়কে তিন ভাগে ভাগ করার উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। যেখানে নির্বাচনপূর্ব সময়: সংসদের মেয়াদ শেষ থেকে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত, নির্বাচনকালীন সময়: তফসিল ঘোষণা থেকে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত, নির্বাচন পরবর্তী সময়: গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৪৫ দিন ধরা হয়েছে।

ইসি কর্মকর্তা জানান, সংসদ নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি জুলাই-আগস্টের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে। সংশোধিত আইন ও বিধি মুদ্রণ, বিতরণ এবং মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণের কাজ সম্পন্ন করে অক্টোবরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ইতোমধ্যেই ইসিকে ‘অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে’ আইন, বিধি ও নীতিমালার প্রস্তাব পাঠাতে বলেছে। আমরা দ্রুততম সময়ে এই প্রস্তাব পাঠাব। এরপর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পর অধ্যাদেশ বা গেজেট আকারে সংশোধন প্রকাশের উদ্যোগ নেবে।

এমএইচএইচ/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এই ক্যাটাগরির আরও খবর

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর