মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ঢাকা

হাওরপারে আমনের পর বোরো ফসলেও ক্ষতির শঙ্কা

জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪৮ পিএম

শেয়ার করুন:

হাওরপারে আমনের পর বোরো ফসলেও ক্ষতির শঙ্কা
হাওরপারে আমনের পর বোরো ফসলেও ক্ষতির শঙ্কা..

‘ভাগ্য খারাপ। আমন ফসলে ক্ষতি হয়েছে, ভাবছিলাম বোরো ফসলে কিছুটা পুষিয়ে নেব। কিন্তু এবার তাও হলো না,’ — এমনই আক্ষেপ জানালেন হাওরপারের চাষি বাচ্চু মিয়া।

প্রতি বিঘায় যেখানে ১৮ থেকে ২০ মণ বোরো ধান পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে মিলছে মাত্র ৮ থেকে ১০ মণ। যদিও ধানের ছড়ায় চেহারায় ভালো মনে হচ্ছিল, কাটার পর দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ ধানই চিটা। এমন অভিযোগ আরেক চাষি আহমদ মিয়ার।


বিজ্ঞাপন


মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের এই চাষিরা জানালেন, টানা খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে হাওরের বিস্তীর্ণ জমি শুকিয়ে যায়। ফলে ধানে পোকা ও চিটা দেখা দেয়। এরপর শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাদের শেষ আশাও ধ্বংস করে দেয়।

স্থানীয় চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আমন ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তারা বোরো মৌসুমের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু এবারও প্রকৃতির প্রতিকূল আচরণ তাদের সে স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে।

চাষিরা বলছেন, আমনের পর বোরো ফসলেও ক্ষতি হলে তা কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। সংসারে টানাপোড়েন দেখা দেবে—এটাই এখন তাদের শঙ্কা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার তিনটি বড় হাওর—হাকালুকি, হাইলহাওর ও কাউয়াদীঘি ছাড়াও ছোট ছোট হাওর এবং উচ্চভূমিতে এ বছর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬২ হাজার ১০০ হেক্টর।


বিজ্ঞাপন


রসুলপুর এলাকার চাষি আব্দুর রকিব ৮ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘায় প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতি বিঘায় যেখানে ২০ মণ ধান পাওয়ার কথা, সেখানে ১০ মণ হবে কি না সন্দেহ আছে। এখন সংসার চালাতে ধারদেনার ওপর নির্ভর করতে হবে।’

পাড়াশিমইল গ্রামের চাষি মিজু আহমদ জানান, ‘এবার আমাদের অনেকেই আমন ফসল পাননি, বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গিয়েছিল। বোরো ফসলের ওপরই ভরসা ছিল। কিন্তু এখন তা থেকেও চিটা ও পোকার আক্রমণে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। ১০ বিঘা জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে, এখন খরচই ওঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’

বানেশ্রী এলাকার ষাটোর্ধ্ব চাষি পরিমল বিশ্বাস বলেন, ‘টানা খরা ও অনাবৃষ্টির কারণে হাওরের জমি শুকিয়ে যায়, এতে ধানে পোকা ও চিটা দেখা দেয়। ফলে এবার বোরো ধানের অর্ধেকও পাওয়া যাবে না।’

মৌলভীবাজার সদর উপজেলা হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, ‘২০২৪ সালের বন্যায় এই অঞ্চলের আমন ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন আবার শিলাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও পানির অভাবে বোরো ফসলও বিপর্যস্ত হয়েছে। হাওরের নদী-খাল খনন এবং পানির উৎস থাকলে এ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতো। কৃষকদের জন্য কৃষি ভর্তুকির দাবিও জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, মৌলভীবাজারের উপপরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, ‘বোরো ফসলের মোট ফলন ভালো হয়েছে, তবে কিছু জায়গায় প্রকৃতির বিরূপ প্রভাবে ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর