সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

ব্যাটারির চাপে আয়ে টান, পায়ে টানা রিকশাচালকদের দিন কাটছে টানাপোড়েনে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

‘ঢাকার রাস্তাঘাটে মানুষ কম বের হয়, আগের মতো আর ভাড়া হয় না। সারাদিনে ভাড়া মারি ৬০০-৭০০ টাকার। এই টাকা দিয়ে সংসার চলে না। এখনও কারো জন্য নতুন কাপড় কিনতে পারিনি। ইফতার করি শুধু মুড়ি, বুট আর খেজুর দিয়ে। ইফতারের বাজারে বেশি টাকা খরচ করলে, রাতের ভাত খাওয়ার বাজারের টাকা থাকবে না। রোজার মাস শুরু হওয়ার পর থেকে মাংস কিনছি একবার।’ এসব কথা বলছিলেন রিকশাচালক আমির হোসেন। এমন কথা শুধু তার একার নয়। আরও প্রায় ১০ জন রিকশাচালক একই রকম কথা বলেছেন। 

আমির হোসেন বলেন, আমার জন্মস্থান ভোলা। পরিবারের অল্প কিছু জমিজমা ছিল কিন্তু সেটা নদীতে তলিয়ে গেছে। তারপর ২০১২ সালে ঢাকায় আসি। আসার পর কোনো কাজ না পেয়ে রিক্সা চালানো শুরু করি। শুরুতে ভালোই কষ্ট হয়েছে। কিছু চিনতাম না, জানতাম না। কিন্তু পরে সব কিছু চিনে গেছি। সেই আগে থেকে দিন আনি দিন খাই। রোজা, ঈদসহ বিভিন্ন ভালো দিন আসলে শুধু বুঝতে পারি আমার সংসারের কি অবস্থা। ছেলে-মেয়ের জন্য ভালো কিছু করতে পারি না। এটাই সবচেয়ে বেশি দুঃখ লাগে।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, এখন আর আগের মতো ভাড়া হয় না। রিক্সা জমার ভাড়াসহ সব কিছুর দাম বাড়ছে। গত কোরবানির ঈদের পর এখনও গরুর গোস্ত কিনতে পারিনি। রোজার প্রথম দিন একটা মুরগি কিনছিলাম। তারপর থেকে সবজি, ডিম আর মাঝেমধ্যে মাছ খেয়েই দিন পার করছি। ইফতারের বাজার করলে, রাতের ভাত খাওয়ার বাজার করা হবে না; তাই ইফতারের সবচেয়ে কম জিনিসপত্র কিনি। এখন বাজারের টাকা আরও কমিয়ে দিয়েছি কারণ ছোট মেয়ে ও বউয়ের জন্য নতুন কাপড় কিনতে হবে। এসব অভাবের কথা কাউকে শুনিয়ে লাভ নাই৷ দিনশেষে আমার সংসার আমাকেই চালাতে হবে।

R2

ঢাকায় ১৪ বছর ধরে রিক্সা চালান কালু ব্যাপারী। ৬ সদস্যের একটা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম তিনি। রোজার মাসে নিম্ন আয়ের এই মানুষটি পড়েছেন চরম বিপাকে।

তিনি বলেন, দিনে আগে ১ হাজার টাকার বেশি ভাড়া হত। কিন্তু এখন সেটা ৭০০-৮০০ টাকায় নেমে আসছে। রিক্সার গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে নিজের কাছে আর পর্যাপ্ত টাকা থাকে না। যে টাকা থাকে সেটা দিয়ে সংসারের সবার মুখে তিন বেলা খাবার দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। রোজার মাস যে শুরু হয়েছে সেটার জানান দিতে খেজুর কিনেছি। তবে শরবত বানানোর জন্য লেবু কেনার সাহস হয়নি। 


বিজ্ঞাপন


কালু ব্যাপারি আরও বলেন,  ঢাকায় আসার পর সবচেয়ে অভাবের রমজান মাস মনে হয় এটাই। কারণ এবার এখনও একদিনে ১৫শ’ টাকা আয় করতে পারিনি। আগের বছরগুলোতে নিয়মিত ১৫শ’ টাকার বেশি ভাড়া হতো কিন্তু এখন সেটি আর হয় না। সব মিলিয়ে চরম অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে সংসার চলাতে হচ্ছে। 

২০১৬ সালে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা এসেছেন আবু বক্কর। প্রথমে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করলেও ফ্যাক্টরিতে টিকতে পারেননি তিনি। পরে বাধ্য হয়ে রিক্সা চালানো শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে হাজারিবাগে থাকেন। গত ৮ বছর ধরে রিক্সা চালিয়ে ছোট্ট সংসার পরিচালনা করছেন তিনি। বর্তমানে একই পেশায় থেকে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন বক্কর। 

তিনি বলেন, গত ৬-৭ মাস হলো আমরা রিক্সা চালকরা আর ভালো নেই। কারণ রাস্তাঘাটে আগের মতো মানুষরা আর রিক্সায় ওঠে না। মানুষ যদি না ওঠে তাহলে আমরা ভাড়া পাই না। দেশের কি হচ্ছে সেটার খোঁজ-খবর রাখার সময় হয় না। কিন্তু আমাদের ভাড়া হচ্ছে না কেনো সেটা নিয়ে ভাবি। নানা চিন্তা আসে নিজের মধ্যে তবে সেগুলো ঠিক কিনা জানা নেই। আমরা শুধু নিজেদের কাজ ঠিকমতো চাই। যাতে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারি।

এএসল/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন