বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

ঈদযাত্রায় উত্তরের পথে যেসব পয়েন্টে ভোগান্তির শঙ্কা

আবুল হাসান, গাজীপুর
প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

প্রতি বছরই ঈদে ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ দেশের উত্তরাঞ্চলে যান স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে। সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলে ঢুকতে হয় গাজীপুর ও টাঙ্গাইল হয়ে যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে। আর এই পথে এবারও ঈদে গাজীপুরের ঢাকা—ময়মনসিংহ এবং ঢাকা—টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট ও ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা। মহাসড়কের দুই পাশ দখল করে অবৈধ দোকানপাট, কাঁচাবাজার, অবৈধ পার্কিং, ইজিবাইকের আধিক্য ও অনেক জায়গায় সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় এই আশঙ্কা তাদের।

এই দুই মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, এসব কারণে এমনিতেই সারাবছর সাধারণ মানুষকে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ঈদ এলে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। তবে গাজীপুর মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, যানজট নিরসন ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


4

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা ময়মনসিংহ রুটে সাতটি ফ্লাইওভার চালু থাকলেও এবার ঈদে যানজটের শঙ্কা কাটছে না। গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বাজার বাসস্ট্যান্ড, হোতাপাড়া বাসস্ট্যান্ড, বাঘের বাজার বাসস্ট্যান্ড ও শ্রীপুর উপজেলার মাস্টারবাড়ি বাজার এলাকায় যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। 

এছাড়া এই মহাসড়কের আরও দুটি স্থানেও যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেগুলো হলো- সিডস্টোর বাজার ও ভালুকা বাসস্ট্যান্ড। আর গাজীপুরের মধ্যে পঞ্চম স্থানটি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা মোড়। গাজীপুর জেলায় যানজটের এসব স্থান চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থাগুলো। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার অংশের বিভিন্ন স্থানে এখনও বিআরটি প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় বিভিন্ন স্থানে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব হয়নি।

5


বিজ্ঞাপন


ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা মোড় এলাকা প্রতিবছরই ঈদে ঘরমুখী মানুষের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায় চন্দ্রা ত্রিমোড়। কয়েকটি স্থানে সড়ক সরু এবং বিশৃঙ্খলভাবে যানবাহন পার্কিং করায় যানজট তৈরি হয়। এছাড়া যানজটের মূল কারণ হলো ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক। ঈদের আগে রাস্তা থেকে সরিয়ে না দিলে যানজট আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে, এমনটাই বলছেন সাধারণ মানুষ।

আরও পড়ুন-

চান্দনা চৌরাস্তায় ইমাম পরিবহনের চালক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা ফ্লাইওয়ের উত্তর প্রান্তে উনিশ টাওয়ারের সামনে থেকে উত্তরের হানিমুন রেস্টুরেন্ট’র মধ্যবর্তী এলাকায় বিভিন্ন পরিবহনের বাস থেমে যাত্রী ওঠা—নামা করানোর কারণে একটা জটলা সৃষ্টি হয় এবং মাঝে মধ্যেই যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফ্লাইওভারের উত্তরের সংযোগ স্থলে মহাসড়কে যানবাহন থামতে না দিলে এ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া রাস্তায় বেপরোয়াভাবে অটোরিকশা, ইজিবাইক চলাচল করে। তাদের জন্য ভালো মতো গাড়ি চালানো যায় না।

8

পোশাক শ্রমিক মর্জিনা জানান, গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। প্রতি ঈদে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে যেতে হয়। কিন্তু যাত্রাপথে যানজটের কবলে পড়তে হয়। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, যানজটের কারণে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারি না। আশা করি এই সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

ঈদের আগে কাঁচাবাজার উচ্ছেদ না হলে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এমন দাবি করে ইটাহাটা এলাকার বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, চান্দনা চৌরাস্তায় সড়ক, ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন দোকান পাট বসে। তেলিপাড়া থেকে নগরপাড়া এলাকায় মহাসড়কের দুইপাশে পণ্যবহণের অপেক্ষায় থাকা পিকআপ, পণ্যবাহী কাভার্ডভ্যান ছাড়াও বালুবাহী ট্রাক অবস্থান করে। এতে চলাচলের রাস্তা সরু হয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়। 

এবার ঈদে ঢাকা—ময়মনসিংহ ও ঢাকা—টাঙ্গাইল মহাসড়কের বেশ কয়েকটি স্থান যানজট ও ভোগান্তিতে পড়ার শঙ্কার কথা জানালেন থানা পুলিশ ও জিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারাও। তবে যানজট কমাতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বললেন তারা। গাজীপুর মহানগর পুলিশের পরিদর্শক (ট্রাফিক) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা মেইলকে বলেন, রাজধানীর উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরের টঙ্গীতে ঢোকার পর ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কের টঙ্গীর স্টেশনরোড এলাকার ফ্লাইওয়ের ওপরে ওয়াইজংশন এবং নিচের এলাকায় অর্থাৎ গাজীপুরা এলাকা, টঙ্গী কলেজগেইট এলাকা, ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকা, চান্দনা—চৌরাস্তা ১৯টাওয়ারের সামনে, রাজেন্দ্রপুর এলাকায় যাত্রী ও গাড়ির ভিড় বেড়ে গিয়ে যানজটের শঙ্কা রয়েছে।

1

মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি আইয়ুব আলী জানান, ঢাকা— ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুরের তুলা গবেষণা কেন্দ্র থেকে উত্তরে জৈনা বাজার পর্যন্ত এলাকার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, এমসি বাজার এলাকায় যানজট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব এলাকায় কলকারখানা বেশি থাকায় ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ ও যানবাহনের ভিড় সৃষ্টি হয়।

সালনা হাইওয়ে থানার ওসি সালেহ আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, রাজেন্দ্রপুরের উত্তরে ঢাকা—ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভবানীপুর চৌরাস্তা এলাকা, বাঘের বাজার ও মেম্বারবাড়ি এলাকায় যানজট সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ভবানীপুর চৌরাস্তা মোড় এলাকায় ইউটার্ন থাকায়, বাঘের বাজার এলাকায় রাস্তা কিছুটা সরু হওয়ায় এবং কলকারখানার গাড়ি বেশি যাতায়াত করার ফলে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্থ হওয়ায় গাড়ির গতি হ্রাস পায়। এতে ঈদে সেখানে যানজট সৃষ্টি হওয়ার সম্ভবানা রয়েছে। মেম্বার বাড়ি এলাকায় একই কারণে মাঝেমধ্যে যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে।  

এছাড়া ঢাকা—টাঙ্গাইলের পথে ভোগড়া বাইপাস মোড়ের পশ্চিমে পেয়ারা বাগান এলাকা, নাওজোর, মৌচাক কোনাবাড়ি, সফিপুর, পল্লীবিদ্যুৎ, চন্দ্রা ত্রিমোড় এবং কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়কে শিল্প কলকারখানা এলাকায় আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও গাড়ির চাপ বেড়ে গেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা করছেন বলে জানান নাওজোর হাইওয়ে থানার ওসি মো. রইস উদ্দিন।

7

মহাসড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক প্রস্তুতি থাকার কথা জানিয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আশরাফুল আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, যানজট নিরসন ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ, থানা পুলিশ ও মোবাইল টিম থাকবে। এ ছাড়া ১০টি রেকার রিজার্ভে রাখা হবে। যাতে কোনো কারণে যানবাহন বিকল হলে দ্রুত সেগুলো সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া ঈদের আগে সঠিক সময়ে পোশাক কারখানাসহ সব কারখানা যাতে যথাসময়ে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ করে এবং ধাপে ধাপে ছুটি দেয় সেজন্য থানা পুলিশসহ শিল্প পুলিশ নজরদারি করবে। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করতে গিয়ে যাতে যানজট সৃষ্টি না হয় সেদিকেও আমরা ব্যবস্থা নেব।

ইএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর