· দুই চোখে দুটি গুলি লাগে মেহেদীর
· দুই হাসপাতাল সর্বোচ্চ ছাড়ে চিকিৎসা দিয়েছে তাকে
বিজ্ঞাপন
· এখনো প্রয়োজন ৩৫ হাজার টাকা
রাজধানীর আবাহনী মাঠের গোপালগঞ্জ ক্লাবের একজন ফুটবলার মো. মেহেদী হাসান রাব্বি। বয়স ২০ বছর। গত ১৮ জুলাই কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সময় পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি লাগে তার দুই চোখে। এক চোখের গুলি বের করা গেলেও ডান চোখে এখনো গুলি নিয়ে কাতরাচ্ছেন এই উদীয়মান ফুটবলার। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার পথে।
নগরীর মোহাম্মদপুরের চাঁন মিয়া হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মেহেদী হাসান রাব্বি৷ ছোটবেলায় বাবা-মা মারা যাওয়ায় বড় হয়েছেন নানা-নানির কাছে৷ নানার আয়ও খুব সামান্য। ফলে চিকিৎসা কাজে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করার সাধ্য নেই তার৷
মেহেদীর বন্ধু ও প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকেই মাঠে ছিলেন রাব্বি। নিজের অবস্থান থেকে যৌক্তিক আন্দোলনে সক্রিয়তা দেখিয়েছেন, সম্পৃক্ত করেছেন বন্ধুদেরকেও।
বিজ্ঞাপন
গত ১৮ জুলাই মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। সেখানে ছিলেন মেহেদী ও তার বেশ কয়েকজন বন্ধু। অন্যরা সামান্য আহত হলেও বড় ক্ষতিটা হয়েছে মেহেদীর৷
পুলিশের ছোড়া নয়টি ছররা গুলি এসে লাগে মেহেদীর গায়ে। যার একটি গুলি আঘাত করে বাঁ চোখের কোণায়৷ আরেকটি ডান চোখের মনিতে৷ রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা তাকে নিয়ে যান আনোয়ান খান মর্ডান হাসপাতালে।
ঢাকা মেইলের সঙ্গে আলাপকালে মেহেদীর বন্ধু মনির হোসেন বলেন, 'মেহেদীর গুলি লাগার পর আমরা ওকে ঢাকা মেডিকেলে নিতে চেয়েছিলাম। পরে শুনলাম ওইদিকেও ঝামেলা হচ্ছে, হাসপাতালে ঢুকেও মানুষকে পেটানো হচ্ছে৷ পরে আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে যাই৷ আমাদের কাছে টাকাও ছিল না। একজন রোগীর আত্মীয়, তিনি আমাদের সাত হাজার টাকা দেন। মেডিকেলে আমরা আমাদের সবার মোবাইল জমা দিতে চেয়েছিলাম, যে মোবাইল রেখে চিকিৎসা দিক। তারা মোবাইল রাখেনি। কিন্তু চিকিৎসা দিয়েছেন। ডাক্তাররা তাদের ভিজিটও রাখে নাই। আমাদের কাছে শুধু মেডিকেলে বিলটা রাখছে। সেটাও আমরা দিতে পারিনি। ১২ হাজার টাকা মেডিকেল পাওনা। তারপরও তারা রোগী ছেড়ে দিয়েছে। অত্যন্ত আন্তরিক তারা। আমরা তাদের কাছে ঋণী।'
হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা পেলেও এখনো ভালো নেই মেহেদী। কারণ তার ডান চোখে লাগা গুলিটা এখনো বের করা সম্ভব হয়নি। চোখে গুলি নিয়েই বিছানায় কাতরাচ্ছেন তিনি।
চাঁন মিয়া হাউজিং এলাকায় টিনশেড বাসার একটি ঘরে বসবাস করেন মেহেদী। সেখানে জুম্মন ব্যাপারী নামে মেহেদীর একজন প্রতিবেশী ঢাকা মেইলকে বলেন, 'ও ছেলে হিসেবে খুব ভালো। অনেক বছর ধরে চিনি৷ ছেলেটার এখন চিকিৎসাও করাইতে পারতেছে না। ওর পরিবারের আসলে সামর্থ্য নাই। আমরাও গরিব মানুষ। পারলে আমরাও সাহায্য করতাম। ওর জন্য এই পর্যন্ত যা করছে, ওর বন্ধুরা করছে।'
মেহেদীর ঘরে প্রবেশ করে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। ফুটবলের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা চোখ দুটি এখন সামনে বসা মানুষের দিকে ঠিকভাবে নজর রাখতে পারছে না। কীভাবে চিকিৎসা হবে তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। তাছাড়া চিকিৎসায় স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন কি না, তা নিয়েও চিন্তা ভর করেছে তার।
ঢাকা মেইলকে মেহেদী জানান, তার চোখ, গলা, মাথাসহ শরীরে মোট ৯টা গুলি লাগে৷ দুই চোখে ২টা৷ বাঁ চোখের গুলি বের করা হয়েছে। ডান চোখের মনিতে আঘাত করা গুলিটি এখনো ভোগাচ্ছে তাকে। যা এখনো চোখের ভেতরেই আছে৷
মেহেদী বলেন, 'ডান চোখে ঝাপসা দেখি। খুব ব্যথা হয়। ব্যথা কমানোর জন্য ওষুধ খাচ্ছি। চোখের জন্য ভিশন আই হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানকার ডাক্তাররাও অনেক হেল্প করছে। তারাও ভিজিট নেননি। যে অপারেশন করতে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাগবে৷ তারা আমার জন্য সেটা ৩৫ হাজার টাকা করে দিছে৷ কিন্তু সেই টাকাও এখনো ব্যবস্থা করতে পারি নাই।'
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এই উদীয়মান ফুটবলার জানান, চোখের অপারেশন দ্রুত সময়ে করা সম্ভব না হলে চোখের বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
কারই/এমআর