বাংলাদেশের দলিত সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চাইলেও সবকিছু সংস্কার করতে পারে না। তবে দলিত সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য অনেক কাজ এই সরকার করতে পারে। তাদের আবাস্থল, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের বৈষম্য দূর করতে কাজ করা সম্ভব। এসব ব্যাপারে যদি এই সরকার কাজ করে তাহলে বোঝা যাবে বৈষম্য দূর করতে সরকারের সদিচ্ছা আছে। আর একটা রাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হওয়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়া সরকারের দায়িত্ব।
শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে 'সংস্কার ও রাষ্ট্র ভাবনায় হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠী' শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
আনু মুহাম্মদ বলেন, বিভিন্ন সরকার সঠিকভাবে তাদের জন্য কাজ করেনি। তবে কিছু এনজিও প্রোজেক্টভিত্তিক দলিত সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করেছে। ফলে এই সম্প্রদায়ের মধ্যে নানা সংগঠনের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সকল নিপীড়িত মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করতে পারলে খুব বেশি লাভ হবে না। সবার ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের অধিকার আদায়ে কাজ করতে হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, আমাদের জীবনযাপনের জন্য যারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে তাদের অচ্ছুৎ মনে করা ভালো কিছু নয়। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক একটা পরিবর্তন জরুরি। এটির ক্ষেত্রে মিডিয়া ভালো ভূমিকায় পালন করতে পারে। কারণ দলীয় সম্প্রদায়ের আসল অবস্থা সবার সামনে তুলে ধরতে মিডিয়ায় পারে। অনেক সময় মানুষ ভুল বোঝার কারণেও তাদের অসম্মান করে।
সেমিনার আটটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো-
১. বৈষম্যকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাধীন কমিশন ও হরিজন-দলিতদের স্বার্থ রক্ষায় ‘বৈষম্য বিলোপ বিশেষ ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করতে হবে।
বিজ্ঞাপন
২. অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোটা এবং উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের সরকারি সকল পেশায় সম-অধিকার নিশ্চিত করতে বিশেষ কোটা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
৩. সারাদেশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা, হাট-বাজার-মার্কেট-ক্লিনিকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের বেতন বৃদ্ধি ও চাকুরি স্থায়ীকরণ করতে হবে। সবেতন মাতৃত্বকালীন ছুটি, উৎসব বোনাস, অবসর ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে হবে।
৪. সরকার কর্তৃক খাস জমিতে হরিজন জনগোষ্ঠীকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য বন্দোবস্ত করতে হবে। ১শ/২শ বছরের পুরাতন জায়গা বসবাসরত হরিজন-দলিতদের নামে দলিল করে দিতে হবে। পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদ করা যাবে না।
৫. দেশে বসবাসরত হরিজন জনগোষ্ঠীকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
৬. মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হরিজন-দলিতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান এবং শহীদ পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
৭. জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে হরিজন-দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৮. একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগে জাত হরিজনদের জন্য ঘোষিত ৮০ ভাগ কোটা বাস্তবায়ন করতে হবে
হরিজন অধিকার আদায় সংগঠনের সভাপতি সুরেশ বাসফোরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ প্রমুখ। এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দলিত সম্প্রদায়ের শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এএসএল/জেবি