বৃহস্পতিবার, ৯ মে, ২০২৪, ঢাকা

হকারে স্থবির গুলিস্তান, হাঁটা দায় পুরান ঢাকায়

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১০:০৪ পিএম

শেয়ার করুন:

হকারে স্থবির গুলিস্তান, হাঁটা দায় পুরান ঢাকায়
ছবি: ঢাকা মেইল
  • হকারদের দখলে ফুটপাত থেকে রেডজোন
  • পুরান ঢাকায় যন্ত্রণার নাম ট্রান্সপোর্ট
  • মানসিকতার পরিবর্তন চায় পুলিশ
  • সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে উচ্ছেদ সম্ভব নয়: মেয়র

সাভার থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে সাভার পরিবহনের একটি বাস নিয়ে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বেলা ১১টায় যাত্রা শুরু করেন চালক ইবরাহীম খান। পৌনে দুই ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটারের মতো পথ পাড়ি দিয়ে জিরো পয়েন্ট এসে আটকে পড়েন যানজটে। তীব্র যানজট ঠেলে মাত্র ১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দূরত্বের গন্তব্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে তার সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা।


বিজ্ঞাপন


মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কে পাশে এই চালকের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘রাস্তায় যে অবস্থা চলতেছে এতে গাড়ি পল্টন থেকে আবার ঘুরিয়ে সাভার যেতে হবে। এইভাবে গাড়ি চালালে যাত্রীও মিলবে না, শরীরও থাকবে না।’   

শুধু এই চালকই নন, এমন বক্তব্য সদরঘাট রুটে চলা সবগুলো গণপরিবহনের সংশ্লিষ্টদের। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু ঈদের সময়ই নয়, বছরজুড়ে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট আসতে দিনে কিংবা রাতে যানজটের এমন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, গুলিস্তান এলাকায় হকাররা রাস্তার মাঝ বরাবর চলে আসেন দোকান কিংবা ফলের টুকরি নিয়ে। যে কারণে অন্যদিক দিয়ে দ্রুত চলে এলেও পল্টন, জিরো পয়েন্ট এবং গুলিস্তান এসে যেন গাড়ির চাকা ঘোরে না। এছাড়া পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন রুটের বড় বাস চলাচল করায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। যে কারণে কিছু কিছু রুটের গাড়ি সদরঘাট না গিয়ে ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে গুলিস্তান থেকেই ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন

নিচে জট উপরে স্বস্তি, মেট্রোযাত্রীদের তৃপ্তির হাসি

গুলিস্তনের সকাল থেকেই রাস্তা দখলে নেন হকাররা। এমনকি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা রেডজোনও দখলে চলে যায় সকাল থেকে।

দীর্ঘ সময় নিয়ে গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া পার হতে পারলেও মালিটোলা-বংশাল হয়ে তাঁতীবাজার পার হতে লাগে লম্বা সময়। বছরজুড়েই এই দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। রমজানের মধ্যে এই কষ্ট যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের। বিকেল গড়াতেই শুরু হয় রাস্তা দখল করে মালামাল উঠানো। এতে করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে যানবাহন। অন্যদিকে ফুটপাতজুড়ে পণ্য রাখায় নির্বিঘ্নে হাঁটারও সুযোগ নেই।

Dmail-2

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে রমজানে যানজট সহনীয় রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার খুব একটা ছাপ নেই পুরান ঢাকায়। ফলে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে লোকজনের গুলিস্তান হয়ে পুরান ঢাকায় যেতে চাইলে যানজটের বিড়ম্বনা এড়ানোর কোনো সুযোগই নেই।

যদিও ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ফুটপাত দখলমুক্ত করা, যত্রযত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করাসহ যানজট নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তবে নাগরিকরা সচেতন না হলে পুরোপুরি সুফল পাওয়া সম্ভব নয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মুনিবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আসলে যানজটের বিষয়টি মানুষের ওপর নির্ভর করছে। অনেকগুলো পক্ষের মধ্যে সমন্বয় ও আন্ডারস্টাডিংয়েরও বিষয় আছে। আমরা সেই কাজটি করছি। যখন যেখানে সমস্যা শুনছি সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু এই পদক্ষেপে হয়তো তিন-চার ঘণ্টা ভালো থাকে, পরে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। তাই সবাই মিলে আমাদের যানজট থেকে বাঁচার উপায় বের করতে হবে। নিজেদের দায়িত্বশীল হতে হবে।’

আরও পড়ুন

সড়কের কোথাও বাড়তি চাপ, কোথাও ফাঁকা

গুলিস্তানের হকারদের রাস্তা দখল ও ঢাকার বাইরের বাসগুলো চলাচল নিয়ে তিনি বলেন, ‘ফুটপাতে হকারদের উচ্ছেদ করা নিয়ে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। আমরাও সহযোগিতা করছি। কিন্তু কোনোভাবে রাস্তা দখল করতে দেওয়া যাবে না। অন্যদিকে বাসগুলো ঢাকার বাইরে নেয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এটা বাস্তবায়ন হওয়া পর্যন্ত দুর্ভোগ থাকলেও সহনীয় রাখতে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে।’

ফুটপাত থেকে রাস্তা সবখানে হকার, যন্ত্রণার নাম ট্রান্সপোর্ট

সরেজমিন দেখা গেছে, জিরো পয়েন্টের এক পাশে সচিবালয়। ফলে পশ্চিম পাশের ফুটপাত ফাঁকা। তবে পূর্ব পাশের পুরো ফুটপাত ও রাস্তার কিছু অংশে নানা ধরনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকাররা। মুক্তাঙ্গন এলাকার পুরোটা দখলে রেন্ট এ কারের ব্যবসায়ীদের।

Dmail-3

অন্যদিকে জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত ফুটপাত দখল করে অনেকটা স্থায়ীভাবে ব্যবসা করছেন লোকজন। ঈদকে সামনে রেখে রাস্তায় কাপড় চোপড় বিক্রির ভ্যান রাস্তায়ও নামানো হয়েছে। এরপরে সারি সারি ফলের টুকরি নিয়ে বসে দেদারসে ব্যবসা করছেন বিক্রেতারা। যে কারণে চাইলেও এই এলাকায় দ্রুতগতিতে চলতে পারে না যানবাহন। আবার কেউ যদি হেঁটেও যেতে চান সেটাও সম্ভব না।

আরও পড়ুন

ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে ‘বিপদে’ তারা

অন্যদিকে মালিটোলা থেকে শুরু করে রায়সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত কয়েকশ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির গাড়ি যত্রযত্র রেখে মালামাল উঠানোর কারণে সদরঘাট অভিমুখে যাওয়া যাত্রীদের ভুগতে হয় যানজটে। দিনের পর দিন এমনটা চললেও এ নিয়ে যেন সবাই নির্বিকার।

রেডজোনও মুছে ফেলেছে হকাররা

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফুটপাত দখলমুক্ত করাসহ যানবাহন ও নাগরিকদের দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সড়ককে লাল, হলুদ ও সবুজ শ্রেণিতে চিহ্নিত করে। ‘লাল’ চিহ্নিত সড়কে কোনো ধরনের হকার বসতে না দেওয়ার কথা জানানো হয় তখন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। গুলিস্তান এবং আশাপাশের এলাকায় এমনটা করা হলেও হকাররা যেন সেসব চিহ্ন মুছে ফেলেছেন! মাঝেমধ্যে উচ্ছেদ চালালেও আবার স্বরূপে ফিরে আসে।

Dmail4

বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ আছে খোদ দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপসেরও। মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা আটটি ফুটপাতে হকারদের পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।

আরও পড়ুন

পানির সংকটে এলাকা ছাড়ার উদ্যোগ!

একইসঙ্গে যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে বিক্ষিপ্তভাবে বাস কাউন্টার থাকাকে দায়ী করে তিনি টার্মিনালের বাইরে কেউ কাউন্টার করতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

যদিও নিয়মিত তদারকির কথা বলছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত অনুসারে লাল সড়কে কোনো হকার বসতে এবং কাউকে অবৈধভাবে দোকানপাট ও স্থাপনা নির্মাণ করতে দেব না। অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর