বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২৪, ঢাকা

নিচে জট উপরে স্বস্তি, মেট্রোযাত্রীদের তৃপ্তির হাসি

বোরহান উদ্দিন
প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৬:০৫ পিএম

শেয়ার করুন:

নিচে জট উপরে স্বস্তি, মেট্রোযাত্রীদের তৃপ্তির হাসি
সড়কে যখন গাড়ির জট তখন মেট্রোরেলে যাত্রীদের স্বস্তির যাত্রা। ছবি: ঢাকা মেইল

উত্তরার একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম। জরুরি কাজে বুধবার (২৭ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে মেট্রোরেলে চেপে মাত্র ৩৫ মিনিটে সচিবালয় স্টেশনে নামেন। বায়তুল মোকাররম এলাকায় কাজ সেরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আবার রওনা হন উত্তরায়। সচিবালয় স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি অনেকটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বললেন, ‘আগে ইফতার রাস্তায় করার টেনশন হতো। এখন ইফতারের আগেই বাসায় যাচ্ছে মানুষ। খুব উপকার হয়েছে মেট্রোরেলে।’

শফিকুল ইসলাম যখন এই কথা বলছেন ঠিক তখন স্টেশনের নিচের সড়কে লম্বা গাড়ির সারি। সার্ক ফোয়ারার সিগন্যাল থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত দক্ষিণ পাশের সড়কে পুরোটা যানজট। যাত্রীদের অনেকে গাড়ির মধ্যে তন্দ্রা যাচ্ছেন। কারও কারও চেহারায় লক্ষ্য করা গেছে অস্বস্তির ছাপ।


বিজ্ঞাপন


শুধু এই সড়কই নয়, পল্টন মোড় থেকে জিরো পয়েন্ট-গুলিস্তানের সড়কেও তপ্ত রোদে গাড়ির জট দেখা গেছে এই সময়। এমন দৃশ্য অবশ্য একদিনের নয়। রোজার শুরুর পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

ধীরে ধীরে মেট্রোরেল চলাচলের সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে এই বাহনটির প্রতি। নির্ধারিত সময়ে ঝামেলা ছাড়া গন্তব্যে পৌঁছাতে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন মেট্রোরেল। আর যাত্রীদের আগ্রহ ও চাপ বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে রাত ৯টার পরও মেট্রোরেল চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ (বুধবার) থেকে তা কার্যকর হবে।

আরও পড়ুন

আজ থেকে ১ ঘণ্টা বেশি চলবে মেট্রোরেল

তবে মেট্রোরেলে স্বস্তিতে যাত্রা করা গেলেও যাত্রী চাপের কারণে লম্বা সময় টিকিট কাটতে লাগায় কারও কারও অসন্তোষ আছে। যদিও দিনে দিনে যাত্রীরা ঝামেলাহীন চলাচলের জন্য এমআরটি কার্ডের দিকে ঝুঁকছেন।


বিজ্ঞাপন


এদিন সচিবালয় থেকে আগারগাঁও যাত্রা করা রাশিম মোল্লা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘সকালে মাত্র ১১ মিনিটে ৪০ টাকা ভাড়া দিয়ে আগারগাঁও এসেছি। বাসে এলে কোনোভাবেই এটা সম্ভব ছিল না। বাসের চেয়ে ভাড়া একটু বেশি হলেও কষ্ট নেই।’

Metro2

মেট্রোরেলের সচিবালয় থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত দেখা গেছে, দুপুর গড়িয়ে সরকারি অফিস ছুটির সময় (সাড়ে ৩টা) পার হওয়ার পর যাত্রীদের অনেকটা ঢল নামছে স্টেশনগুলোতে। বিশেষ করে সচিবালয়, শাহবাগ, ফার্মগেট স্টেশনে বেশি চাপ লক্ষ্য করা গেছে।

উত্তরা অভিমুখে যাওয়ার বেলায় এমন দৃশ্য দেখা গেলেও মতিঝিলমুখী মেট্রোরেলে বেশি যাত্রী উঠতে দেখা গেছে, আগারগাঁও ও কারওয়ান বাজার স্টেশনে। অবশ্য সচিবালয় স্টেশনে ৮০ ভাগের মতো যাত্রী নেমে যেতে দেখা গেছে।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে দেখা গেছে, উত্তরা অভিমুখে ট্রেন ধরতে সচিবালয় স্টেশনের মেশিনে টিকিট কাটার তিনটি লাইনে কয়েকশ যাত্রী অপেক্ষা করছেন। অন্যদিকে কাউন্টারে যাত্রীদের ভিড় এত বেশি যে, খালি জায়গায় লম্বা লাইন শেষ করে ঘুরিয়ে দাঁড় করানো হয়েছে যাত্রীদের।

আরও পড়ুন

ঈদের দিন চলবে না মেট্রোরেল

খাদ্য মন্ত্রণালয়ে চাকরি করা শহিদুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘শুরুর দিকে এত বেশি চাপ ছিল না। সময় যত যাচ্ছে, যাত্রীর চাপ তত বাড়ছে। ২০ থেকে ৩০ মিনিটও লাগছে টিকিট পেতে। তারপরও শান্তি এসির বাতাস, সুন্দর পরিবেশে যানজট ছাড়া যেতে পারতেছি।’

টিকিট কাটার বিড়ম্বনায় আগ্রহ বাড়ছে এমআরটি কার্ডে 

অন্যদিকে স্টেশনে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটার বিড়ম্বনা এড়াতে দিন দিন যাত্রীদের এমআরটি কার্ড কেনার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে। প্রতিটি স্টেশনেই দেখা গেছে, যাত্রীদের অনেকে নির্ধারিত ফরম পূরণ করে এমআরটি কার্ড সংগ্রহ করছেন। ৫০০ টাকা দিয়ে কার্ডটি সংগ্রহ করে দ্রুত প্লাটফর্ম থেকে মেট্রোরেলে করে গন্তব্যে ছুঁটতে দেখা গেছে যাত্রীদের।

Metro4

কথা বলে জানা যায়, অনেকে এখনো পুরোপুরি বুঝে উঠতে না পারার কারণে এমআরটি কার্ড সংগ্রহ করছেন না। কার্ড দিয়ে চলাচলে ভাড়াও কিছুটা সাশ্রয় হয়, সেটাও অনেকে জানেন না। তাই প্রচারণা বেশি করার পাশাপাশি সহজে যাতে এটি সংগ্রহ করা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

কার্ড কেনার লাইনে দাঁড়ানো সাবিনা আক্তার মেয়েকে নিয়ে মিরপুর যাবেন। ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘টিকেটের লাইনের চেয়ে এমআরটি কার্ড সংগ্রহের লাইনে ভিড় কম। এটা সংগ্রহ করে রাখছি পরেও উপকার হবে। এমন সিস্টেমের কথা আগে জানতাম না।’ 

আরও পড়ুন

মেট্রোরেলের এমআরটি কার্ডধারীদের জন্য সুখবর

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমআরটি কার্ড সরবরাহ করা মেট্রোরেলের কর্মী ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অনেকেই আসছেন নতুন কার্ড নিতে। কেউ আসছেন রিচার্জ করতে। আগের চেয়ে দৈনিক বেশি কার্ড নিচ্ছে যাত্রীরা। এক সময় হয়তো সবাই কার্ড নিয়ে চলবেন।’

৯টার পরও মেট্রোরেল চলার খবরে যাত্রীমনে স্বস্তি

এদিকে মধ্য রমজানে মেট্রোরেলের যাত্রীদের সুখবর দিল ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৭ মার্চ) থেকে মতিঝিল স্টেশন থেকে সর্বশেষ ট্রেনের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। রাত ৮টা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে ৯টা ৪০ মিনিটে ছাড়বে ট্রেন। সেই ট্রেনটি উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ১০টা ১৪ মিনিটে। এতে করে আসছে ঈদ উপলক্ষে পরিবার-পরিজনের জন্য কেনাকাটা করতে বের হওয়া মানুষ কিছুটা স্বস্তি নিয়ে রাতে বাসায় ফেরার সুযোগ পাবেন। তবে রাত ৯টার পর মতিঝিল স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া মেট্রোরেলগুলোতে শুধু এমআরটি র‌্যাপিড পাস ব্যবহারকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন।

Metro3

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই বর্ধিত সময়ে আরও ১০ বার মেট্রোরেল চলাচল করবে। এতে দৈনিক ১৯৪ বার মেট্রোরেল চলাচল করবে এবং প্রতি ট্রেনে দুই হাজার ৩০৮ জন করে মোট চার লাখ ৪৭ হাজার ৭৫২ জন যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন।

কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে খুশি যাত্রীরা। তারা বলছেন, রাত আটটার পরে যাত্রী তুলনামূলক কম হলেও মেট্রোরেল চলাচল করলে সামনে বাড়বে। বাসে চড়া যাত্রীদের যানজটের কথা চিন্তা করে আগেভাগে গন্তব্যে রওনা হতে হয়।

আরও পড়ুন

‘মেট্রোরেল যাতায়াতকে সহজ করেছে’

কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্ত কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে পুরানা পল্টনে কর্মরত বেসরকারি চাকরিজীবী ফেরদৌস আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘অনেক সময় অফিসের কাজ শেষ করতে মেট্রোরেলের সময় পার হয়ে যায়। পরে বাসে মিরপুর যাই। এখন সেই কষ্টটাও কমবে।’

বিইউ/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর