শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গ্রামীণ শীত মানেই পিঠা উৎসব

সিয়াম মাহমুদ
প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪২ এএম

শেয়ার করুন:

গ্রামীণ শীত মানেই পিঠা উৎসব

শীতকাল মানে পিঠার সময়। হরেকরকম পিঠা এসময় চেখে না দেখলে সময়টাই যেন বৃথা। গ্রামাঞ্চলে তো শীত বলতে পিঠার উৎসবকেই বোঝায়। 

পিঠা বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি অংশ। শীতকালের শুরুতেই মাঠের পাকা ধান বাড়িতে এনে সে ধান রোদে শুকিয়ে নতুন আতপ চালের গুড়ি থেকে পিঠা বানানো বাঙালির শত বছরের সংস্কৃতি। 


বিজ্ঞাপন


pitha

শীতকালের শুরুতে আমাদের দেশের কৃষকেরা তাদের ঘরে নতুন ধান তোলে থাকে। আর এ খুশিতেই শীতকে তারা পিঠা উৎসবের মধ্যে দিয়ে বরণ করে নেন।  

শীতকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় পিঠা হলো ম্যারা ও ভাপা। গ্রামীণ অঞ্চলে এই দুই পিঠা দিয়েই যেন শীতকালকে বরণ করে নেওয়া হয়। ভাপা ও ম্যারা পিঠা ছাড়া যেন গ্রামীণ শীতটাই জমে না। তৈরির উপাদান সহজলভ্য হওয়ায় গ্রামে এ পিঠা বানানো হয় বেশি। 

pitha


বিজ্ঞাপন


ম্যারা পিঠা 

ময়দা বা চালের গুঁড়ো, লবণ, চিনি, নারকেল দিয়ে বানানো এ পিঠা বেশ জনপ্রিয়। এ পিঠা সিলেট ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বেশ জনপ্রিয়। ম্যারা পিঠা সাধারণত শুঁটকি ভর্তা, গুড় বা মাংস দিয়ে পরিবেশন করা হয়। অনেক সময় কড়াইয়ে তেলে বা তেলছাড়া ভেজে কিংবা আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া হয়। তবে, গুড় দিয়ে বানানো মিষ্টি ম্যারা পিঠা পরিবেশন করতে তেমন কিছু যুক্ত করতে হয় না। 

ভাপা পিঠা

ভাপা পিঠা বাংলাদেশ ও ভারতের একটি ঐতিহ্যবাহী পিঠা। এটি প্রধানত চালের গুঁড়া দিয়ে জলীয় বাষ্পের আঁচে তৈরি করা হয়। মিষ্টি করার জন্য দেওয়া হয় গুড়। স্বাদ বৃদ্ধির জন্য নারকেলের শাঁস দেওয়া হয়। ঐতিহ্যগতভাবে এটি গ্রামীণ নাশতা হিসেবে প্রচলিত। তাছাড়া চালের গুঁড়ার সঙ্গে সদ্য জমি থেকে তোলা সতেজ ধনিয়া পাতা যুক্ত করেও এ পিঠা তৈরি করা হয়। যেটি কচি লাউয়ের তরকারির সাথে খাওয়া যায়। এ খাবারটি অনেকেই পছন্দ করে খেয়ে থাকেন। 

pitha

শীতকাল আসলে পিঠা না খেলে যেন চলেই না। তাই অনেকেই শহর ছেড়ে ছুটে চলে নিজের মাতৃ নীড়ে। ঈদের মতো নাড়ির টানে শীতকালেও অনেকেই বাড়ি ফিরেন পরিবারের সঙ্গে শীতের পিঠা উৎসবে সামিল হতে। তাছাড়া পৌষে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) যখন পিঠা উৎসব চলে, তখন শিশুদের স্কুল-কলেজও ছুটি থাকে। ফলে অনেকে সন্তান নিয়ে আনন্দে মেতে উঠতে বাড়ি ছুটেন। পরিবারের সবাই এক হয়ে গ্রামীণ পরিবেশে পিঠা খাওয়ায় মেতে ওঠা জীবনকে আরও অর্থবহ করে তোলে। 

আরও পড়ুন- 
সুজি দিয়েই বানান কাঁচাগোল্লা

নতুন চাল, খেজুরের রসের নতুন গুড়ে টইটম্বুর পিঠা বাঙালির শীত উদযাপনকে করে তোলে রঙিন। শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়ের চুলোর কাছে গিয়ে আগুন পোহানোর স্মৃতি আবহমান বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য। ভোরের কুয়াশা বেধ করে সকালের সূর্যের দেখা মিলতেই নতুন পিঠার ঘ্রাণে সুবাসিত হয়ে যায় চারদিক। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে চলে পিঠা উৎসব। সকালের শীতকে উপেক্ষা করে গায়ে চাদর মুড়ি দিয়ে চুলোর কাছে বসে পিঠা খাওয়ার মজায় আলাদা। এসময় প্রকৃতি যেন এক নতুন রূপে ফিরে। 

pitha

তাছাড়া ভাপা ও ম্যারা পিঠা ছাড়াও শীতকালে নকশি পিঠা, পাকান পিঠা, ফুল পিঠা, তেলের পিঠা, চিতই পিঠা, পিঠাপুলি, দুধ চিতই, পাটিসাপটা, নারিকেল পুলি পিঠা উল্লেখযোগ্য। 

আরও পড়ুন-
পথশিশুদের জন্য ২ টাকায় পিঠা

পৌষসংক্রান্তি, নবান্নসহ শীতকাল ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক উৎসব ও রীতি-নীতি পালনের ক্ষেত্রেও পিঠার ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন-ধর্মীয় উৎসব, বিয়ে, গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, নাইওর বা ফিরানি, অষ্টমঙ্গলা, মুখে ভাত, সুন্নত-এ খৎনা, সাতোশা, নববর্ষ, সাকরাইন, অতিথি আগমন ইত্যাদি।

pitha

আজকাল শহরের অভিজাত রেস্তোরাঁতেও গ্রামবাংলার পিঠাপুলি জায়গা করে নিয়েছে। তাছাড়া শহরের প্রতিটি গলিতে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে এখন পিঠা বিক্রি হয়। এসময় অনেক ভাসমান পিঠার দোকান তৈরি হয়। প্রায় সব দোকানেই ভাপা ও খোলা পিঠাই বেশি বিক্রি হয়। বানাতে সহজ হওয়ায় এটিকেই বেছে নিয়েছে বিক্রেতারা। 

পাশাপাশি শহরের পিঠাপ্রেমী নাগরিকরাও তা সাদরে গ্রহণ করেছে। সন্ধ্যা নেমে এলে শহরের প্রতিটি পিঠার দোকানেই বাড়তে থাকে। এভাবেই পিঠার স্বাদে নিয়ন আলোর শহরের শীতকে বরণ করে নেয় পিঠাপ্রেমীরা। 

লেখক: সিয়াম মাহমুদ, শিক্ষার্থী, গণমাধ্যম কর্মী

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর