বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

জলকাণ্ডেশ্বর মন্দির: অপূর্ব শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ প্রাচীন স্থাপনা

মোহাম্মাদ আলী
প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

জলকাণ্ডেশ্বর মন্দির: অপূর্ব শিল্পকর্মে পরিপূর্ণ প্রাচীন স্থাপনা

ভারতের চেন্নাই যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল মূলত চিকিৎসা সম্পর্কিত। যাওয়ার প্রাক্কালে নেট মাধ্যমে ঘাটাঘাটি করে কিছুটা ধারণা নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে আমাকে অবাক করে ভেলোর, চেন্নাই যা দেখালো তা কিছুটা বিস্ময়। 

ভেবেছিলাম যেহেতু অর্থনৈতিক একটি অঞ্চল, সেহেতু চাকচিক্য থাকবে। তবে ভেলোর মূলত নিম্ন মধ্যবিত্ত একটা শহর। এখানকার বেশিরভাগ মানুষই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। চেন্নাই এয়ারপোর্ট থেকে ভেলোর যেতে ডানে-বামে শহর বা অঞ্চলটির বাস্তবিক অবস্থা চোখে পড়বে। 


বিজ্ঞাপন


fort

ছবিতে থাকা মন্দিরটি সম্পর্কে আরও একটু ভালো করে বোঝার জন্য মূলত একটু পিছনে যেতে হবে। অর্থাৎ এই অঞ্চলটির কিছুটা আদি ইতিহাসে। ব্রিটিশ উপনিবেশন তথা ইউরোপীয়দের আগ্রাসন- এই অঞ্চলে একটু বেশিই ছিল, কারণ ইউরোপীয় অঞ্চলগুলো থেকে এখানে প্রবেশ করার যাত্রাপথ দূরত্ব তুলনামূলক কম। তাই এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি দুর্গ চোখে পড়বে। 

এসব দুর্গ, প্রাচীন স্থাপনার মধ্যে জলকাণ্ডেশ্বর মন্দির অন্যতম। এটি জলকান্দেশ্বর নামেও পরিচিত। এই মন্দিরটি ভেলোর শহর (সিএমসিকে যদি কেন্দ্র ধরি) থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরত্ব ভেলোর দুর্গের মাঝে অবস্থিত। আজ থেকে প্রায় সাতশ বছর অর্থাৎ ১৫০০ খ্রিঃ এর দিকে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করা হয় বলা জানতে পারলাম। 

fort


বিজ্ঞাপন


স্বর্ণ রঙ্গা মন্দিরচূড়াটি অনেক দূর থেকেই মন্দিরটির অস্তিত্ব জানিয়ে দেবে। মূলত হিন্দু ধর্মীয় দেবতা শিবকে উৎসর্গীকৃত এটি। 

জলকাণ্ডেশ্বর মন্দিরটি বিজয়নগর আর্কিটেকচারের সূক্ষ্ম উদাহরণ। অপূর্ব শিল্পকর্ম রয়েছে এখানে। মন্দিরটির গোপুরামের (মিনার) ওপর অসাধারণ খোদাই করা রয়েছে। প্রচুর খোদাই করা পাথরের স্তম্ভ, কাঠের বড় দরজা এবং দৃষ্টিনন্দন মনোলিথ এবং ভাস্কর্য রয়েছে। 

fort

এই বিজয়নগর ভাস্কর্যগুলি সৌন্দররাজপেরামাল মন্দির, থাডিকম্বু, কৃষ্ণপুরম ভেঙ্কটচলপাঠী মন্দির, শ্রীলিলিপুথুর দিব্যা দেশম এবং আলাগার কোয়েলের মতোই। টাওয়ারের গোপরামটি উচ্চতায় ১০০ ফুটের ওপরে। মন্দিরে একটি মন্ডপামও রয়েছে। হলের সাহায্যে ড্রাগন, ঘোড়া ও ইয়ালিসের উৎসাহিত পাথরের স্তম্ভগুলি (প্রাণীর মতো সিংহ) সমর্থন করে।

মন্দিরটি নিজেই একটি পানির ট্যাঙ্কের মাঝখানে নির্মিত হয়েছিল (তামিল ভাষায় আগাজি নামে পরিচিত)। মন্দিরের চারদিকে পানি রয়েছে মালার মতো। ট্যাঙ্কের পরিধি ৮০০০ ফুট। মন্দিরের অভ্যন্তরে বিবাহের হলটিতে (কল্যাণ মনপম) একটি ষাঁড় এবং একটি হাতির মতো দুটি মুখোমুখি ভাস্কর্য রয়েছে। দেবদেবতা (অভিষেকাম) স্নানের জন্য ব্যবহৃত জল মন্দিরের মধ্যে গঙ্গা গৌরি থার্ম নামে পরিচিত একটি প্রাচীন কূপ থেকে আঁকা।

fort

জনশ্রুতি অনুসারে, মন্দিরের গর্ভগৃহটি এখন যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে একটি বিশাল পিঁপড়া পাহাড়ের ব্যবহার হতো। এই পিপড়া-পাহাড়টি বদ্ধ জলের দ্বারা বেষ্টিত ছিল। বৃষ্টির জলের সংগ্রহের ফলস্বরূপ, কোনো সময় পিঁপড়ার পাহাড়ের চারপাশে একটি শিব লিঙ্গাম এই জলে স্থাপন করা হয়েছিল এবং পূজা করা হয়েছিল।

চিনা বোম্বি নায়ক, একজন বিজয়নগর সরদার, যিনি দুর্গটি নিয়ন্ত্রণ করছিলেন তিনি একদিন স্বপ্নে দেখেন, ভগবান শিব তাকে সেই জায়গায় মন্দির তৈরি করতে বলেছিলেন। নায়ক, এ্যানথিল ভেঙে এবং মন্দিরটি গড়ে তোলেন ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে। যেহেতু লিঙ্গাম জল দ্বারা বেষ্টিত ছিল (তামিল ভাষায় জালাম নামে পরিচিত) এই দেবতাকে জলকাণ্ডেশ্বর বলে ডাকা হতো ("জবাবে ভগবান শিব অনুবাদ করেছিলেন")। বিজয়নগরের রাজা সদাশিবদেব মহারায়ের রাজত্বকালে (১৫৪০-১৫৭২ খ্রিষ্টাব্দ) মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। 

fort

(তথ্যসূত্র: মন্দির সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আমি কথা বলেছি, উইকিপিডিয়া এবং ইউটিউব।)

লেখক: আইটি এক্সপার্ট, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ভ্রমণপ্রেমী

এনএম

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর