পৌষ আর মাঘ মিলে শীতকাল এ কথা কে না জানে। দিনপঞ্জিকার হিসাবে প্রকৃতিতে চলছে মাঘ মাস। তবে আবহাওয়া বলছে ভিন্ন কথা। শীতের গরম পোশাক এরইমধ্যে বাক্সবন্দী করে ফেলেছেন অনেকে। দিনে পথ চলতে রীতিমত ঘামছেন। আকাশ মেঘলা হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। কেমন যেন একটা গুমোট পরিবেশ। আবহাওয়ার এমন বিরুপ আচরণ সবচে বেশি প্রভাব ফেলছে শিশু ও বৃদ্ধদের শরীরে। অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। আক্রান্ত হচ্ছেন জ্বর, কাশি, সর্দির মতো ভাইরাল সংক্রমণে।
শীত বা গরমের অনুভূতি সবার একরকম হয় না কেন?
বিজ্ঞাপন
আবহাওয়া যেমনই হোক, খেয়াল করে দেখবেন কারো শীত লাগছে আবার কারো গরম। কেউ হয়ত ভর দুপুরেও গায়ে জ্যাকেট জড়িয়ে আছেন আবার কেউ শীতের রাতেও ফ্যান চালিয়ে ঘুমান। কর্মস্থলেও এসি বাড়ানো-কমানো নিয়ে দুই পক্ষের তর্ক চলতেই থাকে।
আসলে প্রত্যেক মানুষের শরীরের থার্মোস্ট্যাট সেটিংস কিন্তু এক একরকম। মানবদেহের গড় তাপমাত্রা হলো- 98.6°F (37°C)। শরীরের কার্যকলাপ এবং দিনের কোন সময় কোন কাজ করা হচ্ছে তার ওপরও শরীরের তাপমাত্রা নির্ভর করে। মানুষের রক্ত উষ্ণ হওয়ায় মানুষ নিজেই কিন্তু তার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কিন্তু কিছু মানুষ আছেন যারা অন্যদের তুলনায় ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি অনেক বেশি বুঝতে পারেন। এমনটা কেন হয়?
আরও পড়ুন- এই গরমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে করণীয়
বয়স্কদের তুলনায় কম বয়সীরা তাপমাত্রা বেশি ভালো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মেটাবলিজম কমতে থাকে। ফলে হজমে সময় লাগে বেশি। আর মেটাবলিজম কমে গেলে শরীরের তাপমাত্রাও কমে যায়। যে কারণে বয়স্কদের মধ্যে হাইপোথার্মিয়ার প্রবণতা থাকে বেশি। এই কারণেই বৃদ্ধদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। এবং খুব তাড়াতাড়ি তারা যেকোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
তাপমাত্রার ক্ষেত্রে লিঙ্গও ভূমিকা রাখে। পুরুষদের তুলনায় নারীদের শরীরের পেশির ভর কম থাকে। ত্বকে ছিদ্রও কম থাকে। ফলে পরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে শীত ভাব বেশি থাকে। তবে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রয়েছে ঘরের তাপমাত্রারও।
আরও পড়ুন- অতিরিক্ত গরমে ডায়রিয়া হলে কী করবেন
অনেকসময় আবার দেখা যায়, মেনোপজের সময়ে বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তনের কারণে নারীদের অতিরিক্ত গরম লাগে। এছাড়াও মেনোপজের পরবর্তী সময়ে হটফ্লাশের সমস্যা হয় অনেক নারীর। হঠাৎ হঠাৎ গরম লাগা, কানের চারপাশে লাল হয়ে ওঠার মতো সমস্যা দেখা দেয়। রাতের দিকে এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি হয়।
মূলত এসব কারণেই সবার শরীরের তাপমাত্রা সমান নয়। সিডনি ইউনিভার্সিটির ফিজিওলজির গবেষক ওলি জে’র মতে, যাদের ওজন বেশি, শরীররে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি তাদের শরীরে তাপমাত্রাও যেমন বেশি হয় তেমনি শরীর ঠান্ডা হতেও বেশি সময় লাগে।
আরও পড়ুন- গরমে কোন রোগব্যাধি বেশি হয়?
তবে কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে দেখা যায় যাদের চর্বি বেশি তাদের মধ্যে ঠান্ডার অনুভূতিও বেশি। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন তাদের মধ্যে এই তারতম্য দেখা যায়।
হঠাৎ গরম আবহাওয়ায় সুস্থ থাকবেন যেভাবে
পর্যাপ্ত পানি পান
এমন আবহাওয়ায় শরীরের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি অবশ্যই পান করতে হবে। পানির অভাবে শরীর ডিহাইড্রেট হলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। তবে হঠাৎ গরম লাগছে বলে ফ্রিজে ঠান্ডা পানি খাওয়া চলবে না। এতে ভাইরাল সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আরামদায়ক পোশাক পরিধান
আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই পোশাক পরতে হবে। বেশি হালকা পোশাক পরলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। আবার গরম পোশাক পরলে বুকে ঘাম জমে যেতে পারে। শিশু যেন স্বস্তিতে থাকে এমন পোশাক পরান। বৃদ্ধদের সকালে আর রাতে হালকা গরম পোশাক পরান।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস
এই আবহাওয়ায় ভালো থাকতে খাদ্যাভ্যাসেও নজর দিতে হবে। খাবার পাতে রাখুন শাক-সবজি ও মৌসুমি ফল। এসব খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ফলে জ্বর, কাশির মতো সমস্যার সঙ্গে সহজে লড়াই করা যায়।
এনএম